সোমবার, ২২ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

অনিশ্চিত স্বাস্থ্যঝুঁকি হুমকিতে অর্থনীতি

------------------------- আইসিসিবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

মহামারী করোনাভাইরাস বা কভিড ১৯-এ সবচেয়ে অনিশ্চিত স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি এবং অর্থনৈতিক হুমকির তথ্য দিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স, বাংলাদেশ (আইসিসিবি)। সংগঠনটি বলেছে, বিশ্বব্যাপী মহামারী ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বজুড়ে আর্থিক বাজারগুলো হুড়োহুড়ি শুরু করে। এই মহামারীর কারণে বড় বড় প্রতিষ্ঠান এবং ব্যাংকসমূহ বৈশ্বিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে তাদের পূর্বাভাস কমিয়েছে।

গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো ত্রৈমাসিক বুলেটিনে এসব কথা বলেছে ব্যবসায়ীদের আন্তর্জাতিক সংগঠন আইসিসিবি। আইসিসিবি বলেছে, স্বল্প মেয়াদে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তরঙ্গের মতো চলমান মহামারীটিকে মোকাবিলার জন্য রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসা, লকডাউন, যোগাযোগের সীমাবদ্ধতা, ভ্রমণকে সীমাবদ্ধকরণ, নাগরিকদের বিচ্ছিন্নকরণ এবং বৃহত্তর জমায়েত বাতিল করে ভাইরাসের বিস্তারকে কমিয়ে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

 এই মহামারীর মেয়াদ দীর্ঘায়িত হলে ব্যাপক বেকারত্বের সৃষ্টি হতে পারে ও ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যর্থতা দেখা দিতে পারে। কিছু শিল্প, যেমন পর্যটন ও বিমান, অবশ্যই সমস্যার মুখোমুখি হবে। মহামারীটি এমন এক ঝুঁকি তৈরি করেছে, যার ফলে বিনিয়োগকারীরা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন। অন্যদিকে সামাজিক দূরত্বের প্রয়োজনীয়তার কারণে বহু ইভেন্ট বাতিল হয়েছে, ভ্রমণ ব্যবসা ধ্বংস হয়ে গেছে, ব্যবসা-বাণিজ্য, রেস্তোরাঁ এবং শপিং মল বন্ধ হয়ে গেছে। সংগঠনটি বলেছে, কভিড-১৯ হচ্ছে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সংকট এবং বৃহত্তম অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ, যা বিশ্ববাসী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং ১৯১৮ এর স্প্যানিশ ফ্লুর সময় মোকাাবিলা করেছিল, যেটা ১৫ মাস স্থায়ী হয়েছিল। ১৯১৮ সালের সেই ভাইরাস এখনো রয়ে গেছে মহামারী ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস হিসেবে। এ ভাইরাসে প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মৃত্যু ঘটে। বিশ্ব এত উন্নয়ন হয়েছে অথচ দুর্ভাগ্যক্রমে অদ্যাবধি স্বাস্থ্য খাত অবহেলিত রয়ে গেছে। আইসিসিবি বলেছে, করোনা মহামারীর ফলে সৃষ্ট স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক সংকট, অরক্ষিত জনগোষ্ঠীকে রক্ষা করা এবং দীর্ঘস্থায়ী পুনরুদ্ধারের মঞ্চ নির্ধারণের জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। স্বাস্থ্য সংকট অবসান হওয়ার পর উদীয়মান বাজার এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা শক্তিশালী করা, অনানুষ্ঠানিকতার দ্বারা সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা এবং শক্তিশালী ও টেকসই বৃদ্ধিকে সমর্থন করবে এমন সংস্কার বাস্তবায়ন    করা জরুরি। সংগঠনটি বিশেষজ্ঞদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, কভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবের ফলে নিম্ন আয়ের এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর ওপর বিপজ্জনক অর্থনৈতিক প্রভাব পড়বে। একই সঙ্গে উন্নত অর্থনীতি মন্দায় পিছলে যাওয়ার ফলে পণ্যগুলোর দাম হ্রাস পাবে এবং এই  দেশগুলোর রপ্তানি আয়ের ওপর বাড়তি চাপ পড়বে।

সংগঠনটি বলেছে, ভাইরাসটি বিশ্ব অর্থনীতিতে যে কী পরিমাণ  নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে তা সঠিকভাবে মূল্যায়ন করার সময় এখনো হয়নি। যেহেতু পরিস্থিতি প্রতিদিন পরিবর্তন হচ্ছে, অর্থনৈতিক অনুমানগুলো কেবল প্রভাবের মাত্রা প্রদান করতে পারে। প্রকৃত চিত্রটি প্রাদুর্ভাবের সময়কালের বিস্তার, এর স্থায়িত্বকাল এবং নীতিনির্ধারকরা কীভাবে স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি প্রশমিত করতে পদক্ষেপ নিতে পারবেন তার ওপর নির্ভর করবে। কভিড-১৯ একদিকে যেমন বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করেছে, অন্যদিকে তেমনি বিশ্ব অর্থনীতিতে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তার হুমকি। অনেক উন্নত দেশই অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঠেকাতে জরুরি পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়েছে। অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে কভিড-১৯ এ কতজন আত্রান্ত হয়েছে শুধু এটাই বিবেচ্য বিষয় নয়। এর ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির মাত্রাটাও জরুরি। করোনা-পরবর্তী পরিস্থিতিতে বিশ্ব কেমন হবে তা নিয়ে ব্যাপক অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।

আইসিসিবি বিশেষজ্ঞদের উদ্ধৃতি দিয়ে আরও বলেছে, ‘আমরা একটি নতুন বিশ্ব দেখব, যা আমাদের থেকে অনেক আলাদা এবং অজানা। বিশ্বনেতাদের মানবতাকে বাঁচাতে একত্র হতে হবে। ভবিষ্যতে এই মহামারী মোকাবিলার জন্য স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন ও ওষুধের বিকাশের জন্য আরও বেশি অর্থ বরাদ্দের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।’

সর্বশেষ খবর