সোমবার, ১ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

রাখাইনকে বাংলাদেশের অংশ করলেই রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধান

-মার্কিন কংগ্রেসম্যান শারমেন

প্রতিদিন ডেস্ক

মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত কমিটির এশিয়া সম্পর্কিত উপ-কমিটির চেয়ারম্যান কংগ্রেসম্যান (ডেমোক্র্যাট-ক্যালিফোর্নিায়া) ব্র্যাড শারমেন বলেছেন, রোহিঙ্গা অধ্যুষিত রাখাইন এলাকাকে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত করা উচিত। ওই এলাকাকে বাংলাদেশের কাছে স্থানান্তর করতে (বাংলাদেশের অংশ করতে) যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন দেওয়া উচিত, যা ওই এলাকার মানুষও চাচ্ছে। আর তাহলেই রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধান হতে পারে। খবর : এনআরবি নিউজ। গত ১৩ জুন ‘দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ এবং অর্থবছর ২০২০ বাজেট’ সম্পর্কিত শুনানিতে ব্র্যাড শারমেন আরও বলেন, লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশ আশ্রয় দেওয়ায় আমি বাংলাদেশকে অভিবাদন জানাচ্ছি।

আমি কংগ্রেসের এই কক্ষে এর আগেও বলেছি, এখনো বলতে চাই- মিয়ানমার অথবা বার্মা সরকার যদি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী রক্ষায় এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী না হয়, রাখাইন স্টেটের উত্তরাঞ্চলের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর লোকজনকে নিরাপত্তা দিতে না চায়, অথবা অপারগ হয়- তাহলে ওই স্টেটের (প্রদেশের) রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকাকে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত করা উচিত। ব্র্যাড শারমেন উল্লেখ করেন, রোহিঙ্গারা এমন একটি সরকারের অধীনে থাকতে চায়- যারা তাদের নিধন নয়, সুরক্ষায় আন্তরিক অর্থে কাজ করবে।

শারমেনের বক্তব্যের পর মন্ত্রণালয়ে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ভারপ্রাপ্ত সহকারী মন্ত্রী অ্যাম্বাসেডর অ্যালিস ওয়েলস এবং ইউএস এইডের ভারপ্রাপ্ত সহকারী প্রশাসক গ্লোরিয়া স্টিলি নিজ বক্তব্য উপস্থাপন করেন। তবে তারা উপরোক্ত বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।

ব্র্যাড শারমেনের এমন প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে নিউইয়র্ক স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক মাহফুজ আর চৌধুরী বলেন, ‘এ প্রস্তাবে হান্ড্রেড পার্সেন্ট সমর্থন জানাতে চাই। এর বাইরে অন্য কিছুতেই রোহিঙ্গা ইস্যুর শান্তিপূর্ণ সমাধান হবে না। কারণ, মিয়ানমার প্রশাসনের মধ্যে গণতান্ত্রিক উদারতা একেবারেই ছিল না।’ তিনি উল্লেখ করেন, তবে এমন প্রস্তাবেও সম্মতি লাগবে চীনের। ‘চীন ছাড়া সম্ভব নয়’-বলে উল্লেখ করেন তিনি। তিনি বলেন, এজন্য বিশ্বজনমত তৈরি করতে হবে, চীনকে এ ব্যাপারে রাজি করাতে হবে।

শুনানিতে জর্জিয়া অঙ্গরাজ্য পার্লামেন্টের ডেমোক্র্যাট সিনেটর বাংলাদেশি আমেরিকান শেখ রহমান বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুর শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই। এজন্য যা করলে ভালো হয়- সেখানেই আমার সমর্থন থাকবে। কংগ্রেসম্যান ব্র্যাড শারমেনের প্রস্তাবেও আমি একমত। এক্ষেত্রেও মিয়ানমারের সামরিক জান্তাকে বাধ্য করতে জনমত তৈরি করতে হবে।

জানা গেছে, কংগ্রেসম্যানের উল্লিখিত প্রস্তাব নিয়ে আমেরিকায় প্রবাসীরাও সরব। তাদের অধিকাংশই চাচ্ছেন রাখাইনের স্বাধীনতা। তবে খুব কম সংখ্যকই বাংলাদেশের সঙ্গে রাখাইনকে যুক্ত করার পক্ষে। এ ছাড়া প্রায় সবাই আশা করছেন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বসতভিটায় ফিরে সম্মানের সঙ্গে বসতি শুরু করতে সক্ষম হয়-এমন পরিবেশ তৈরি হোক।

বিল উত্থাপন : এদিকে প্রতিনিধি পরিষদে পররাষ্ট্র সম্পর্কিত মূল কমিটির চেয়ারম্যান নিউইয়র্কের কংগ্রেসম্যান এলিয়ট এঙ্গেল  (ডেমোক্র্যাট) এবং এ কমিটিতে রিপাবলিকান (ওহাইয়ো) কংগ্রেসম্যান স্টিভ স্যাবট যৌথভাবে ২০ জুন আরেকটি বিল উত্থাপন করেছেন মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপের দাবিতে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে গণহত্যার জন্য মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে সরাসরি অভিযুক্ত করা হয়েছে এই বিলে। এটি পাস হলে মিয়ানমারের প্রশাসনের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য, মিয়ানমার ভ্রমণ এবং অর্থনৈতিক লেনদেনের ওপর কঠোর শর্ত আরোপিত হবে। আর এর ভিকটিম হবে মিয়ানমারের শীর্ষ পর্যায়ের রাজনীতিক, প্রশাসক, সেনা কর্মকর্তারাও।

এ প্রসঙ্গে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে এ কমিটির চেয়ারম্যান এলিয়ট এঙ্গেল বলেন, ‘২০১৭ সাল থেকে বার্মার সামরিক বাহিনী কর্তৃক  রোহিঙ্গা নিধনের যে বর্বরতা শুরু হয়েছে, তার বিচারের জন্য আরও কিছুদিন অপেক্ষার প্রয়োজন নেই। সহিংসতা থেকে  রোহিঙ্গাদের মুক্তি পাওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে এবং যারা এহেন মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দায়ী, সোজা কথায় রোহিঙ্গাদের গণহত্যার জন্য দায়ী- তাদেরও কাঠগড়ায় দাঁড়ানোর সময় হয়েছে।’

খবরে বলা হচ্ছে, শিগগির বিলটি প্রতিনিধি পরিষদে পার হলেও উচ্চকক্ষ সিনেটে পাসের কোনোই সম্ভাবনা নেই বলে বিশ্লেষকরা মন্তব্য করেছেন। কারণ, সিনেট কমিটির রিপাবলিকান চেয়ারম্যান সিনেটর (কেন্টাকি) মিচ ম্যাককনেল হচ্ছেন অং সান সু চির ঘনিষ্ঠ বন্ধু।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর