বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

‘গরম বাড়ায় ডায়রিয়া বেড়েছে’

নিজস্ব প্রতিবেদক

রমজানের আগ পর্যন্ত রাজধানী ঢাকা ও আশপাশসহ সারা দেশে ডায়রিয়া পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। হঠাৎ করে এপ্রিলে গরমের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় তৃষ্ণার্ত মানুষের পানি খাওয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আর ঢাকা ওয়াসা কর্তৃক সরবরাহকৃত অনেক এলাকার পানি পানের জন্য নিরাপদও নয়। এ অবস্থায় বিশুদ্ধ পানি পান না করায় এবং রাস্তায় বিক্রি হওয়া আইসক্রিম, শরবত পান করেও অনেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। এ ছাড়া ভ্যাপসা গরমে খাবার দ্রুত নষ্ট হয়ে যাওয়ায় মানুষের পেট খারাপ হচ্ছে বলে জানান রাজধানীর মহাখালীর ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়ারিয়াল ডিজিজ রিসার্চ, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি)-এর চিকিৎসকরা।

এপ্রিলজুড়েই আইসিডিডিআরবিতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিতে ভর্তি হচ্ছেন। গড়ে প্রতিদিন হাসপাতালে সাড়ে আট শ রোগী ভর্তি হচ্ছেন। এখানে আসা রোগীর চাপে হাসপাতালের সব ওয়ার্ডই এখন পূর্ণ। এজন্য হাসপাতালের বাইরেও আলাদা তাঁবু টাঙানো হয়েছে। শুধু ঢাকা নয়, ঢাকার আশপাশ থেকেও রোগীরা এ হাসপাতালে এসে ভর্তি হচ্ছেন। আর রাজধানীর অন্য সরকারি হাসপাতালে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীরা স্থান না পেয়ে আইসিডিডিআরবিতে ভর্তি হচ্ছেন।

আইসিডিডিআরবি সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর অনেক এলাকায় ওয়াসার পানি সরবরাহের লাইন পুরনো হয়ে গেছে। আবার অনেকে এসব লাইন থেকে অবৈধভাবে পানির লাইনের সংযোগ নিচ্ছেন। আর পুরনো লাইনের ফুটো দিয়ে মাটির নিচে সুয়ারেজের লাইনের ময়লা প্রবেশ করায় সেই পানি আর পানযোগ্য থাকে না। দেখা যায় যে এই দূষিত পানি অনেকে না ফুটিয়ে পান করেন আবার অনেকে ফুটিয়ে পান করলেও পানি থেকে জীবাণু সহজে যায় না। এ পানি পান করলে ব্যবহারকারীর ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া ঢাকার আবাসিক এলাকাগুলোর মধ্যে যেসব এলাকায় রিজার্ভ ট্যাংক থেকে পানি ব্যবহার করা হয় সেখানেও জীবাণু থাকার ঝুঁকি আছে। এসব ট্যাংক নিয়মিত পরিষ্কার না করার ফলেও অনেকে জীবাণুসহ পানি পান করায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়।

বর্তমানে আইসিডিডিআরবি কর্তৃপক্ষ এ হাসপাতালে আসা রোগীদের প্রথমে আইভি স্যালাইন দিয়ে আউটডোরে চার ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখে। পরিস্থিতি ভালো হলে তাদের সেদিনই ছেড়ে দেওয়া হয়। আর অবস্থা বেশি খারাপ হলে বিশেষ করে ডায়রিয়ার সঙ্গে যদি রোগীর জ্বর, কিডনি ও ডায়াবেটিস থাকে তাহলে তাকে হাসপাতালের লঙ্গার স্টে ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। বেশি সংকটাপন্ন রোগীদের পানিশূন্যতা থাকে এবং প্রস্রাব হয় না, জিব শুকিয়ে যায়, রগে টান লাগে। আর শিশুদের হাসপাতালের শর্ট স্টে ওয়ার্ডে রাখা হচ্ছে। প্রতি রোগীর সঙ্গে হাসপাতালে একজন করে স্বজন থাকছেন।

বাংলাদেশ প্রতিদিনকে গতকাল আইসিডিডিআরবির চিকিৎসক (চিফ ফিজিশিয়ান ও হেড হসপিটাল) ডা. আজহারুল ইসলাম খান বলেন, এ মাসে গরমের জন্য ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মূলত ঢাকায় ওয়াসার সরবরাহকৃত দূষিত পানি পান করে এবং বাইরের বিভিন্ন ধরনের খাবার যেমন আচার ও জুস খেয়ে মানুষ ডায়রিয়রায় আক্রান্ত হচ্ছে। তিনি জানান, এপ্রিলজুড়ে ডায়রিয়া পরিস্থিতি অবনতিশীল থাকতে পারে। রোজার আগ পর্যন্ত এ অবস্থা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর