বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

জামিন জালিয়াত চক্রের মূল হোতাসহ গ্রেফতার ৩

নিজস্ব প্রতিবেদক

জামিন জালিয়াত চক্রের মূল হোতাসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। তারা হলেন- মূলহোতা দেলোয়ার হোসেন, তার দুই সহযোগী এবিএম রায়হান ও শামীম রেজা। গত মঙ্গলবার রংপুরের পীরগাছা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৪৩টি ভুয়া সিল ও একটি কম্পিউটার উদ্ধার করা হয়। সিআইডি বলছে, নিম্ন আদালতে জামিন না পাওয়া ব্যক্তিদের কন্ট্রাকের মাধ্যমে হাই কোর্ট থেকে জামিন করানোই এই চক্রের কাজ। এই চক্রের সঙ্গে জড়িত আরও ১০/১১ জনের নাম পাওয়া গেছে। তাদের ধরতে অভিযান চলছে। গতকাল রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মেট্রো দক্ষিণের বিশেষ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, ২০১৪ সালের অস্ত্র উদ্ধার সংক্রান্ত ঘটনায় রাজবাড়ী সদর থানায় একটি মামলা হয়। ওই মামলার একমাত্র আসামি পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির আঞ্চলিক কমান্ডার মো. ইয়ার আলী ওরফে ইয়াদ আলী ওরফে খোরশেদ ওরফে বিল্লাল। পরে তার বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। আসামি নিম্ন আদালতে জামিন না পাওয়ায় প্রতারক চক্র অ্যাডভোকেট মুসরোজ ঝর্ণা সাথীর মাধ্যমে মামলার ভুয়া এজাহার, জব্দ তালিকা ও চার্জশিট জালিয়াতির মাধ্যমে নতুনভাবে তৈরি করে হাই কোর্টে জামিনের আবেদন করেন।

 ২০১৬ সালের জুলাইয়ে জামিন আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাই কোর্টের আপিল আদালত আসামি ইয়ার আলীকে ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেয়। পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ফরহাদ আহমেদ মামলার মূল কাগজপত্র যাচাই করতে গেলে জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ে। এরপর এ বিষয়ে ২০১৬ সালের অক্টোবরে শাহবাগ থানায় একটি মামলা করেন হাই কোর্ট বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার। এই মামলায় অ্যাডভোকেট মুসরোজ ঝর্ণা সাথী ও তার সহযোগী শাহিনুর রহমানকে আসামি করা হয়। পরে ওই মামলায় তাদের অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেয় পুলিশ। আদালত মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দেয়। সিআইডি তদন্তে নেমে চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি অ্যাডভোকেট সাথীর সহকারী মো. হারুন-অর-রশিদকে গ্রেফতার করে। তাকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে জালিয়াতির পুরো বিষয়টি উঠে আসে। এরপর তিনি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তার দেওয়া তথ্যমতে দেলোয়ার, রায়হান ও শামীমকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানিয়েছে, তারা এ পর্যন্ত কাগজপত্র জালিয়াতি করে ৫০ জনের বেশি আসামিকে হাই কোর্ট থেকে জামিন করিয়ে দিয়েছে। চরমপন্থি নেতা ইয়ার আলীকে জামিনের জন্য তারা ৫ লাখ টাকা নিয়েছিলেন বলে স্বীকার করেছেন। সিআইডি কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান আরও বলেন, গ্রেফতার সবাই বিভিন্ন সময় উচ্চ আদালতে বিভিন্ন আইনজীবীর সহকারী ছিলেন। আসামি অ্যাডভোকেট মুসরোজ ঝর্ণা সাথী বর্তমানে জামিনে রয়েছেন এবং চরমপন্থি নেতা ইয়ার আলী ওই মামলায় যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্ত হয়ে জেলে আছেন। এই চক্রের সদস্যরা দেশের বিভিন্ন জেলায় সক্রিয় রয়েছেন। তারা নিম্ন আদালতে জামিন না পাওয়া ব্যক্তিদের খুঁজে বের করেন। পরে আসামিদের জামিনের ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য মোটা অঙ্কের টাকায় চুক্তিবদ্ধ হন।

সর্বশেষ খবর