সোমবার, ৩ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

প্রস্তুত শোলাকিয়া ময়দান

সাইফউদ্দীন আহমেদ লেনিন, কিশোরগঞ্জ

ঈদ জামাতের জন্য প্রস্তুত কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ময়দান। মাঠের প্রস্তুতির পাশাপাশি নেওয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ঈদ জামাত নির্বিঘ্ন করতে নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকবে শোলাকিয়া ও এর আশপাশ এলাকা। শোলাকিয়ায় এবার অনুষ্ঠিত হবে ১৯২তম ঈদুল ফিতরের বড় জামাত। সকাল ১০টায় জামাত শুরু হবে। জামাতে ইমামতি করবেন বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা ফরীদউদ্দীন মাসঊদ। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ঈদ জামাত অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও র‌্যাবের পক্ষ থেকে শোলাকিয়া ঈদগাহে পৃথক সংবাদ সম্মেলনও করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলন থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে মুসল্লিদের নিরাপত্তার স্বার্থে শুধুমাত্র জায়নামাজ নিয়ে ঈদগাহে আসার অনুরোধ করা হয়েছে। কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ জানান, জঙ্গি হামলার আশঙ্কা না থাকলেও শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সম্প্রতি নিউজিল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের ভিতরে বিক্ষিপ্ত কিছু বোমা হামলার ঘটনার কারণে পুলিশ সতর্ক রয়েছে এবং এ কারণেই বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তিনি আরও জানান, শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতকে কেন্দ্র করে চার স্তরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বলবৎ থাকবে। আর এই নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ১০টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। ঈদগাহকে কেন্দ্র করে ৩২টি চেকপোস্ট, ১৭টি পিকেট ও রোড ডিউটি থাকবে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা যাতে বিঘিœত না হয়, সে জন্য প্রত্যেক মুসল্লিকে তিনটি স্তর পার হয়ে দেহ তল্লাশি করে মাঠে প্রবেশ করানো হবে। ঈদের দিন ১ হাজার ২০০ পুলিশ, পাঁচ প্লাটুন বিজিবি, ১০০ র‌্যাব সদস্য ছাড়াও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়াও মেটাল ডিটেক্টর, আর্চওয়ে, বোম্ব ডিসপোজাল টিম থাকবে এবং মাইন মেটাল ডিটেক্টর দ্বারা ঈদগাহ সুইপিং করা হবে। ঈদগাহে পুলিশের চারটি ওয়াচ টাওয়ার ও র‌্যাবের দুটি ওয়াচ টাওয়ার থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হবে। ভিডিও ক্যামেরা, সিসিটিভি ক্যামেরার পাশাপাশি ওপেন সার্কিট ক্যামেরা অর্থাৎ ড্রোন দিয়েও নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হবে। শহর ও শোলাকিয়া ঈদগাহের আশপাশের বাসা, হোস্টেল, মেস, আবাসিক হোটেলগুলোতে তল্লাশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ঈদের দিন অন্তত ২৫ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন বলে জানা গেছে। এদিকে জেলা প্রশাসক ও শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী জানান, শোলাকিয়ায় ঈদ জামাতের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। তিনি জানান, কিশোরগঞ্জ শহরের সব ভাড়াটিয়ার তথ্য ইতিমধ্যেই সংগ্রহ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে মাইকিংও করা হচ্ছে। দূরের মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার্থে দুটি স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। একটি ট্রেন সকালে ভৈরব থেকে এবং আরেকটি ময়মনসিংহ থেকে ছেড়ে আসবে। নামাজ শেষে আবার ট্রেন দুটি মুসল্লিদের নিয়ে গন্তব্য স্থানে যাবে। মুসল্লিদের সুবিধার্থে ঈদগাহে পর্যাপ্ত সুপেয় পানি, টয়লেট, সুপরিসর অজুখানার ব্যবস্থা রয়েছে। ঈদের আগে দূর থেকে আসা মুসল্লিদের মাঠের পাশেই আজিমউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে শোলাকিয়ায় একটি দৃষ্টিনন্দন মসজিদ নির্মাণ করা হবে। ঈদের পরই এর নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে। ১৮২৮ সালে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পূর্ব প্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে শোলাকিয়া ঈদগাহের গোড়াপত্তন হয়। পরে হয়বত নগরের দেওয়ান মান্নান দাদ খান এবং শোলাকিয়া সাহেব বাড়ি থেকে ঈদগাহে আরও কিছু জমি ওয়াকফ করে দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে প্রায় ৭ একর জমির ওপর এ ঈদগাহটি অবস্থিত। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে ঈদুল ফিতরের দিন শোলাকিয়া ঈদগাহের কাছে জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। এতে একজন জঙ্গি, দুজন পুলিশ সদস্য ও স্থানীয় এক গৃহবধূ নিহত হন। এ ঘটনার পর থেকেই শোলাকিয়ায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর