শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

ওমান প্রবাসের স্বপ্ন ফিকে প্রতারণার শিকার পান্না

রাহাত খান, বরিশাল

স্ত্রী মাদ্রাসার শিক্ষক। স্ত্রীর আয়ের পাশাপাশি নিজে ক্ষুদ্র ব্যবসা করে সংসার চালাতেন বরিশাল নগরীর রূপাতলীর মো. পান্না মিয়া। ওমানে থাকা-খাওয়া ফ্রি, মাসে বেতন ৪০ হাজার টাকা, এক আত্মীয়ের এমন প্রস্তাবে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখেন তিনি। ভাগ্য বদলের আশায় গত বছর ২৪ মে নগরীর কাশীপুরের ফিশারি রোডের বাসিন্দা ওমান প্রবাসী শহীদুল ইসলামকে নগদ ৫ লাখ টাকা দেন। মধ্য জুনে ভিসা আসে পান্নার। শহীদুল একটি বিমান টিকিটও দেন। উড়াল দেওয়ার আগে শুধু ঢাকায় ৩ দিনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন শহীদুল ও তার ভগ্নিপতি হাই কোর্টে কর্মরত জাহাঙ্গীর সরদার। ১৯ সেপ্টেম্বর ওমানের ফ্লাইট।

তার আগে ১৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় লঞ্চযোগে বরিশাল ত্যাগ করেন পান্না। নদীবন্দরে বিদায়ের মূহূর্তে স্বজনরা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ওমান প্রবাসী শহীদুলও।

১৯ সেপ্টেম্বর সকালে হযরত শাহজালাল (রহ.) বিমানবন্দরে ফার্স্ট ইমিগ্রেশন গেটে প্রবেশের সময় কর্মকর্তারা চ্যালেঞ্জ করেন পান্নাকে। ভিসা ও টিকিট দুটোই জাল বলে শনাক্ত করেন। ওই ভিসা ও টিকিট নিয়ে ওমান তো নয়, বিমানবন্দরের মধ্যেও ঢুকতে পারবে না বলে পান্নাকে জানান ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা। শেষ মুহূর্তে প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পারেন তিনি। সেখানেই পান্নার সঙ্গে পরিচয় হয় শহীদের প্রতারণার শিকার বরিশাল নগরীর কাশীপুরের আরেক যুবক আমিনুল ইসলামের। স্বপ্নভঙ্গ হওয়ার পর বরিশাল ফিরে শহীদের কাছে টাকা ফেরত চান পান্না। আগের ভিসা জাল স্বীকার করে ১০ দিনের মধ্যে নতুন ভিসা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন শহীদ। কিছুদিন পর আরেকটি ভিসা দিলে সেটিও জাল বলে শনাক্ত হয়। এরপর টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলে সপরিবারে ওমান পালিয়ে যান শহীদ। প্রতারণার বিচার এবং টাকা ফেরত পাওয়ার দাবিতে অভিযুক্ত শহীদুল ইসলাম, তার স্ত্রী ফাতেমা আক্তার এবং তার ভগ্নিপতি জাহাঙ্গীর সরদারের বিরুদ্ধে ৩০ ডিসেম্বর বরিশাল চিফ মেট্রোপলিটন আদালতে মামলা করেন পান্না।

শুধু পান্না নন, শহীদের প্রতারণার শিকার হয়ে দুই-কুল হারিয়েছেন শহীদের আত্মীয় নগরীর ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের ফিশারি রোডের আমিনুল ইসলাম, দিয়াপাড়ার মাহমুদ হোসেন ও মো. মুন্না, নগরীর আমানতগঞ্জের মিজানুর রহমান এবং নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালের ফল বিক্রেতা মো. হাফিজ।

প্রতারণায় সহযোগিতার বিষয়ে গতকাল বিকালে মুঠোফোনে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর সরদার নিজেকে সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ অফিসার পরিচয় দিয়ে বলেন, কোর্ট চলছে। এ বিষয়ে পরে কথা বলবেন। প্রতারিতদের আরেকজন নগরীর আমানতগঞ্জের মিজানুর রহমান বলেন, শহীদুল ইসলাম তাকে একবার একটা ভিসার ফটোকপি দিয়েছিলেন। কিন্তু ওই ফটোকপি দিয়ে তাকে ওমান নিতে পারেননি শহীদ। বলেছেন ওমানে ভিসায় সমস্যা হয়েছে। ৫ মাস আগে প্রায় ৪ লাখ টাকা দিয়েও ওমান যেতে না পারা নগরীর নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালের ভাসমান ফল ব্যবসায়ী মো. হাফিজ বলেন, শহীদুল ইসলাম বারবার শুধু সময় চাইছেন। তারপরও বিদেশ নেবেন সে আশায় রয়েছেন তিনি। শহীদুলের মা লাইলী বেগম বলেন, শহীদ ১২ জনকে ওমান নেওয়ার কথা বলেছিল। সে কয়েকজনের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে, কয়েকজনের টাকা এখনো নেয়নি। দুজনকে ওমান নিতে পেরেছে। শহীদ ওমানে প্রতারণার শিকার হয়েছে। তারপরও সবাইকে ওমান নেওয়ার চেষ্টা করছে। পান্না ওমান যাওয়ার জন্য শহীদকে টাকা দিয়েছে বলে স্বীকার করেন লাইলী বেগম।

সর্বশেষ খবর