সোমবার, ১০ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

নতুনভাবে গড়ে তোলা হবে পুরান ঢাকার সাত এলাকা

মাহবুব মমতাজী

আধুনিক স্থাপত্যরীতি অনুসরণ করে নতুনভাবে গড়ে তোলা হবে পুরান ঢাকাকে। পরিকল্পিত নাগরিক এলাকা হিসেবে গড়ে তুলতে সাতটি স্থানে শুরু হবে নগর পুনরুন্নয়ন বা আরবান রিডেভেলপমেন্ট কার্যক্রম। এর মধ্যেই আদি জনপদের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও হেরিটেজ সংরক্ষণ করা হবে। সেই সঙ্গে জরাজীর্ণ ভবন, সংকীর্ণ রাস্তা ও অপর্যাপ্ত নাগরিক সুবিধার সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য বাস্তবায়ন করা হবে পরিকল্পিত নগরায়ণ। এ লক্ষ্যে ২৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) আরবান রিডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের সম্ভাব্য স্থান নির্ধারণবিষয়ক পাঁচ সদস্যের কমিটি একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। কমিটির সদস্যরা সরেজমিন পরিদর্শনে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত, স্যাটেলাইট ইমেজ বিশ্লেষণ ও ডিডেইল এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) (২০১৬-২০৩৫) প্রকল্পের সার্ভে ডাটাবেজ পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে পুরান ঢাকার ইসলামবাগ, চকবাজার, মৌলভীবাজার, বংশাল, হাজারীবাগ, কামরাঙ্গীর চর ও লালবাগ- এ সাতটি স্থানকে পুনরুন্নয়নের জন্য চিহ্নিত করেন। কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসলামবাগের প্রায় ১৪ একর, চকবাজারের প্রায় দেড় একর, মৌলভীবাজারের ০.৬০ একর, বংশালের প্রায় ১২ একর, হাজারীবাগের ১১১.০৩ একর, কামরাঙ্গীর চরের প্রায় ৩৩ একর ও লালবাগের প্রায় ৩২ একর জায়গাকে চিহ্নিত করা হয়। একই সঙ্গে তারা ১০টি সুপারিশও দেন। সুপারিশগুলো হলো- প্রকল্প গ্রহণের জন্য আর্থ-সামাজিক জরিপ, পরিবেশগত, পরিবহন ও সামাজিক প্রভাব সমীক্ষার সমন্বয়ে পূর্ণাঙ্গ সমীক্ষা এবং এলাকায় বসবাসকারী সব মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করতে হবে। প্রকল্প গ্রহণবিষয়ক চূড়ান্ত নীতিমালা করতে হবে। ঐতিহ্যগত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা সংরক্ষণ করতে হবে। ওই এলাকায় বসবাসকারী চাহিদার ভিত্তিতে নগর পরিকল্পনার মানদ  নির্ধারণ করতে হবে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, ওয়াসা, তিতাস, ডেসকোসহ সব সরকারি দফতর ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। প্রধান সড়কের সঙ্গে প্রকল্প এলাকার সুষ্ঠু যোগাযোগব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। পুরান ঢাকার প্রধান সড়কগুলোকে চিহ্নিত করে সড়ক সম্প্রসারণ, নতুন সড়ক নির্মাণ ও ট্রাফিক চাহিদা পূরণ করতে হবে। ড্যাপের প্রস্তাব অনুযায়ী নাজিমউদ্দিন রোড ও বকশীবাজার-চকবাজার রোডকে ৬০ ফুট প্রশস্ত করতে হবে। নতুন ও কাঠামোগতভাবে ঝুঁকিমুক্ত ভবনগুলোকে যথাযথভাবে যাচাই করে প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। আরবান রিডেভেলপমেন্ট প্রকল্প চলাকালে প্রকল্পভুক্ত মানুষদের সুবিধাজনক স্থানে অন্তর্বর্তীকালীন আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।

এ বিষয়ে রাজউকের নগর পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘এর আগে জাপান, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ও অস্ট্রেলিয়ায় রিডেভেলপমেন্ট প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। ফলে সেসব দেশের অসংখ্য ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাকে নতুন করে ঢেলে সাজানো হয়। আমাদের এখানেও এখন স্থানীয় বাসিন্দারা এটি গ্রহণ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতামত নেওয়া হচ্ছে। এর পরই প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে।’

জরাজীর্ণ পুরনো আবাসিক ভবন, অপর্যাপ্ত আলো-বাতাস, ঘিঞ্জি পরিবেশ, অপরিকল্পিত এলাকা, ফুটপাথবিহীন, সংকীর্ণ যোগাযোগব্যবস্থা, অপর্যাপ্ত ড্রেনেজ, ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যুতের লাইন, অস্বাস্থ্যকর পানি সরবরাহব্যবস্থা, অপ্রতুল খোলা জায়গা, ভূমিকম্প ও অগ্নিদুর্ঘটনার অতিমাত্রার ঝুঁকিযুক্ত এলাকা। আরবান রিডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের মাধ্যমে বিদ্যমান ভবন ও অবকাঠামোর পুনর্নির্মাণ, পুনর্বিন্যাস ও কাঠামোগত হালনাগাদ করা, রাস্তা প্রশস্ত করা, পরিকল্পিত যোগাযোগ নিশ্চিত করা, ভূমিকম্প ও অগ্নিদুর্ঘটনাসহ অন্যান্য দুর্যোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেওয়া, পর্যাপ্ত নাগরিক সুবিধার সংস্থান, পার্ক, খেলার মাঠসহ খোলা জায়গা রাখা, পরিবেশবান্ধব ও দৃষ্টিনন্দন শহরে পরিণত করা হবে।

রিডেভেলপমেন্টের মাধ্যমে আধা কাঠা থেকে দেড় কাঠার ছোট ছোট প্লটে থাকা পুরান, জরাজীর্ণ ভবনগুলোকে অপসারণ করে ওইসব জমিকে একত্র করে তিন বিঘা কিংবা পাঁচ বিঘা আয়তনের একেকটি ব্লকে পরিণত করা হবে। সেখানে নতুন করে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হবে। এতে পর্যাপ্ত খোলা জায়গায় পার্ক, খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, কমিউনিটি সেন্টার, ব্যায়ামাগার, বিনোদন কেন্দ্রসহ অন্যান্য নাগরিক সুবিধার সংস্থান করা হবে। তবে প্রকল্প এলাকায় হেরিটেজ সংরক্ষণ করা হবে।

সর্বশেষ খবর