বুধবার, ৮ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

নেতিবাচক রাজনীতি না থাকলে অগ্রগতি হতো আরও বেশি : তথ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের প্রথম বছর হচ্ছে ধারাবাহিক সাফল্যের আরও একটি বছর। নেতিবাচক রাজনীতি না থাকলে অগ্রগতি আরও বেশি হতো। সরকারের তৃতীয় মেয়াদের প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে গতকাল সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুন নাহার ও প্রধান তথ্য কর্মকর্তা সুরথ কুমার সরকার উপস্থিত ছিলেন।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ নেতিবাচক রাজনীতি ও সংঘর্ষের রাজনীতি পরিহারের পক্ষে। কিন্তু এক পক্ষ হাত প্রসারিত করলে তা সম্ভব নয়। বিরোধীপক্ষকেও এগিয়ে আসতে হবে।

হাছান মাহমুদ বলেন, ১০ বছরের সাফল্যের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে গত বছরও বাংলাদেশের জন্য আরেকটি সাফল্যের বছর ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকে বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। সেই অভিযাত্রায় বাংলাদেশ এখন আর স্বল্পোন্নত নয়, ইতিমধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশ এখন আর খাদ্যঘাটতির দেশ নয়, খাদ্যে উদ্বৃত্তের দেশে রূপান্তরিত হয়েছে।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, গত অর্থবছর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল ৮.১৫ শতাংশ, যেটি দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ শতাংশের নিচে। বাংলাদেশে গত ১১ বছরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল পৃথিবীতে সর্বোচ্চ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই অর্জন জাতিকে লক্ষ্যে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণের ক্ষেত্রে, স্বপ্ন পূরণের অভিযাত্রা দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে অদম্য গতিতে এগিয়ে চলার স্বাক্ষর।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে মাথাপিছু আয়, যেটি ২০০৮ সালে ছিল ৬০০ ডলার, সেটি গত বছর ২০০০ ডলারে উন্নীত হয়েছে। প্রবাসী আয় ১৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮৩৩ কোটি ডলারে। আজকে বাংলাদেশ সব অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচকে পাকিস্তানকে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভারতকেও ছাড়িয়ে গেছে।

তিনি বলেন, শিক্ষাক্ষেত্রে বাংলাদেশ অসামান্য সাফল্য অর্জন করেছে। বাংলাদেশে শিক্ষিতের হার প্রায় ৭৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। প্রতিবছর ১ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনা মূল্যে বই বিতরণ করা হয়। দেশের পাঁচটি নৃগোষ্ঠীর জন্য তাদের ভাষায় ৭৭ লাখ বই বিতরণ করা হয়েছে। মায়ের হাসি প্রকল্পের মাধ্যমে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ১ কোটি ৪০ লাখ ছাত্রছাত্রীর মায়েদের কাছে মোবাইল ফোনে উপবৃত্তির টাকা পাঠানো হচ্ছে।

হাছান মাহমুদ বলেন, ‘২০০৯ সালে যখন সরকার গঠন করি তখন দেশে ৪০ শতাংশের মতো মানুষ বিদ্যুৎ পেত। আর বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ৩৩০০ মেগাওয়াট। এখন ৯৫ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। আর ২০১০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ১১ বছরে বিদ্যুৎ উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার ৭৬৩ মেগাওয়াট। আমরা আশা করছি, মুজিববর্ষে দেশের শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পাবে।’

তথ্যমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতুর ৮৪.৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে দ্রুত টানেল নির্মাণের কাজ হচ্ছে। ৪০ শতাংশর বেশি কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। মেট্রোরেল নির্মাণের কাজ চলছে, যা ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর উন্মুক্ত হবে।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে দেশে খাদ্যশস্য উৎপাদন ৪ কোটি ৪৪ লাখ মেট্রিক টন, যা ২০০৬ সালের তুলনায় ৬১ ভাগ বেশি। মিঠাপানির মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে তৃতীয়। এ ছাড়া সবজি উৎপাদনে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। আম উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে সপ্তম। আলু উৎপাদনে সপ্তম।

হাছান মাহমুদ বলেন, গত বছর ২ সেপ্টেম্বর থেকে দূরদর্শনের ফ্রি ডিসের মাধ্যমে সমগ্র ভারতে অফিশিয়ালি বাংলাদেশ টেলিভিশন প্রদর্শিত হচ্ছে। এ মাসেই বাংলাদেশ বেতারও সমগ্র ভারতে সম্প্র্রচারিত হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ প্রযোজনায় একটি চলচ্চিত্র নির্মিত হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘বিদেশি টেলিভিশনের মাধ্যমে দেশি বিজ্ঞাপন বন্ধ  করেছি। অনেক টেলিভিশনে বিদেশি সিরিয়াল কোনো অনুমতি ছাড়া প্রদর্শিত হচ্ছিল, যেটি আমরা একটি নিয়ম-নীতির মধ্যে এনেছি। অবৈধ ডিটিএইচ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে মোবাইল কোর্ট চলছে। চলচ্চিত্রশিল্পীদের দাবি ছিল একটি কল্যাণ ট্রাস্ট করা। সেই কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করতে ট্রাস্ট আইন প্রণয়নের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে।’

সর্বশেষ খবর