রবিবার, ৫ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

আরডিএ মার্কেট নয় যেন বিষফোঁড়া

পার্কিং নেই, ঘিঞ্জি গলিপথ, আলোর স্বল্পতা

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

রাজশাহী নগরীর প্রাণকেন্দ্র সাহেববাজার এলাকায় ১৯৮৬-৮৭ সালের দিকে আরডিএ নামে একটি টিনশেড মার্কেট তৈরি করা হয়। পরে সেটি বহুতল মার্কেট হয়েছে। তবে মার্কেটটি গড়ে তুলতে মানা হয়নি কোনো নিয়ম-কানুন। মার্কেটে নেই পার্কিং ব্যবস্থা, ঘিঞ্জি গলিপথ, আলোর স্বল্পতা ও অগ্নিঝুঁকি। এসব নিয়েই এখানে কেনাকাটা করতে আসেন মানুষ। সম্প্রতি ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স ওই মার্কেটের দোতলায় অগ্নিঝুঁকির সতর্কতামূলক ব্যানার টানিয়েছে। এখানে প্রায় আড়াই হাজার দোকান রয়েছে। সারা দিনে কয়েক হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। এমন গুরুত্বপূর্ণ মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে বিল্ডিং কোড অমান্য করে। এ নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি সুপারিশও দেয়, কিন্তু তা কার্যকর হয়নি। ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স বলছে, এই মার্কেটে অগ্নিনিরাপত্তা নেই। সব মিলিয়ে রাজশাহীর মানুষের কাছে আরডিএ মার্কেটটি বিষফোড়ায় পরিণত হয়েছে।

এ ছাড়া মার্কেট ভবন দুটির মাটির ভার বহনের ক্ষমতার সঙ্গে নকশা সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না, তা যাচাইয়ের জন্য আরডিএর তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবদুর রহিম তদন্ত কমিটি গঠন করেন। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী সিরাজুম মুনীরের নেতৃত্বাধীন ওই কমিটি ২০১১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে নানা অসঙ্গতির কথা উল্লেখ করা হয়। আর পেছনের ভবনের নকশায় মাটি পরীক্ষার কোনো সূত্র তদন্ত কমিটি খুঁজে পায়নি। এসব অসঙ্গতির কথা তুলে ধরে তদন্ত প্রতিবেদনে এই ভবনের কাঠামো পুনঃপরীক্ষার প্রয়োজন বলে মন্তব্য করা হয়। সেই সঙ্গে বলা হয়েছে, জনগুরুত্বপূর্ণ জনসমাবেশস্থল হিসেবে এই ভবন বিল্ডিং কোড অনুসারে নির্মিত হওয়া আবশ্যক। কিন্তু আজও সেই সুপারিশ বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ নেই।

আরডিএর চেয়ারম্যান বজলুর রহমান বলেন, ‘আরডিএ মার্কেট নিয়ে কিছু বলার নেই। অসহায়ের মতো তাকিয়ে থাকা ছাড়া কিছু করারও নেই। আমি স্থাপত্যবিদকে দিয়ে ১৫ তলাবিশিষ্ট পরিকল্পিত ভবন তৈরির জন্য নকশা তৈরি করেছিলাম। কিন্তু আরডিএ মার্কেটের আড়াই হাজার দোকানের ১০ হাজার কর্মচারী আছে। তাদের আগে পুনর্বাসন করতে হবে। সেটাই করা যাচ্ছে না।’

রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আরডিএ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৬-৮৭ সালের দিকে এখানে টিনশেড মার্কেট তৈরি করা হয়েছিল। ২০০৪ সালে আরডিএর পুনর্বাসিত ব্যবসায়ী সমিতিকে দিয়ে পর্যায়ক্রমে সামনের অংশ তিনতলা ও পেছনের অংশ চারতলা করা হয়। আগের টিনশেড মার্কেটের মধ্য দিয়ে গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য জায়গা রাখা ছিল। এখন আড়াই হাজার দোকানের জন্য সামনে একটু অ্যাপ্রোচ সড়ক ছাড়া গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা নেই। এই বিপণিবিতানের সামনে সারাদিন যানজট লেগে থাকে। আরডিএ সূত্রে জানা গেছে, বিল্ডিং কোড অনুযায়ী, এ ধরনের বাণিজ্যিক ভবনের প্রায় ২০ শতাংশ পার্কিং ব্যবস্থা থাকার কথা। সেই হিসাবে এই নতুন ভবনের বেসমেন্টের পুরোটাই পার্কিংয়ের জন্য রাখার কথা। কিন্তু ভবনের নকশায় বেসমেন্টের মাত্র ৪০ শতাংশ পার্কিংয়ের জন্য রাখা হয়েছে। জানা গেছে, ভবনের নকশা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা অনুমোদন করেননি। অভিযোগ আছে, আরডিএর তৎকালীন চেয়ারম্যান তপন চন্দ্র মজুমদার নিজেই অনুমোদন করেন। মার্কেট পরিচালনা কমিটির উপদেষ্টা সেকেন্দার আলী অপরিকল্পিতভাবে মার্কেটটি গড়ে তোলার কথা স্বীকার করেন।

 তিনি বলেন, মার্কেটের ভিতরে অক্সিজেন কম। অনেক দিন ধরে যারা এখানে ব্যবসা করে আসছেন, তাদের অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তারা এ নিয়ে ভাবছেন। কয়েকবার আরডিএ এবং ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস কিছু অগ্নিনির্বাপক সরঞ্জাম দিয়েছিল, সেগুলোরও বোধ হয় মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।

রাজশাহী ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সিনিয়র স্টেশন অফিসার শাহীদুল ইসলাম বলেন, আরডিএ মার্কেটের অগ্নিনিরাপত্তা নেই। এর আন্ডারগ্রাউন্ডে জলাধার নেই। আশপাশে পুকুরও নেই। ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢোকানোর মতো প্রশস্ত রাস্তা নেই। সাধারণত এত বড় বাণিজ্যিক ভবনগুলোর পাশে অন্তত ৩০ ফুট চওড়া রাস্তা রাখা দরকার। এই মার্কেটের পাশে ১৩-১৪ ফুট রাস্তা রয়েছে। জরুরি অবস্থায় মার্কেট থেকে বের হওয়ার জন্য বিকল্প সিঁড়ি থাকতে হয়, তাও এখানে নেই। ভিতরে ৩২টি ফায়ার এক্সটিংগুইশার আছে। অন্যান্য ব্যবস্থা না করে শুধু এগুলো দিয়ে জরুরি অবস্থা মোকাবিলা করা যাবে না।

আরডিএ চেয়ারম্যান বজলুর রহমান বলেন, নগরীর ঢাকা বাস টার্মিনাল এলাকায় আরডিএর ১৩ বিঘা জমি আছে। টার্মিনালটা সরিয়ে সেখানে বহুতল ভবন করে ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন করা যায়। কিন্তু তা করতে অন্তত দুই বছর সময় লাগবে। আর ব্যবসায়ীরা তাতে রাজি হবেন কি না, সেটাই এখন ভাবার বিষয়।

সর্বশেষ খবর