রবিবার, ২৮ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

গঙ্গার পানি ‘মধ্যরাতের নাস্তা’র মতো সমান ভাগ করা হয়েছে

-আসিফ নজরুল

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল গঙ্গা নদীর পানি বণ্টন চুক্তিকে দুই বন্ধুর মধ্যরাতের নাস্তা সমান ভাগে ভাগ করার সঙ্গে তুলনা করে বলেন, এক বন্ধু আরেক বন্ধুকে সকাল, দুপুর আর রাতের খাবার না দিয়ে মধ্যরাতের নাস্তার সময় বলছে, ‘এখন এটা একশ’ ভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে সমান ভাগ করা হবে। এটাই করা হয়েছে গঙ্গা নদীর পানি বণ্টন চুক্তিতে। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিরাজুল ইসলাম লেকচার হলে ‘জ্ঞানতাপস আবদুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশন’ আয়োজিত ‘নদী, পরিবেশ, আইন ও রাষ্ট্র’ শীর্ষক অপ্রকাশিত পিএইচডি অভিসন্দর্ভ বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির নির্বাহী প্রধান সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। স্বাগত বক্তব্য দেন ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ড. আহরার আহমেদ। ড. আসিফ নজরুল তার বক্তৃতায় বলেন, নদী পৃথিবীর একটি নৈসর্গিক সৌন্দর্যময় প্রাকৃতিক সম্পদ। কিন্তু মানুষের লোভের কারণে তা আজ বিবাদের বস্তু।

পৃথিবীর মোট পানির মধ্যে স্বাদু পানি আছে ২.৫ শতাংশ, বাকি সব লবণাক্ত।

এই ২.৫ শতাংশের এর মধ্যে মাত্র ০.৩ শতাংশ ভূ-উপরস্থ পানি। এই নিয়েই পৃথিবীর বিশটি দেশের মধ্যে বিবাদ। অবাক করার বিষয় হলো, মাথাপিছু পানির পরিমাণ সবচেয়ে কম এশিয়ায়। আর বাংলাদেশ এক্ষেত্রে আরও ভুক্তভোগী। কেননা বাংলাদেশ তার মোট পানির ৯৫ শতাংশের জন্য পাশর্^বর্তী দেশগুলোর ওপর নির্ভরশীল।

তিনি বলেন, ভাটির দেশ বাংলাদেশের ৫৪টি নদী ভারত থেকে প্রবাহিত হয়। চার দশকের দর কষাকষির পর ১৯৯৬ সালে দুই দেশ শুধু গঙ্গা নদীর পানি বণ্টন বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছাতে পেরেছে। সে অনুযায়ী বছরের একটা অংশে ফারাক্কায় গঙ্গা পানি প্রবাহে অনুযায়ী দুই দেশের মধ্যে ভাগাভাগি হবে। কিন্তু এতে পানি প্রবাহের আসল চিত্রের মধ্যে ফাঁকি রয়েছে। আবার এতে নদী সুরক্ষার কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি।

পানি বণ্টনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার চুক্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা সমতাভিত্তিক বটে, কিন্তু পুরো নদীর নয়, বরং একটা ছোট অংশের। ফারাক্কা প্রকল্প হওয়ার পর তারা এসে বলছে, আস চুক্তি করি। কেন, ফারাক্কা হওয়ার আগে এসে বলতে পার না? অর্থাৎ এককভাবে একটি প্রকল্প নেওয়ার পর, সেটাকে আইনসিদ্ধ এবং ন্যূনতম একটা পানি প্রবাহ দিতে এই চুক্তির প্রস্তাবনা।

পানি প্রবাহের ক্ষেত্রে ভারত অনেক তথ্যই প্রকাশ করে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভারত উত্তরপ্রদেশ থেকে কতটুকু পানি সরিয়ে নিচ্ছে, কী প্রকল্প নিচ্ছে, তার তথ্য দেয় না। একইভাবে বিহার এবং পশ্চিমবঙ্গের পানি অপসারণের ক্ষেত্রেও কোনো তথ্য দেয় না। কিন্তু সীমানায় এসে কতটুকু পানি অপসারণ করছে, তার তথ্য দেয় এবং ওইটুকুই ভাগ করার কথা বলে।

সভাপতির বক্তব্যে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমরা যদি ভারতকে বলি, তোমরা আামাদের নদীকে মেরে ফেলেছো। তারাও আমাদের বুড়িগঙ্গার উদাহরণ দেখিয়ে বলতে পারে, তোমরাও তো  তোমাদের নদীকে মেরে ফেলেছো। তাই আন্তর্জাতিক নদীর পাশাপাশি যেসব দেশীয় নদীর ওপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ আছে, সেগুলোকেও বাঁচাতে হবে। এজন্য নাগরিক পর্যায়ে সচেতনতার ওপর জোর দেন তিনি।

সর্বশেষ খবর