শিরোনাম
শনিবার, ৮ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

মমতাকে মেজাজ হারাতে ‘না’ করলেন অভিনেত্রী অপর্ণা

কলকাতা প্রতিনিধি

‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি বিতর্কে এবার মুখ খুললেন অভিনেত্রী ও চলচ্চিত্র পরিচালক অপর্ণা সেন। তিনি বলেন, এই ধ্বনি শুনে মমতা যেভাবে তার মেজাজ হারাচ্ছেন এবং অশ্রাব্য কথা বলছেন-তাতে তিনি নিজের কবর নিজেই খুঁড়ছেন। ভারতের বেসরকারি  টেলিভিশন চ্যানেলে (এনডিটিভি) একান্ত সাক্ষাৎকারে অপর্ণা সেন বলেন, মমতাকে ‘মাথায় যা এলে বলে দিলাম’ এই অভ্যাসটা ছাড়তে হবে। অপর্ণা একই সঙ্গে ধর্মের সঙ্গে রাজনীতি এবং হিন্দুত্বের সঙ্গে জাতীয়তাবাদকে মিশিয়ে ফেলা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। অপর্ণা সেন বলেন, ‘রাজনীতিতে ধর্মীয় স্লোগানের ব্যবহার আমার ভালো লাগে না। আমার মতে ধর্ম ও রাজনীতি দুটি বিষয়কে পৃথক করে রাখা উচিত। এই দুটি বিষয় এক হয়ে গেলেই সব ধরনের সমস্যা দেখা  দেয়। আমার মতে এটা ঠিক নয়।’ তার আরও অভিমত ‘ভারতের মতো গণতান্ত্রিক দেশে সবারই মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে। যে কেউ ‘জয় শ্রী রাম’ বা ‘আল্লাহু আকবর’ বা ‘জয় মা কালী’ ধ্বনি দিতে পারে। আপনি তা আটকাতে পারেন না। কিন্তু  আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি যেভাবে গাড়ি থেকে নেমে এসে ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি আটকানোর চেষ্টা করছেন এবং অশ্রাব্য কথা বলছেন-সেটা তার পক্ষে মানানসই নয়।’ বিশিষ্ট এই চিত্রপরিচালক জানান, ‘মমতা ব্যানার্জি বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে এ রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছেন এবং রাজ্যের জন্য উনি অনেক কাজ করেছেন।
আমার মনে পড়ে আমি যখন স্কাউটিংয়ের জন্য যাই তখন দেখি রাস্তাঘাট অনেক সুন্দর-যা আগে ছিল না। তিনি মাওবাদী সমস্যার সমাধান করেছেন। দার্জিলিংসহ পাহাড়ি এলাকাতেও এখন আমরা ছুটি কাটাতে যেতে পারি-যেটা হয়তো আগে অতটা ছিল না। কিন্তু তার পরও বলব তিনি অত্যধিক আবেগপ্রবণ। কোনো কিছু করার আগে তিনি একবারও ভাবেন না। তাকে যদি অনেক দিন ক্ষমতায় থাকতে হয়, তবে তার কথা বলায় লাগাম দেওয়াটা রপ্ত করতে হবে। তার আবেগকে নিয়ন্ত্রিত করতে হবে। কোনো কিছু বলার আগে তাকে প্রথমে ভাবতে হবে। এক্ষেত্রে তার সঙ্গে থাকা অমিত মিত্র বা সৌগত রায়ের মতো মানুষদের পরামর্শ নিতে হবে। মাথায় যা  এলো অমনি তা বলে দিলাম-এই অভ্যাস পরিত্যাগ করতে হবে।’
এ সময় অপর্ণা সেন বলেন, ‘বাংলার মানুষ খুবই হতাশ এবং মুখ্যমন্ত্রী এই ধরনের আচরণ করুক তারা তা চায় না। উনি তার ভোটারদের তার বিপক্ষে নিয়ে যাচ্ছেন। আমার মনে হয় এতে মুখ্যমন্ত্রী নিজের কবর নিজেই খুঁড়ছেন।’
মমতার এ ধরনের আচরণের প্রভাব আগামী বিধানসভার নির্বাচনে পড়বে কি না? সেই প্রশ্নের উত্তরে অপর্ণার জবাব, ‘আগামী নির্বাচনে মমতার লড়াই কঠিন হতে চলেছে। সমাজের মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত, শহুরে এবং সভ্যদের একটা বড় অংশ বিজেপির দিকে চলে গেছে। এই ব্যাপারটা আমাকে চিন্তায় রেখেছে। আমার বিশ্বাস প্রধানমন্ত্রী মোদি দেশের মঙ্গলে কাজ করবেন। কিন্তু ওদের মৌলিক চিন্তাভাবনা নিয়ে আমার আপত্তি আছে। ওরা হিন্দুত্ব এবং জাতীয়তাবাদকে এক করে দেখে-তাদের জাতীয়তাবাদী হলো সাভারকর মডেল-সেটাই আমাকে চিন্তিত করে। বরং আমি গান্ধীজির বহুত্ববাদী নীতিকেই সমর্থন করব।’  
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে তার কোনো বার্তা আছে কি না? উত্তরে অপর্ণা সেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে বার্তা পাঠানোর মতো দুঃসাহস আমার নেই কিন্তু বিনীতভাবে আমার একটা অনুরোধ যে মি. প্রধানমন্ত্রী আপনি সব বিষয়ে যত্নসহকারে নজর দেবেন। একটা কথা মাথায় রাখতে হবে যে আপনি শুধু হিন্দুদের নন, আপনি খ্রিস্টান, দলিত, মুসলমান-সবার প্রধানমন্ত্রী। আর মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে বলব আপনি কিছু বলার আগে দয়া করে সেটা ভাবার চেষ্টা করুন। এক্ষেত্রে নাগরিক সমাজের প্রতিও একটা ভূমিকা আছে। কোনো একটি পক্ষকে সমর্থন না করে নাগরিক সমাজের উচিত বিরোধী ভূমিকা নেওয়া।
উল্লেখ্য, ধ্বনি-পাল্টা ধ্বনিতে এই মুহূর্তে উত্তপ্ত পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি। সাম্প্রতিক কালে রাজ্যের দুটি  জেলাতে মমতাকে উদ্দেশ করে ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি  দেওয়ার পর তার মেজাজ হারানো এবং গালাগাল করার ঘটনা সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে সবার জানা। এই ধ্বনি দেওয়ার কারণে কয়েকজনকে আটক করা হয় বলেও অভিযোগ।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি ও তার সরকারি কার্যালয় নবান্নে ‘জয় শ্রী রাম’ লেখা পোস্টকার্ড বিতরণ শুরু করেছে বিজেপি। তৃণমূলের তরফেও পাাল্টা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানিয়েছেন তারাও ‘জয় বাংলা’ ও ‘জয় হিন্দু’ লেখা ২০ লাখ পোস্টকার্ড প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দিল্লির সরকারি বাসভবনে পাঠাবেন।

 

সর্বশেষ খবর