রবিবার, ২১ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

পজিটিভ সনদ বিক্রি করছে প্রতারক চক্র

কিনছেন সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী

আলী আজম

অনৈতিক ফায়দা লুটতে মহামারী করোনাভাইরাসের নেগেটিভ রিপোর্টের পাশাপাশি পজিটিভ রিপোর্টও বিক্রি হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনা আক্রান্ত না হয়েও ভাইরাসের পজিটিভ সনদ নিচ্ছে। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রতারক চক্র জাল করোনা সনদ বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। সম্প্রতি পুলিশ ও র‌্যাবের হাতে এসব প্রতারক চক্রের বেশ কয়েকজন ধরা পড়ে। তাদের কর্মকান্ডে রীতিমত হতবাক স্বয়ং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, চলতি মাসের শুরু থেকে মহামারী করোনাভাইরাসের জাল সার্টিফিকেটের জমজমাট ব্যবসা চলছে। গত এক সপ্তাহে করোনার সার্টিফিকেট জাল করে এমন কয়েকটি চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয় জাল সার্টিফিকেট। গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী চক্রগুলো করোনা নেগেটিভ এবং পজিটিভ জাল সার্টিফিকেটই তৈরি করে। তবে গ্রেফতারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেটের চাহিদা বেশি। করোনা সনদ ব্যবসার মতো অনৈতিক কার্যকলাপে প্রতারকরা যুক্ত হবে এটা তারা কল্পনাও করেনি। জানা গেছে, সাধারণ চিকিৎসার জন্য এখন হাসপাতালে রোগী ভর্তি হতে গেলেই করোনা পজিটিভ বা নেগেটিভ সার্টিফিকেট চায়। তারা এই সার্টিফিকেট ছাড়া রোগী ভর্তি তো দূরের কথা অনেক সময় চিকিৎসাই দিতে চায় না। এছাড়া বাইরে কর্মস্থল, পোশাক কারখানা এবং ভ্রমণের জন্য করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট অনেকটা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। উপসর্গ ছাড়া করোনা টেস্ট করানো কঠিন। আবার তা সময় সাপেক্ষও বটে। আর এই সুযোগ নিচ্ছে প্রতারক চক্র। প্রতারক চক্র ১ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন হাসপাতাল, করোনা টেস্টিং সেন্টারের সিল, চিকিৎসকের নাম, স্বাক্ষর এবং করোনা সার্টিফিকেটের স্টাইল জাল করে ভুয়া করোনা সার্টিফিকেট দিচ্ছে। এই প্রতারকচক্র শুধু নেগেটিভ নয়, পজিটিভ সার্টিফিকেটও দিচ্ছে। এই পজিটিভ সার্টিফিকেট নিয়ে কেউ কেউ আবার অফিসে না গিয়ে বাসায় ছুটি কাটানোসহ নানা সরকারি-বেসরকারি সুবিধা নিচ্ছেন। ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে এই চক্র সক্রিয়। গত ১৫ জুন রাজধানীর মুগদা জেনারেল হাসপাতাল এলাকা থেকে করোনার জাল সার্টিফিকেট বিক্রির অভিযোগে ফজল হক, মো. শরিফ হোসেন, মো. জামশেদ ও মো. লিয়াকত আলীকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-৩ এর সদস্যরা। তাদের কাছ থেকে করোনার বেশকিছু জাল সার্টিফিকেট, দুটি কম্পিউটার, দুটি প্রিন্টার ও দুটি স্ক্যানার উদ্ধার করা হয়। ওই চক্রটি এরই মধ্যে করোনার দুই শতাধিক জাল সার্টিফিকেট বিক্রির কথা স্বীকার করেছে।এর আগে গত ৬ জুন ঢাকার অদূরে সাভারের গেন্ডা এলাকা থেকে করোনার জাল সার্টিফিকেট বিক্রির অভিযোগে আবু সাঈদ ও রাজুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারা পোশাক শ্রমিকদের কাছে করোনা নেগেটিভ ও পজিটিভ সার্টিফিকেট বিক্রি করে আসছিল। তবে পোশাক কারখানা এলাকায় জাল সার্টিফিকেটের দাম কম। সেখানে সর্বোচ্চ ১ হাজার টাকায় সার্টিফিকেট বিক্রি হচ্ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম সায়েদ জানান, পোশাক কারখানার শ্রমিকদের করোনা পজিটিভ হলে তাদের কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়।

 এ সময় তারা বেতন নাও পেতে পারেন এই ভয়ে কোনো কোনো পোশাক শ্রমিক প্রতারকদের কাছ থেকে জাল সার্টিফিকেট কিনে। আবার করোনা হলে চাকরি হারানোর ভয়ও আছে, সেক্ষেত্রে এরা নেগেটিভ সার্টিফিকেটও নিয়ে থাকে।

র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল রকিবুল হাসান জানান, জরুরি প্রয়োজনে যারা দেশের বাইরে যান তারাও এই জাল নেগেটিভ সার্টিফিকেট কিনছেন। এই জালিয়াত চক্র হাসপাতাল ও টেস্টিং সেন্টার এলাকা ছাড়াও অনলাইনে তৎপর। তারা অনলাইনে করোনা সার্টিফিকেটের নানা ধরনের অফার দেয়। এই সার্টিফিকেট জরুরি ভিত্তিতেও বিক্রি হয়। তবে দাম পড়ে বেশি। এই ধরনের চক্র শুধু ঢাকায় নয়, ঢাকার বাইরেও তৎপর।

সর্বশেষ খবর