রবিবার, ৫ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

রাকসু নির্বাচন নিয়ে জটিলতা

সংলাপ যেভাবে চলছে-তাতে এ বছরে নির্বাচন সম্ভব নয় বলে মনে করছেন ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীরা

মর্তুজা নুর, রাবি

রাকসু নির্বাচন নিয়ে জটিলতা

দীর্ঘ ২৯ বছর পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনকে সামনে রেখে ছাত্র সংগঠনগুলো সরব হলেও দেখা দিয়েছে এক ধরনের হতাশা। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চলতি বছরের শুরুতে রাকসু নির্বাচনের জন্য কমিটি গঠন করে দিয়েছে। তারপরও তৈরি হয়েছে জটিলতা। জানা গেছে, রাকসু সংলাপ কমিটি ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর সঙ্গে এরই মধ্যে সংলাপ শুরু করেছে। তবে সংলাপ যে ধারাবাহিকতায় চলছে-তাতে করে এ বছরে রাকসু নির্বাচন সম্ভব নয় বলে মনে করছেন ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা।

রাকসু সংলাপ কমিটি সূত্রে জানা গেছে, গত ২০ জানুয়ারি কমিটি গঠনের পর এ পর্যন্ত ১২টি রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন এবং ৯টি অরাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এখন আরও চারটি অরাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনা চলবে। এরপর হল প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে রাকসু নিয়ে আলোচনায় বসবে সংলাপ কমিটি।

গত ৭ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সংলাপ করে রাকসু কমিটি। তারই ধারাবাহিকতায় একই মাসের ১২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী, ১৭ ফেব্রুয়ারি বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, ২০ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম লীগ, ২৫ ফেব্রুয়ারি ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে সংলাপ করে। অন্যদিকে রাকসু সংলাপ কমিটি ৪ মার্চ ছাত্র মুক্তিজোট ও জাতীয় ছাত্রসমাজ, ৫ মার্চ ছাত্র ইউনিয়ন, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ১২ মার্চ, ছাত্রলীগ ২৪ মার্চ সংলাপ কমিটির সঙ্গে আলোচনায় বসে। এ ছাড়া অরাজনৈতক সংগঠন স্টুডেন্ট রাইটস অ্যাসোসিয়েশন ও ক্যারিয়ার ক্লাব ৪ এপ্রিল, হায়ার স্ট্যাডি ক্লাব, ওয়ার্ল্ড লিংকআপ ১৭ এপ্রিল, পাঠক ফোরাম ও আদিবাসী ছাত্র পরিষদ ২৫ এপ্রিল, এ ছাড়াও স্বপ্ন মনোবিজ্ঞান বিভাগ ও প্রথম আলো বন্ধুসভার সঙ্গে ২৯ এপ্রিল আলোচনায় বসেছে। রাবি রিপোর্টার্স ইউনিটি এবং উত্তরণ লেখক ও পাঠকের সূতিকাগারের সঙ্গে ছুটির আগে আলোচনায় বসার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছে সংলাপ কমিটি। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৮ মে থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত গ্রীষ্মকালীন অবকাশ, শবেকদর ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ৪৭ দিন ছুটিতে থাকবে বিশ্ববিদ্যালয়। ছুটির পরেই আলোচনায় বসার কথা রয়েছে হল প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে। এ ছাড়া রয়েছে ভোটার হালনাগাদ, তফসিল ঘোষণা, রাকসুর গঠনতন্ত্র সংশোধন ইত্যাদি করার কাজ। এভাবে ধারাবাহিক সংলাপকে ‘কালক্ষেপণ’ হিসেবে দেখছেন ছাত্র সংগঠনের নেতারা।

তাদের দাবি, দ্রুত সময়ে সংলাপ শেষ করে রাকসুর তফসিল ঘোষণা করা হোক। এ বিষয়ে রাবি শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান বলেন, আমরা এরই মধ্যে বেশকিছু দাবি জানিয়েছি। সব সংগঠনের সঙ্গে আলোচনার বিষয়টি খুবই ভালো উদ্যোগ। আলোচনা করে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারবে। কিন্তু আলোচনার মাত্রাটা যদি ছয় মাস বা এক বছরে লাগিয়ে দেয় তাহলে এই আলোচনার ফলাফল আমাদের কাছে বোধগম্য হবে না। আলোচনা একটা সংগঠনের সঙ্গে করার পরের দিন আরেকটা সংগঠনের সঙ্গে করতে পারে। কিন্তু একটা সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা শেষে আট দিন বা দশ দিন পরে অন্য একটি সংগঠনের সঙ্গে বসছে সংলাপ কমিটি। এতে প্রশাসনের কালক্ষেপণের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠছে। রাবি সংসদ ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি শাকিলা খাতুন বলেন, রাকসু নির্বাচন নিয়ে প্রশাসনের কোনো আন্তরিকতা নেই। ইচ্ছা করেই দেরি করছে। ফেব্রুয়ারিতে আলোচনা শুরু হয়েছে। এপ্রিল মাস শেষ তবু কোনো ভূমিকা নেই। সব সংগঠনের সঙ্গে আলোচনার নাম করে কালক্ষেপণ করছে প্রশাসন। আলোচনা করে এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি প্রশাসন। নির্বাচন দেওয়ার কোনো উদ্যোগও দেখছি না। নির্বাচন না দেওয়ার পাঁয়তারা করছে। তবে আমরা আশাবাদী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দ্রুত নির্বাচন দেবে। সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে সংলাপ কমিটির সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, দীর্ঘ ২৮ বছর পর রাকসু নির্বাচন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক প্রায় ২৩টি সংগঠন ও হল প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে রাকসু নিয়ে আলোচনা করার প্রয়োজন রয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে ছাত্র সংগঠনগুলো যে দাবিগুলো উপস্থাপন করেছে সেসব পর্যালোচনা করে রাকসু গঠনতন্ত্রের সঙ্গে মিল রেখে তা বিবেচনা করা হবে।

সর্বশেষ খবর