মঙ্গলবার, ৯ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনা উপসর্গ নিয়ে ৩৫ মৃত্যু

ঢাকা মেডিকেলে ২১, বিভিন্ন জেলায় আরও ১৪ জন

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ২১ জন মারা গেছেন। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া, গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্টের মতো করোনা উপসর্গ নিয়ে গতকাল একজন মুক্তিযোদ্ধসহ আরও ১৪ জন মারা গেছেন। সব মিলে গতকাল ৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে নারায়ণগঞ্জে একজন, পটুয়াখালীতে একজন, চাঁদপুরে পাঁচজন, বগুড়ার একজন, পঞ্চগড়ে একজন, মাদারীপুরে একজন, খুলনায় তিনজন ও ফরিদপুরে একজন রয়েছেন। সংশ্লিষ্টদের বাড়িঘরও লকডাউন করেছে প্রশাসন। করোনা সন্দেহে পরিবারের সদস্যদের নমুনা সংগ্রহ করাও হচ্ছে। অনেককেই হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।

ঢাকা মেডিকেলে ২১ জনের মৃত্যু : ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে রবিবার বিকাল থেকে সোমবার বিকাল পর্যন্ত ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে পাঁচজনের করোনা পজিটিভ ছিল। হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, মৃত্যু ব্যক্তিরা হলেন, নুরুল ইসলাম (৬৩), সম্পা (৩১), শফিকুল ইসলাম (৭২), মজিবুর রহমান (৫৩) ও শাহজাহান কবীর (৭২), আবদুল মান্নান (৬০), আবদুস সামাদ (৭০), শফিউদ্দিন (৭২), ইউনুস (৬০), রিপা (২৭), নুর আলম (৭৫), এ এফ এম মোজাম্মেল হক (৫৫), মতি মোল্লা (৬৫), হাসান বানু (৭০), নাজির উল্লাহ (৬০), রিনু বেগম (৩৪), আইয়ুব আলী (৬০), আলী আহম্মেদ (৯০), হাজী তাহের (৬২), সিরাজুল (৭০) ও নাজির আহম্মেদ (৪৭)।

জেলায় জেলায় ১৪ মৃত্যু : আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যানুযায়ী- রবিবার রাতে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের মাহমুদাবাদ এলাকায় জ্বর-শ্বাসকষ্ট নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা আবদুল সালাম (৬৫) মৃত্যুবরণ করেছেন।

পটুয়াখালীতে করোনা উপসর্গ জ্বর শ্বাসকষ্ট নিয়ে জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজন মারা গেছেন। গতকাল সকালে আইসোলেশন ওয়ার্ডে তার মৃত্যু হয়েছে। শহরের পুরান বাজারের আবদুল লতিফ (৪২) শনিবার জ্বর-শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মো. কামরুজ্জামান জানান, জ্বর সঙ্গে শ্বাসকষ্ট নিয়ে দুই দিন আগে হাসপাতালে এলে তাকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। হঠাৎ শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় সকাল ৮টায় তিনি মারা যান। তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।

করোনা উপসর্গ নিয়ে চাঁদপুরে এক দিনে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে তিনজন হাজীগঞ্জ উপজেলার, অপর দুজন সদর উপজেলার। চাঁদপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা সুজাউদ্দৌলা জানান, হাসপাতালের আইসোলেশনে এক বৃদ্ধ (৬৫) শ্বাসকষ্ট নিয়ে রবিবার দিবাগত রাত সোয়া ৯টায় মারা যান। পরে তার করোনা নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ওই দিন দুপুর ১টায় শহরের এক ব্যক্তির (৪৫) শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। চাঁদপুর সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।

হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শোয়েব আহমেদ জানান, গতকাল সকাল ৭টায় হাজীগঞ্জে ৫৫ বছর বয়সের এক ব্যক্তি শ্বাসকষ্ট নিয়ে নিজ বাড়িতে মারা যান। আগের দিন রবিবার রাত ১১টায় ৬৫ বছর বয়সের এক ব্যক্তি ও রাত ২টায় ৪৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তি করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যান। পরীক্ষার জন্য তাদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।

বগুড়ার জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ধুনট উপজেলার ভান্ডারবাড়ী এলাকার রফিকুল ইসলাম (৮৩)। তিনি ৭ জুন শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। রবিবার রাত সাড়ে ৮টায় তিনি মারা যান। রাতেই কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবীরা লাশ দাফন করে।

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় বেগম (৫০) নামে এক নারী জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। গতকাল দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ওই নারী উপজেলার দর্জিপাড়া এলাকার মজিবর রহমানের স্ত্রী।

মাদারীপুরে করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র রফিকুল ইসলাম সুমন মারা গেছেন। জানা গেছে, রফিকুল ইসলাম সুমনের কয়েক দিন ধরে জ¦র সর্দি ছিলো। রবিবার তার করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা প্রদান করা হয়। রবিবার রাতেই মাদারীপুর পৌরসভার পানিছত্র এলাকায় তিনি মারা যান। তিনি ডুয়েটে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে এমএসসি কোর্সে অধ্যয়নরত ছিলেন। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী প্রোগামার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

খুলনায় করোনা উপসর্গ নিয়ে এক রাতে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। রবিবার রাত পৌনে ১২টা থেকে গতকাল ভোর ৬টার মধ্যে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফ্লু কর্নারে তাদের মৃত্যু হয়। জানা গেছে, খুলনা নগরের এক বৃদ্ধ (৬৫) রবিবার সকালে করোনায় আক্রান্ত সন্দেহে এ হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে ফ্লু কর্নারে নেওয়া হয়। সেখানে তিনি গতকাল ভোরে মারা যান। এ ছাড়া নগরের একটি মেয়ে শিশু (১২) রবিবার রাত ১১টার দিকে জ্বর ও কাশি নিয়ে ভর্তি হয়। রাত ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে তার মৃত্যু হয়। এ ছাড়া সাতক্ষীরা জেলার পাটকেলঘাটার এক তরুণ (২২) দুদিন ধরে জ্বর ও কাশি নিয়ে ফ্লু কর্নারে ভর্তি ছিলেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রবিবার রাতে তিনি মারা যান। করোনা পরীক্ষার জন্য তিনজনেরই নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ফরিদপুর সদরে গলাব্যথা, সর্দি-কাশিসহ করোনাভাইরাসে সংক্রমণের উপসর্গ নিয়ে এক যুবক (৩৪) মারা গেছেন। গতকাল ভোরে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান। ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মো. সাইফুর রহমান বলেন, ওই ব্যক্তি রবিবার দুপুরে হাসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার ভোরে মারা যান। তিনি করোনাভাইরাসে সংক্রমিত ছিলেন কিনা জানতে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর