বৃহস্পতিবার, ২ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনায় সিঙ্গাপুরে অচেতন অবস্থায় বাবা হলেন বাংলাদেশি

প্রতিদিন ডেস্ক

সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে অচেতন রয়েছেন বাবা। অথচ এ সময়ই তিনি প্রথম হয়েছেন সন্তানের বাবা। বাংলাদেশের হাসপাতালে জন্ম নিয়েছে ফুটফুটে ছেলে সন্তান। অচেতন থাকায় বাবার কানে এখনো এ সংবাদ পৌঁছানো যায়নি। খবর : বিডিনিউজের। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে ঠাঁই হয়েছে ৩৯ বছর বাংলাদেশি বাবার। কভিড-১৯ থেকে মুক্ত হলেও তিনি সংকটাপন্ন অবস্থায় অচেতন হয়ে পড়ে আছেন হাসপাতাল শয্যায়। এরই মধ্যে গত সোমবার বাংলাদেশের একটি হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তার স্ত্রী জন্ম দেন ছেলে সন্তানের। দুই বছরের বিবাহিত জীবনে এটি তাদের প্রথম সন্তান। দুই মাস আগে ফেব্রুয়ারির প্রথমদিকে ওই বাংলাদেশি বাবার (শ্রমিক) দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। তিনি ছিলেন দেশটিতে এই ভাইরাসে আক্রান্ত ৪২তম ব্যক্তি। মঙ্গলবার এক ফেসবুক পোস্টে সিঙ্গাপুরের মাইগ্রেন্ট ওয়ার্কার্স সেন্টার এমডব্লিউসি জানিয়েছে, কভিড-১৯ থেকে সুস্থ হওয়ার পর কিছুদিন আগে তাকে দেশটির ন্যাশনাল সেন্টার ফর ইনফেকশাস ডিজিজ থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এরপর থেকে সরকারি একটি হাসপাতালের আইসিইউতে তার চিকিৎসা চলছে। এর আগে বাংলাদেশের হাইকমিশন জানিয়েছিল, নতুন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আগে থেকেই ওই শ্রমিকের শ্বাসকষ্ট, কিডনি সমস্যা এবং নিউমোনিয়া ছিল। এমডব্লিউসির ফেসবুক পোস্টে বলা হয়েছে, ‘তার (বাবার) অবস্থা এখনো সংকটাপন্ন, কিন্তু সাম্প্রতিক এই খবরে (সন্তান জন্মের) আমরা উৎসাহিত হয়েছি এবং আবারও সবাইকে তার জন্য প্রার্থনা করার আহ্বান জানাচ্ছি।’ আক্রান্ত বাংলাদেশি ওই ব্যক্তির স্ত্রীর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন একটি অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা দীপা স্বামীনাথন।

গত মাসের শুরুর দিকে তিনি এই দম্পতির জন্য অনুদান এবং নবজাতকের জন্য নতুন কাপড়, ডায়াপার, দুধের বোতল সংগ্রহ করেছিলেন। দীপাও মায়ের অনুমতি নিয়ে নবজাতকের একটি ছবি মঙ্গলবার ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। সন্তান এবং মা দুজনই সুস্থ আছেন জানিয়ে এই অধিকারকর্মী লিখেছেন, ‘আসুন আমরা সবাই মিলে ছোট্ট এই শিশুটির জন্য প্রার্থনা করি, যেন সে শিগগিরই তার সুস্থ, সবল বাবার সান্নিধ্য পায়।’ পারিবারিক নিয়মেই জন্মের সাত দিন পর শিশুটির নাম রাখা হবে বলে জানিয়েছেন দীপা। গত মাসে দ্য স্ট্রেইট টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশি ওই ব্যক্তির স্ত্রী জানিয়েছিলেন, স্বামীর সঙ্গে তার সর্বশেষ গত বছর জুন মাসে  দেখা হয়েছিল। প্রায় দশ বছর ধরে সিঙ্গাপুরে কর্মরত এই নারীর স্বামীই ওই দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম বাংলাদেশি। এরপর আরও চারজন বাংলাদেশি আক্রান্ত হলেও তারা সবাই সুস্থ হয়ে হাসপাতাল  ছেড়েছেন।

সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এর আগে জানিয়েছিল, ১ ফেব্রুয়ারি ওই ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাসের প্রাথমিক কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। ৩  ফেব্রুয়ারি তিনি একটি ক্লিনিকে এবং ৫ ফেব্রুয়ারি চ্যাংগি জেনারেল হাসপাতালে যান। এরপর ৭ ফেব্রুয়ারি বেদক পলিক্লিনিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাকে চ্যাংগি হাসপাতালের আইসিইউতে নেওয়া হয়। ওই বাংলাদেশি যে প্রতিষ্ঠানের কর্মী, সেই ওয়াইকে ইনোভেশনের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, পরিবারটিকে আরও ১৮০০ সিঙ্গাপুর ডলার সহায়তা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। এর আগে এই প্রতিষ্ঠান, এমডব্লিউসি এবং ওই শ্রমিকের আবাসস্থল মিনি এনভায়রনমেন্ট সার্ভিসেস মিলে ১০ হাজার ডলার বাংলাদেশে পরিবারের কাছে পাঠিয়েছে। 

সর্বশেষ খবর