শিরোনাম
শুক্রবার, ৫ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

ক্ষতিপূরণ না দিলে গ্রিন লাইনের টিকিট বিক্রি বন্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে গ্রিন লাইন বাসের চাপায় পা হারানো রাসেল সরকারকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে ১০ এপ্র্রিল পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে হাই কোর্ট। এ সময়ের মধ্যে টাকা পরিশোধ করতে না পারলে টিকিট বিক্রি বন্ধ রাখতে বলেছে আদালত। গতকাল বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়। আদেশের সময় আদালত বলে, ওই দিনের মধ্যে টাকা দিতে না পারলে গ্রিন লাইনের সব বাস জব্দ করার আদেশ দেওয়া হবে।

এই শুনানিতে উপস্থিত থাকতে স্ত্রী-সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে ক্র্যাচে ভর দিয়ে আদালতে আসেন রাসেল সরকার, যিনি আগে প্রাইভেট কার চালাতেন। গত বছর ২৮ এপ্রিল যাত্রাবাড়ীর মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে গ্রিন লাইন পরিবহনের একটি বাস তাকে চাপা দেয়। আদালতে রিটকারী পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী খন্দকার শামসুল হক রেজা। গ্রিন লাইন পরিবহনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী অজি উল্লাহ। আর বিআরটিসির পক্ষে ছিলেন এস এম মনিরুজ্জামান।

এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পা হারানো রাসেলকে বুধবারের মধ্যে ৫০ লাখ টাকা দিতে নির্দেশ দিয়েছিল হাই কোর্ট। টাকা দেওয়ার পর বৃহস্পতিবার তা আদালতকে জানাতে বলা হয়েছিল। কিন্তু সেই টাকা না দেওয়ায় এবং কোনো ধরনের যোগাযোগ না করায় গতকাল সকালে রিটকারী পক্ষের আইনজীবী রেজা গ্রিনলাইনের মালিককে আদালতে তলবের মৌখিক আবেদন জানান।

গ্রিনলাইনের আইনজীবী ওজি উল্লাহ তখন আদালতকে বলেন, আদেশের বিষয়টি তিনি পরিবহন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। কিন্তু গ্রিনলাইনের প্রোপাইটর চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে আছেন। তবে গ্রিন লাইন পরিবহনের প্রোপাইটর হাজী মো. আলাউদ্দিন কবে কোন দেশে গেছেন, কবে ফিরবেন- এসব প্রশ্নের উত্তর আইনজীবী দিতে না পারায় ওই কোম্পানির ব্যবস্থাপককে বেলা ২টায় হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট। ওই আদেশের পর বেলা ২টায় আদালতে হাজির হন গ্রিন লাইন পরিবহনের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) আবদুস সাত্তার।

এ পর্যায়ের শুনানিতে রিটের বিবাদী হিসেবে বিআরটিসির আইনজীবী এস এম মনিরুজ্জামান প্রথমেই তাদের ব্যাখ্যা দাখিল করেন। পরে গ্রিন লাইন পরিবহনের আইনজীবী অজি উল্লাহর কাছে আদালত জানতে চায়, গ্রিন লাইন পরিবহনের ব্যবস্থাপক হাজির হয়েছেন কিনা। জবাবে অজি উল্লাহ ইতিবাচক উত্তর দিলে আদালত ব্যবস্থাপকের নাম জানতে চায়। কাঠগড়ার সামনে দাঁড়ানো গ্রিনলাইনের জিএম তখন বলেন, তার নাম আবদুস সাত্তার।

বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের তখন জানতে চান গ্রিনলাইনের মালিক কোথায়। জবাবে সাত্তার বলেন, হাজী আলাউদ্দিন অসুস্থ। চিকিৎসার জন্য তিনি গত ৩১ মার্চ ভারতে গেছেন, দেশে ফিরবেন ৯ এপ্রিল। ম্যানেজার সাত্তারের কাছে আদালত জানতে চায়, গ্রিনলাইনের মালিক ৩১ মার্চ কখন দেশ ছেড়েছেন। আপিল বিভাগ ও হাই কোর্টের আদেশ সম্পর্কে তিনি অবগত কি-না। টাকা পরিশোধের বিষয়ে কোনো নির্দেশনা হাজী আলাউদ্দিন দিয়েছেন কি-না।

জবাবে সাত্তার বলেন, হাজী আলাউদ্দিন ভারতের উদ্দেশে রওনা হন ৩১ মার্চ সকালে। পরে তাকে আদালতের আদেশের বিষয়টি টেলিফোনে জানানো হয়। গ্রিনলাইনের ব্যাংক লেনদেন কীভাবে হয় তা আদালত জানতে চাইলে জিএম বলেন, পরিবহন মালিক আলাউদ্দিন নিজেই সেগুলো দেখেন। চেকে তিনি নিজেই সই করেন। এ পর্যায়ে গ্রিনলাইনের আইনজীবীকে উদ্দেশ করে বিচারক বলেন, ‘আপনার মক্কেল যে দেশে নেই, এ বিষয়ে আদালতে কোনো আবেদন দাখিল করেননি। আপনার উচিত ছিল এ ধরনের আবেদন দাখিল করা। আপনি কোনো পদক্ষেপই নেননি। আদালতের আদেশ নিয়ে এ ধরনের খামখেয়ালি টলারেট করব না।’

আদালত বলে, উনি (গ্রিনলাইন পরিবহনের মালিক) ৯ তারিখ দেশে আসবেন, ১০ তারিখ আদালতের আদেশ বাস্তবায়নের বিষয়ে হলফনামা দেবেন। এরপর আদালত গ্রিন লাইন পরিবহনের ব্যবস্থাপককে উদ্দেশ করে বলে, ১০ তারিখে আদেশ বাস্তবায়নের অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করবেন। যদি আদেশ বাস্তবায়ন না করেন তাহলে ১১ তারিখের কোনো টিকিট বিক্রি করবেন না। আপনারা তো অগ্রিম টিকিট বিক্রি করে থাকেন। জনগণকে ভোগান্তির মধ্যে ফেলবেন না।

সর্বশেষ খবর