রবিবার, ২ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা
তৃণমূল স্বাস্থ্যসেবা : মাদারীপুর সদর হাসপাতাল

ক্লিনিক আর সার্টিফিকেট বাণিজ্যেই চিকিৎসকদের ব্যস্ততা

বেলাল রিজভী, মাদারীপুর

মাদারীপুর সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ও চিকিৎসা-সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বে অবহেলা আর অনিয়মের কারণে পদে পদে ভোগান্তি ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন রোগীরা। হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন সহস্রাধিক রোগী ডাক্তার দেখাতে আসেন। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা সহজ-সরল গরিব মানুষগুলো পড়েন নানা ভোগান্তিতে। একই অবস্থা হাসপাতালের ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীদের। হাসপাতালের পরিবেশ নোংরা, খাবারের মানও ভালো নয়। রোগীর তুলনায় বেড কম হওয়ায় অনেক সময় ফ্লোরে থাকতে হয় রোগীদের। চিকিৎসক ও চিকিৎসাসেবা-সংশ্লিষ্ট অনেকেই কর্মস্থলে উপস্থিত থাকেন না। রোগী দেখেন বিভিন্ন ক্লিনিকে। গাইনি বিভাগে চিকিৎসাসেবা নেই বললেই চলে। মাদারীপুরের প্রায় ১৭ লাখ মানুষের প্রধান চিকিৎসা কেন্দ্রটিতে বাসা বেঁধেছে নানা অনিয়ম। এ হাসপাতালে গত বছর গাইনি বিভাগে সন্তান প্রসব করেছেন মাত্র ১ হাজার ১৯৪ জন। অথচ এর চেয়ে কয়েক গুণ বেশি সন্তান প্রসব করেছেন মাদারীপুরের বিভিন্ন ক্লিনিকে। অভিযোগ রয়েছে, এই হাসপাতালে গাইনি চিকিৎসা নিতে এলে প্রসূতি মায়েদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় নির্দিষ্ট বিভিন্ন ক্লিনিকে। সেখানে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরাই মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে সিজার করান। এতে অসহায় গরিব রোগীরা চিকিৎসা নিতে এসে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। শিউলি বেগম নামে এক নারী জানান, ‘আমি অসুস্থ হয়ে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে এলে এখানকার ডাক্তার পাশের এক ক্লিনিকে ভর্তি হতে বলেন কিন্তু আমার কাছে তখন টাকা ছিল না। পরে গরু বিক্রি করে ক্লিনিকের বিল পরিশোধ করেছি।’ রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতেও নানা ভোগান্তিতে পড়তে হয়। হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রপাতি থাকলেও বিভিন্ন অজুহাতে পাঠানো হয় নির্দিষ্ট ক্লিনিকগুলোয়। এ ছাড়া সংঘর্ষ বা হামলার ঘটনায় মেডিকেল সনদ পেতেও ঘুষ দিতে হয়। সম্প্রতি হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. শশাঙ্ক ঘোষসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মেডিকেল সনদ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। সিভিল সার্জন, জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দফতরে এ ব্যাপারে ভুক্তভোগীরা লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন। মাদারীপুর সদর উপজেলার মহিষের চর গ্রামের নাসির নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা আমাকে মারধর করে। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। আমার মামলার জন্য মেডিকেল সনদ দরকার। আমি মেডিকেল সনদ চাইলে হাসপাতালের আরএমও আমার কাছে ৩০ হাজার টাকা ঘুষ চেয়েছেন।’মাদারীপুর সদর হাসপাতালের বিভিন্ন অনিয়ম প্রসঙ্গে মাদারীপুরের সদ্য সাবেক সিভিল সার্জন বর্তমানে স্বাস্থ্য বিভাগের উপপরিচালক মো. ফরিদ হোসেন মিয়া বলেন, ‘বেশির ভাগ অভিযোগই সঠিক নয়।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর