সোমবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

রংপুর আওয়ামী লীগের সভায় দফায় দফায় সংঘর্ষ, আহত ১০

রংপুর প্রতিনিধি

রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। শনিবার রাতে অনুষ্ঠিত সভায় মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা প্রকৌশলী শাহাদতকে জামায়াত-শিবির আখ্যা দেওয়া হলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। সভায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক উপস্থিত ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার রাত ৮টার দিকে নগরীর বেতপট্টির কার্যালয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা শুরু হয়। সভায় ৩৩টি ওয়ার্ডের সভাপতি সম্পাদকসহ আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সভার প্রধান অতিথি জাহাঙ্গীর কবির নানক ওয়ার্ড কমিটির নেতাদের কাছে দলের অবস্থা সম্পর্কে জানতে চান। এ সময় কয়েকজন নেতা অভিযোগ করেন, দলে বেশ কয়েকজন জামায়াত-শিবির নেতা অনুপ্রবেশ করেছেন। নানক অনুপ্রবেশকারীদের নাম জানতে চান। এ সময় রংপুর সিটি করপোরেশনের ২৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান ছাত্রশিবির করতেন এবং তার শ্বশুর শাহআকমল এখনো জামায়াতের রংপুর মহানগরীর একজন নেতা বলে জানান অভিযোগকারীরা।

এ কথা শোনার পরপরই নানক মিজানকে দল থেকে বহিষ্কারের ঘোষণা দেন।

এ ছাড়া মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা প্রকৌশলী শাহাদতকে জামায়াত-শিবির বলে কয়েকজন চিহ্নিত করার চেষ্টা করলে শাহাদত এর তীব্র বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, ‘আমি ছাত্রলীগ থেকে রাজনীতি শুরু করেছি। কোনোদিন জামায়াত-শিবির করিনি। অথচ মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আমার সম্মানহানি করা হচ্ছে।’ দুই পক্ষের মধ্যে বাকবিতন্ডা চলতে থাকা অবস্থায় মহানগর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সভাস্থলে প্রবেশ করেন। তারা শাহাদত হোসেনের অনুসারী। তাদের সঙ্গে অভিযোগকারীদের হাতাহাতি ও মারামারি শুরু হয়। পরে নানক ও রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হকের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। তবে সভা শেষে নেতারা চলে যাওয়ার পর রাত ৯টা পর্যন্ত আওয়ামী লীগের মহানগর নেতাদের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে কমপক্ষে ১০ জন আহত হন।

এ ব্যাপারে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) নুরুন নবী জানান, খবর পেয়ে তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

এ সময় নেতা-কর্মীদের মারামারিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন নানক। তিনি বলেন, ‘যারা এই সভায় গোলমাল করল তারা আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগ হতে পারে না। আওয়ামী লীগের শত্রু হচ্ছে আওয়ামী লীগ। এই দল ঐক্যবদ্ধ থাকলে বিএনপি-জামায়াত আমাদের লোম স্পর্শ করতে পারবে না।’

আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। তিনি ছাত্রলীগ দিয়ে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছেন। নিজ হাতে ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদক নির্বাচিত করে অভিযোগ পাওয়ার পর ঝেঁটিয়ে বিদায় করেছেন। আমি নানক না থাকলেও আওয়ামী লীগ চলবে। এই দলে কোনো নেতাই অত্যাবশ্যক নয়। শেখ হাসিনা সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য যা যা করা প্রয়োজন, করবেন।’

রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিউর রহমান সফির সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি ম-লের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রাজুসহ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির নেতা ও মহানগর আওয়ামী লীগের ৩৩টি ওয়ার্ডের সভাপতি সম্পাদকরা।

রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি ম ল জানান, মিটিং শুরুর সময় বসা নিয়ে ২৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজানের সঙ্গে কতিপয় ছাত্রলীগ নেতার বাকবিত ার একপর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। তবে বিষয়টি মীমাংসার জন্য রবিবার রাতে জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে বলেও জানান মহানগর আওয়ামী লীগের এই নেতা।

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি থানার ওসি আবদুর রশিদ জানান, নিজেদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর