বুধবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা
আসামে ভারত-বাংলাদেশ সম্মেলন

দিল্লি চায় সড়ক যোগাযোগ, ঢাকার দাবি জটিলতার নিরসন

শাহ্ দিদার আলম নবেল, গুয়াহাটি (ভারত) থেকে

বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ভারতের আসামের রাজধানী গুয়াহাটিতে গতকাল শুরু হয়েছে দুই দিনের ‘ভারত-বাংলাদেশ স্টেকহোল্ডারস সম্মেলন’। ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নের লক্ষ্যেই গতকাল শুরু হয় এ সম্মেলন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি ও তা নিরসনের উদ্যোগ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বরোপ করেন। অন্যদিকে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার ও দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ও ব্যক্তিগত যান চলাচল দ্রুত চালুর ওপর জোর দেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। শুরুতেই দুই দেশের ক্রস বর্ডার ট্রেডের সম্ভাবনার ওপর বক্তৃতা করেন এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর কেনেচি ইয়াকোইয়ামা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফরের সময় যেসব চুক্তি হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার। এ চুক্তির ফলে বাংলাদেশই বেশি লাভবান হবে। এ বন্দর ব্যবহারের ফলে ভারতীয় হলদিয়া বন্দরের প্রায় ৮০ শতাংশ রাজস্ব চলে যাবে বাংলাদেশে। তবে এতে ভারতেরও লাভ রয়েছে। হলদিয়া বন্দর থেকে পণ্য আনা-নেওয়া করতে আসামের প্রায় ১২০০ কিলোমিটার পাড়ি দিতে হয়। চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করলে তা ৬০০ কিলোমিটারে কমে আসবে। তাই দ্রুত এ চুক্তির বাস্তবায়ন প্রয়োজন। তিনি দুই দেশের মধ্যে বিশেষ করে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোর মধ্যে যান চলাচল বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখার জন্য বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানান।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে এখন প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য চলে। কিন্তু বাংলাদেশ মাত্র ১.৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করছে। এর কারণ, ভারতে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে অনেক জটিলতা। এগুলো দ্রুত সমাধান প্রয়োজন। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এসব সমস্যা সমাধানে দুই দেশকে আন্তরিক হতে হবে, নইলে এ ধরনের বৈঠক কাগজে কলমেই থেকে যাবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সানোয়াল বলেন, বাংলাদেশকে বাদ দিয়ে এই উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোর উন্নয়ন সম্ভব নয়। আর এসব রাজ্যে বাংলাদেশেরও বাণিজ্যের দিক দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার অপার সম্ভাবনা রয়েছে। দুই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতেই তিনি এ বৈঠকের আয়োজন করেছেন। তিনি আশা করেন, দুই দেশই আন্তরিকতার সঙ্গে বিষয়গুলো বিবেচনা করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, ভারতের সড়ক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জেনারেল (অব.) ভি কে সিং, আসামের শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী চন্দ্রমোহন পাটওয়ারী, অর্থমন্ত্রী হিমান্ত বিশ্ব শর্মা, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার রিভা গাঙ্গুলী দাশ প্রমুখ। সম্মেলনে বাংলাদেশের ৯০ সদস্যেরে প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। প্রতিনিধি দলে রয়েছেন ড. মশিউর রহমান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, বিআরটিসির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) এহসান-ই এলাহী, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব এ এইচ এম আহসান, উপসচিব মো. সেলিম হোসেন, কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনের প্রথম সচিব (বাণিজ্য) সামছুল আরিফ, গুয়াহাটিতে বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনার ড. শাহ মহাম্মদ তানভীর মনছুর, নয়াদিল্লিস্থ হাইকমিশনের অর্থনৈতিক সচিব রাশেদুল আমিন, বাণিজ্য সচিব আতিকুল হক। এ ছাড়া সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির একটি প্রতিনিধি দল সম্মেলনে অংশ নেয়। প্রতিনিধি দলের রয়েছেন চেম্বারের সিনিয়র সহসভাপতি চন্দন সাহা, পরিচালক এমদাদ হোসেন, এহতেশামুল হক চৌধুরী, আবদুর রহমান, আতিক হোসেন, আবদুর রহমান জামিল প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর