বৃহস্পতিবার, ১ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা
হাই কোর্টের রায়

প্রাইভেট কার, সিএনজি অটো রিকুইজিশন করা যাবে না

নিজস্ব প্রতিবেদক

জনস্বার্থ ছাড়া কোনো গাড়ি রিকুইজিশন করলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে হাই কোর্ট। নয় বছর আগের একটি রুল নিষ্পত্তি করে গতকাল বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি খিজির আহমেদ চৌধুরীর হাই কোর্ট বেঞ্চ নয় দফা নির্দেশনাসহ এ রায় দেয়। প্রাইভেটকার, সিএনজি চালিত অটোরিকশা, ট্যাক্সি রিকুইজিশন করা যাবে না বলেও রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ আইন চ্যালেঞ্জ করে করা রিটে আসা এ রায় শুধুমাত্র রাজধানী ঢাকার জন্যই প্রযোজ্য বলে জানান আইনজীবী। আদালতে রুলের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোশতাক হোসেন। পরে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশের রিকুইজিশন বাণিজ্য নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ যুক্ত করে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ-এইচআরপিবি’র পক্ষ থেকে একটি রিট আবেদন করা হয়েছিল।

তিনি বলেন, আমাদের এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১০ সালের ২৩ মে আদালত রুল জারি করেছিলেন। সে রুলের ওপর দীর্ঘ শুনানি নিয়ে রুলটি নিষ্পত্তি করে এবং মামলাটি চলমান রেখে রায় দিয়েছে আদালত। আইনে বিশেষ কারণে প্রয়োজনে গাড়ি রিকুইজিশন করার ক্ষমতা দেওয়া হলেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এতে অনেকের মানবাধিকারও লঙ্ঘন করা হচ্ছে।

৯ দফা নির্দেশনা : হাই কোর্টের রায়ে দেওয়া নয় দফা নির্দেশনা হচ্ছে- যে কোনো গাড়ির রিকুইজিশন অবশ্যই জনস্বার্থে করতে হবে। যদি কোনো কর্মকর্তা তা না করেন, সে কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। রিকুইজিশন করা গাড়ি কোনা কর্মকর্তা ব্যক্তিগত বা পরিবারের কাজে ব্যবহার করতে পারবেন না। করলে অসদাচরণের জন্য তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রাইভেটকার, সিএনজি, ট্যাক্সি রিকুইজিশন করা যাবে না। প্রত্যেক পুলিশ স্টেশনে রিকুইজিশন করা গাড়ির তালিকা সংরক্ষণ করতে হবে। রিকুইজিশন সংক্রান্ত যে কোনো অভিযোগ পুলিশ কমিশনার তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন। রিকুইজিশন করা গাড়ির কোনো ক্ষতি হলে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। গাড়ির জ্বালানি খরচ বহন করতে হবে। চালকদের খাবার খরচও দিতে হবে। ছয় মাসের মধ্যে একই গাড়ি দুবার রিকুইজিশন করা যাবে না। নারী, শিশু, রোগী বহনকারী গাড়ি রিকুইজিশন করা যাবে না। এসব নির্দেশনা পালনে পুলিশ কমিশনার কর্তৃক একটি সার্কুলার জারি করে তা সব পুলিশ কর্মকর্তার কাছে পাঠাতে হবে এবং নির্দেশনা মানা নিশ্চিত করতে হবে।

২০১০ সালের ২৩ মে রিট আবেদনটির প্রাথমিক শুনানি নিয়ে জনস্বার্থ ছাড়া কোনো গাড়ি রিকুইজিশন না করতে সরকার ও পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছিল হাই কোর্ট। পাশাপাশি গাড়ি রিকুইজিশন সংক্রান্ত ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশের ১০৩ (ক) ধারাটি কেন বেআইনি ও সংবিধান পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করেছিল। চলতি বছরের ৯ জুলাই আদালত রুল শুনানিতে চার আইনজীবীকে অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ দেয় হাই কোর্ট। এ চার আইনজীবী হলেন- এম আমীর-উল ইসলাম, রোকন উদ্দিন মাহমুদ, ফিদা এম কামাল ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিন। তাদের বক্তব্য শুনে এবং রুলের পক্ষে-বিপক্ষে শুনানি শেষ করে আদালত গতকাল এ রায় দিল।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর