বুধবার, ২০ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

ঢাকায় মাইক্রোবায়োলজি কাউন্সিল স্থাপনের সংকল্প

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

ভবিষ্যতে করোনাভাইরাসের মতো ভয়ঙ্কর অদৃশ্য শত্রুকে যথাযথভাবে মোকাবিলায় বিজ্ঞানভিত্তিক পলিসি তৈরিতে সরকারকে সহায়তার জন্য ‘বাংলাদেশ মাইক্রোবায়োলজি কাউন্সিল’ স্থাপনে দেশ-বিদেশের স্বনামধন্য অণুজীববিজ্ঞানীরা (মাইক্রোবায়োলজিস্ট) একমত পোষণ করেছেন। ৯ মে এক ভার্চুয়াল সভায় ইউএসএ, কানাডা, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, সৌদি আরব, কাতার ও বাংলাদেশ থেকে ১৬০ জনের বেশি অণুজীববিজ্ঞানী অংশ নিয়ে দীর্ঘ চার ঘণ্টা আলোচনা-পর্যালোচনার পর প্রিয় মাতৃভূমির প্রতি দায়বদ্ধতা ঘোচাতে এমন সংকল্প ব্যক্ত করেন। চলমান পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ণ এই জুম সভার বিস্তারিত তথ্য ১৮ মে নিউইয়র্কে এ সংবাদদাতাকে জানান যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা নোভার্টিস ফার্মাসিউটিক্যালের বিজ্ঞানী ড. সুবর্ণা খান। উল্লেখ্য, এ সভার প্রেক্ষাপট উপস্থাপন করে স্বাগত বক্তব্য দেন বিজ্ঞানী ড. সুবর্ণা খান। সঞ্চালনায় ছিলেন ভার্জিনিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ড. পারভেজ খান। ইউনিভার্সিটি অব ফ্লোরিডার ইমার্জিং প্যাথোজেন ইনস্টিটিউটের গবেষক ড. মোহাম্মদ হারুন-অর-রশিদ তার প্রতিষ্ঠানে কভিড-১৯ পরীক্ষার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রথম ব্যাচের উদ্যোগে এই জুম সভার আয়োজন করা হয়। মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের বর্তমান ছাত্র, শিক্ষক, অ্যালামনাই ও পেশাদার মাইক্রোবায়োলজিস্টদের একত্র করার উদ্দেশ্যে এ আলোচনায় উঠে আসে বাংলাদেশে কভিড-১৯ মোকাবিলায় নানা মত, নতুন আইডিয়া ও কর্মপরিকল্পনা। বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায় শুরু হয়ে দীর্ঘ এ আলোচনায় মূলত করোনার মতো ভয়ঙ্কর রোগের দ্রুত সংক্রমণ নিয়ে খোলামেলা কথা হয় নিজ নিজ অভিজ্ঞতার আলোকে। আলোচনার প্রথম পর্বে ১৭ জন বিভিন্ন বিষয়ে তাদের মত তুলে ধরেন। নানা লেভেলে মাইক্রোবায়োলজিস্টদের করোনা মোকাবিলায় পদক্ষেপগুলো উল্লেখ করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান  ড. সাবিতা রিজওয়ানা রহমান, শিক্ষক ড. আনোয়ারা বেগম, ড. সংগীতা রহমান, ড. মোজাম্মেল হক এবং যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান ড. ইকবাল কবির জাহিদ বিশ্ববিদ্যালয় এবং সংশ্লিষ্ট মাইক্রোবায়োলজি বিভাগসমূহের কাজ তুলে ধরেন। বাংলাদেশ সোসাইটি অব মাইক্রোবায়োলজিস্টের সাধারণ সম্পাদক ড. আনোয়ারা বেগম তার সংগঠনের কার্যক্রম উপস্থাপন করেন। আইসিডিডিআরবির ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান ড. মো. মুস্তাফিজুর রহমান জানান কীভাবে কভিড-১৯ মোকাবিলায় মাইক্রোবায়োলজিস্টরা সাহায্য  করতে পারে। বায়োডিজাইন ইঞ্জিনিয়ারিং, ইউএসএর গবেষক  ড. মাসমুদুর রহমান, ইন্ট্যাক্ট জিনোমিকস, ইউএসএর গবেষক ড. মো. নুরুল ইসলাম, এবোট ল্যাবরেটরিজ, ইউএসএ গবেষক  ড. খন্দকার আল জায়েদ সিদ্দিকী ও ইনডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. সরোয়ার হোসেন গবেষণা ও কলাবোরেশনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তারা কভিড-১৯-এর মতো ইনফেকশাস রোগসহ  কীভাবে নতুন নতুন ইনফেকশাস রোগ প্রতিরোধ করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা করেন।

 বেশ কয়েকজন অ্যালামনাই  অ্যাডভোকেসি স্ট্র্যাটেজি ও কলাবোরেশনের সুযোগের কথা তুলে ধরেন। জনস্বাস্থ্য সংকট মোকাবিলা বিষয়ে আলোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক ড. শাহনুর হোসেইন, আইসিডিডিআরবির ভাইরোলজির গবেষক মুনতাসির আলম, ইউএসএআইডির প্রজেক্ট ম্যানেজার সরদার তানজীর হোসেন, বাংলাদেশ পুলিশের এএসপি নাজিজা রহমান, জেনারেল ফার্মাসিউটিক্যালসের মনোজিৎ রায় ও ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসের গবেষক ড. হাসান জাকির।

করোনা সেন্টারের টেস্টিং ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ করা বিকন ফার্মার রাইসুল ইসলাম তার অভিজ্ঞতার কথা বলেন। বক্তারা বলেন, বিভিন্ন এলাকা ও মেডিকেল কলেজ থেকে নমুনা সংগ্রহের জন্য টেকনোলজিস্টদের তারা প্রশিক্ষণ প্রদান করছে। এসব স্বেচ্ছাসেবী নিঃস্বার্থভাবে জীবনের মায়া ত্যাগ করে এসব কাজ করছেন। এ সময় ঢাবিসহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটদের করোনা মোকাবিলার অবদানকে স্বীকৃতি জানানো প্রয়োজন বলে মন্তব্য করা হয়। স্বাস্থ্য অধিদফতর মাইক্রোবায়োলজিস্টদের এ স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রমকে স্বীকৃতি দিয়ে বাংলাদেশ সোসাইটি অব মাইক্রোবায়োলজিস্টকে (বিএসএম) পত্র দিয়েছে। উল্লেখ্য, এমন মহামারীর সময়ে স্বেচ্ছাসেবার ডাকে সাড়া দেওয়ার জন্য আরও অনেক মাইক্রোবায়োলজিস্ট এ কাজে নিযুক্ত হওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে বলেও উল্লেখ করা হয়।

সভায় অংশগ্রহণকারীরা কভিড-১৯ মোকাবিলায় ও ভবিষ্যতের জনস্বাস্থ্য সংকটে একসঙ্গে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন। তবে অনেকে হতাশার সঙ্গে উল্লেখ করেন যে, সরকার এখনো মাইক্রোবায়োলজিস্টদের যথেষ্ট স্বীকৃতি দিতে পিছিয়ে আছে। বৈজ্ঞানিক পলিসি তৈরিতে সরকারকে সহায়তা করার জন্য ও স্বাস্থ্য সংকট মোকাবিলায় যথাযথ ভূমিকা পালনের নিমিত্তে অদূর ভবিষ্যতে ‘বাংলাদেশ মাইক্রোবায়োলজি কাউন্সিল’ স্থাপনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। কভিড মোকাবিলায় বিভিন্ন বায়োসেইফটি ট্রেনিং মডিউল তৈরি, স্বেচ্ছাসেবীদের বায়োসেইফটি প্রশিক্ষণ প্রদান করার সিদ্ধান্তও গৃহীত হয়। পাশাপাশি গার্মেন্ট, প্রশাসন, পুলিশ, সাংবাদিক ও করপোরেট হাউসগুলোকে সাধারণ পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে প্রশিক্ষণের পরিকল্পনাও গুরুত্ব পায় এ সভায়।

সভাকে মাইক্রোবায়োলজিস্টদের জন্য একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হিসেবে অভিহিত করা যায়। যথাযথ মিশন, ভিশন, কর্মদক্ষতা ও নেতৃত্বের মাধ্যমে লক্ষ্য অর্জন করা যাবে বলে আশাবাদ প্রকাশ করা হয়।

সর্বশেষ খবর