শুক্রবার, ৫ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

অনাকাক্সিক্ষত হলেও জুনে পোশাকশিল্পে শ্রমিক ছাঁটাই হবে

------------- ড. রুবানা হক

নিজস্ব প্রতিবেদক

মহামারী করোনাভাইরাস সংকটের মধ্যে অনাকাক্সিক্ষত হলেও চলতি জুনেই দেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাকশিল্পে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দিয়েছেন বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক। তিনি বলেছেন, ঈদের ছুটির পর পোশাকশিল্পে যে শ্রমিক ছাঁটাই হচ্ছে, তা অনাকাক্সিক্ষত বাস্তবতা। করোনার কারণে ৫৫ শতাংশ সক্ষমতা নিয়ে উৎপাদন চালাতে হলে কারখানাগুলোর পক্ষে শ্রমিক ছাঁটাই ছাড়া উপায় থাকবে না। এটি অনাকাক্সিক্ষত বাস্তবতা, কিন্তু করার কিছু নেই। গতকাল অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ড. রুবানা হক। এতে পোশাক শ্রমিকদের করোনাভাইরাস শনাক্তে গাজীপুরের চন্দ্রায় বিজিএমইএ স্থাপিত ডা. ফরিদা হক মেমোরিয়াল ইব্রাহিম জেনারেল হাসপাতালে আধুনিক পিসিআর ল্যাব উদ্বোধন করা হয়। এ সময় অনলাইনে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্শি, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, এফবিসিসিআই ও বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, বিজিএমইএর আরেক সাবেক সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব কে এম আবদুস সালাম, বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএর সাবেক সভাপতি মতিন চৌধুরী, ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি এ কে আজাদ খান প্রমুখ। গাজীপুরের চন্দ্রায় স্থাপিত ওই ল্যাবে প্রতিদিন ৪০০ নমুনা পরীক্ষা করা হবে। এ ছাড়া টঙ্গী ও নারায়ণগঞ্জে পিসিআর ল্যাব স্থাপনের কাজ চলছে বলে জানিয়েছে বিজিএমইএ। সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএর সভাপতি ড. রুবানা হক বলেন, করোনার কারণে মার্চ থেকে মে পর্যন্ত ক্রয়াদেশ বাতিল বা স্থগিত হওয়ায় পোশাক খাতে ৫০০ কোটি ডলার ক্ষতির ধাক্কা এসেছে। প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এপ্রিল ও মে মাসে যেসব কারখানা শ্রমিক ছাঁটাই করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে বিজিএমইএ।

ছাঁটাই অথবা কাজ দেওয়া এ দুটিই করতে হয় উদ্যোক্তাদের। শ্রমিকদের মজুরি দেওয়ার জন্য সরকারের কাছ থেকে বড় একটা সহায়তা পেয়েছিলেন মালিকরা। সেটি জুন মাসে শেষ হবে। তবে ৫৫ শতাংশ সক্ষমতায় কারখানা চালিয়ে শতভাগ কর্মী রাখা উদ্যোক্তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, দুই হাজার ২৭৪টি কারখানার মধ্যে এক হাজার ৯২৬টি চালু রয়েছে। বাকিগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। ৪৬টি কারখানার ১৮ হাজার শ্রমিকের কয়েক মাসের বেতন বাকি রয়েছে। এগুলো দেওয়া হচ্ছে। তবে কিছু প্রতিষ্ঠান ঈদের আগে বোনাস দেয়নি। তারা আগামী ছয় মাসের মধ্যে পর্যায়ক্রমে বোনাস দিয়ে দেবে। আরও বেশি কারখানার শ্রমিকদের করোনায় আক্রান্তের আশঙ্কা করেছিল বিজিএমইএ। ৩ জুন রাত পর্যন্ত ২৬৪ জন পোশাক শ্রমিক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের সবাইকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসার সব ব্যয় বহন করছে মালিকপক্ষ।

ড. রুবানা হক বলেন, ‘করোনায় ৪২ হাজার কোটি টাকার ধাক্কা খাবে পোশাক খাত। এ বছর পোশাক খাত থেকে রপ্তানি আয় হবে ২৩ বিলিয়ন ডলার। করোনায় স্থগিত হওয়া ৩ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে ২৬ ভাগ অর্ডার পুনরায় ফিরে পেয়েছি। করোনা মোকাবিলায় এখন মানুষ সুস্বাস্থ্যের প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছে বেশি। পোশাকে নয়। ফলে শতকরা ৫৫ শতাংশ অর্ডার কমে যাচ্ছে। চীন থেকে ৫৫ ভাগ বিনিয়োগ তুলে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশ থেকে তুলে নিয়েছে দুই শতাংশ। করোনার কারণে পোশাক খাতে অনেক ছাঁটাই হবে।’

এর আগে সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্শি বলেন, ‘বিজিএমইএ গার্মেন্ট সেক্টরকে প্রতিনিধিত্ব করছে। এই কাজের সঙ্গে লাখ লাখ শ্রমিক জড়িত। তাই তাদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করাটাও আমাদের দায়িত্ব। তাই যারা এই ল্যাব প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করেছেন, তাদের ধন্যবাদ। যত বেশি নমুনা সংগ্রহ করা হবে তত বেশি শনাক্ত হবে এবং তত দ্রুত চিকিৎসা করে সুস্থ করে তোলা সম্ভব হবে।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক পোশাকশিল্প মালিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘করোনা পরীক্ষা না করালে অনেকে আক্রান্ত হবেন। তাতে শিল্প চালানো মুশকিল হয়ে যাবে। তাই প্রয়োজন হলে আরও ল্যাব স্থাপন করুন। আক্রান্ত রোগীকে রাখার জন্য কোয়ারেন্টাইন ও আইসোলেশন ইউনিট করুন।’

প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, ল্যাব স্থাপনের পাশাপাশি আইসোলেশনের ব্যবস্থা করতে হবে। বিজিএমইএর সদস্য বড় কারখানার অনেক জায়গা রয়েছে। তারা নিজেদের শ্রমিকদের জন্য আইসোলেশন ইউনিট করতে পারে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বেশি বেশি নমুনা পরীক্ষার মাধ্যমে রোগী শনাক্তকরণ, রোগীর সংস্পর্শ নিরূপণ এবং শনাক্তকৃত রোগীকে যথাযথভাবে সেবা দেওয়া প্রয়োজন। আশা করি, বিজিএমইএর ল্যাব পোশাক শ্রমিক ও তাদের পরিবার এবং দেশবাসীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আমি মনে করি সামাজিক দূরত্বের চেয়ে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখাটাই গুরুত্বপূর্ণ। কারখানায় যারা শনাক্ত হচ্ছেন, নিয়মিত তাদের খোঁজখবর নিতে হবে মালিকদের।’

 

সর্বশেষ খবর