বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

সারা ভারতেই নাগরিকপঞ্জি হবে : অমিত শাহ

নয়াদিল্লি প্রতিনিধি

ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, আসাম রাজ্যে যেমন হয়েছে তেমনই সারা ভারতে ন্যাশনাল রেজিস্টার ফর সিটিজেন্স (এনআরসি)- নাগরিকপঞ্জি হবে। গতকাল তিনি সংসদের অধিবেশনে বক্তৃতা করছিলেন। আসামে গত ৩১ আগস্ট যে চূড়ান্ত নাগরিকপঞ্জি প্রকাশিত হয় তাতে বাদ পড়ে ১৯ হাজার জনের নাম। এরপর থেকেই এনআরসি ইস্যুতে দেশজুড়ে জল্পনা তুঙ্গে।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন যে পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি হবে না। এই পরিস্থিতিতে সংসদে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঘোষণা দিলেন, গোটা ভারতে এনআরসি হবে। তিনি আরও জানান, গোটা দেশের সঙ্গে আসামে আরও একবার এনআরসি হবে।

অমিত শাহ দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেন, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশে নির্যাতিত সংখ্যালঘু হিন্দু, খ্রিস্টান, পারসি, বৌদ্ধ এবং জৈন ধর্মাবলম্বীদের নাগরিকত্ব দিতেই সরকার নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল আনতে চলেছে।

অমিত শাহ বলেন, এনআরসির প্রশ্নে কোনো নির্দিষ্ট ধর্মের মানুষের চিন্তার কারণ নেই। সংসদে প্রশ্ন তোলা হয়, নাগরিকত্বের বিষয়ে মুসলিমদের ওপর সরকার কী ভাবনাচিন্তা করছে। এই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিয়ে তিনি বলেন, শরণার্থী হিন্দু, পারসি, বৌদ্ধ,  জৈনদের নাগরিকত্ব দিতে নাগরিক সংশোধনী বিলের আওতায় আনা হবে। কারণ হিসাবে ব্যাখ্যা দেন পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তানের ওই শরণার্থীরা নির্যাতিত।

এর আগে অমিত শাহ কলকাতায় একটি সমাবেশে বলেছিলেন যে, এনআরসি জাতীয় সুরক্ষার বিষয় এবং কোনো দেশ এত পরিমাণে অনুপ্রবেশকারীদের সঙ্গে নিয়ে সহজে চলতে পারে না।

পশ্চিবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘লাখে লাখে হিন্দুদের’ বাংলা ত্যাগ করার বিষয়ে মিথ্যাচার ছড়াচ্ছেন এই অভিযোগ তুলে অমিত শাহ বলেন, ‘আমি আজ হিন্দু, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ এবং খ্রিস্টান শরণার্থীদের এই আশ্বাস দিতে চাই যে, সরকার আপনাদের ভারত ছাড়তে বাধ্য করবে না।’

নাগরিকত্ব বিলের উদ্দেশ্য ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধন। আফগানিস্তান, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান থেকে আগত হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পারসি এবং খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী অবৈধ অভিবাসীদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্যই এই বিল। অন্যভাবে বললে, ভারতের প্রতিবেশী মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলোর অমুসলিম অভিবাসীদের সহজে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য এই বিলের অবতারণা। ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনে ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য ১২ মাস টানা ভারতে থাকার নিয়মের সঙ্গে বিগত ১৪ বছরের মধ্যে ১১ বছর ভারতবাস জরুরি ছিল। এবারের সংশোধনীতে দ্বিতীয় অংশে পরিবর্তন ঘটানো হচ্ছে। উপরোক্ত দেশগুলো থেকে আনা নির্দিষ্ট ৬টি ধর্মাবলম্বীদের জন্য ১১ বছর সময়কালটিকে নামিয়ে আনা হচ্ছে ৬ বছরে।

২০১৫ ও ২০১৬ সালে সরকার ১৯৪৬ ও ১৯২০ সালের আইনানুসারে অবৈধ অভিবাসীদের ক্ষেত্রে কিছু গোষ্ঠীকে ছাড় দিয়েছে। ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর ও তার আগে আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে ভারতে আগত হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পারসি এবং খ্রিস্টানদের ছাড় দেওয়া হয়েছে।

লোকসভায় এ বিল পেশ হয় ২০১৬ সালের ১৯ জুলাই। সে বছরের ১২ আগস্ট বিল পাঠানো হয় যৌথ সংসদীয় কমিটিতে। কমিটি তার রিপোর্ট জমা দেয় ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি। পরের দিন, ২০১৯ সালের ৮ জানুয়ারি লোকসভায় সে বিল পাস হয়। ষোড়শ লোকসভা অধিবেশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার সময়ে সরকার এ বিল রাজ্যসভায় আনার জন্য অতি তৎপর হয়ে ওঠে। কিন্তু, ২০১৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি রাজ্যসভা অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য মুলতবি হয়ে যায়। তাই বিল পেশ করা সম্ভব হয়নি।

সর্বশেষ খবর