শিরোনাম
রবিবার, ২৬ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

লোকসভায় মুসলিম সদস্য ২৭

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের লোকসভা নির্বাচনে এবার মুসলমান এমপি হয়েছেন ২৭ জন। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই সংখ্যা ছিল ২৩। এর মধ্যে বেশিরভাগ এমপিই ছিলেন কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেসের। এবার লোকসভায় সবচেয়ে বেশি মুসলিম এমপি তৃণমূলের-পাঁচজন। লোকসভার মোট আসন ৫৪৩ তার মধ্যে ৫৪২ আসনে ভোট হয়। বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট পেয়েছে ৩৫৩টি আসন। এর মধ্যে বিজেপির একার আসন ৩০২। কিন্তু সংসদে তাদের কোনো মুসলিম প্রতিনিধি নেই। দেশজুড়ে ছয়জন মুসলিম প্রার্থী দিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু একজনও জয়ের মুখ দেখতে পাননি। ২০১৪ সালেও এই দলটির কোনো মুসলিম এমপি ছিল না। উত্তরপ্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ- যেখানে মুসলিম জনসংখ্যা খুব বেশি-ওই দুই রাজ্য থেকেই মুসলিম সম্প্রদায়ের ছয়জন করে প্রতিনিধি এবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। ২০১৪ সালে উত্তরপ্রদেশ থেকে একজন মুসলিম প্রার্থীও জিততে পারেননি। উত্তরপ্রদেশে জয়ী ছয় প্রার্থীর মধ্যে বহুজন সমাজ পার্টি (বসপা) ও সমাজবাদী পার্টি (সপা) উভয়েরই তিনজন করে জয় পেয়েছেন। বসপার তিন প্রার্থী হলেন গাজিপুর আসনে আফজল আনসারি, সাহরানপুর আসনে ফজলুর রহমান, আমরোহা আসনে দানিশ আলি এবং সপার জয়ী তিন প্রার্থী হলেন-রামপুরা আসনে আজম খান, সম্বল থেকে শফিক রহমান বার্ক, মোরাদাবাদ আসনে এসটি হাসান। কংগ্রেস ছয়জন মুসলিম প্রার্থী দিলেও একজনও জিততে পারেননি।

পশ্চিমবঙ্গ থেকে জয়ী ছয়জনের মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে জয় পেয়েছেন পাঁচজন মুসলিম প্রার্থী, কংগ্রেসের একজন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে এ রাজ্য থেকে আটজন মুসলিম প্রার্থী জয় পেয়েছিলেন। এবারের জয়ী প্রার্থীদের মধ্যে অন্যতম বসিরহাট আসনে তৃণমূলের প্রার্থী অভিনেত্রী নুসরাত জাহান, প্রথম বার দাঁড়িয়েই বিপুল ভোটে জিতলেন। এ ছাড়াও জঙ্গিপুর আসনে খলিলুর রহমান, মুর্শিদাবাদ আসনে আবু তাহের খান, উলুবেড়িয়া থেকে সাজদা আহমেদ, আরামবাগ কেন্দ্রে আফরিন আলি (অপরূপা পোদ্দার) জয় পেয়েছেন। মালদা দক্ষিণ আসনে কংগ্রেসের জয়ী প্রার্থী আবু হাসেম খান চৌধুরী। মুসলিম অধ্যুষিত জম্মু-কাশ্মীর থেকে এবার মাত্র তিনজন মুসলিম প্রার্থী লোকসভায় যাচ্ছেন। প্রত্যেকেই ন্যাশনাল কনফারেন্স-এর প্রার্থী। জয়ী প্রার্থীর মধ্যে অন্যতম হলেন শ্রীনগর আসনে রাজ্যটির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লা। বিহার থেকে এবার সংসদে যাচ্ছেন মাত্র দুজন মুসলিম প্রার্থী। ২০১৪ সালের নির্বাচনে এ রাজ্য থেকে চারজন মুসলিম প্রার্থী এমপি হয়েছিলেন। কেরালায় তিনজন মুসলিম এমপি হয়েছেন। আসামে মুসলিম এমপি হয়েছেন দুজন। ধুবড়ি থেকে বর্তমান লোকসভা সদস্য ও এআইইউডিএফ প্রার্থী বদরুদ্দিন আজমল এবং বরপেটা জয়ী হয়েছেন কংগ্রেসের আবদুল খালেক। অথচ এই রাজ্যে মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্ত।

লাক্ষাদ্বীপ থেকে ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি (এনসিপি)-এর টিকিটে লোকসভায় জয় পেয়েছেন মহম্মদ ফয়জল।

পাঞ্জাবের ফরিদাকোট আসনে জিতেছেন কংগ্রেসের মহম্মদ সাদিক।

তামিলনাড়ুর রামানাথনপুরম আসনে নির্বাচিত হয়েছেন ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লীগের কে. নাভাস কানি।

হায়দরাবাদ লোকসভা আসনে জয়ী প্রার্থী অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এআইএমআইএম)-এর প্রধান আসাউদ্দিন ওয়েইসি।

মহারাষ্ট্র থেকে ঔরঙ্গাবাদ আসনে জয়ী একমাত্র মুসলিম প্রার্থী এআইএমআইএম-প্রার্থী ইমতিয়াজ জলিল।

ভারতের লোকসভায় সবচেয়ে বেশি মুসলিম এমপি ছিল ১৯৮০ সালে। সেবার লোকসভায় মুসলিম এমপি ছিলেন ৪৯ জন। সবচেয়ে কম মুসলিম এমপি ছিল ১৯৫২ সালে, সেবার লোকসভায় তাদের প্রতিনিধি ছিল ১১ জন।

১৯৮৪ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী কংগ্রেস নেত্রী ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুর পর পুত্র রাজীব গান্ধী ক্ষমতায় এলে লোকসভায় মুসলিম এমপির সংখ্যা ছিল ৪২ জন।

২০০৪ সালে ১৪তম লোকসভা এবং ২০০৯ সালে ১৫তম লোকসভায় কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের আমলে লোকসভায় জয়ী মুসলিম সংসদ সদস্যের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৩০ ও ৩৪ জন।

বর্তমানে ভারতের মোট জনসংখ্যার ১০.৫ শতাংশ মুসলিম। কিন্তু নতুন লোকসভায় তাদের প্রতিনিধিত্বের শতকরা হার মাত্র ৪.৪২ শতাংশ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর