শুক্রবার, ৩ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা
বেতন-ভাতা সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ

নিকটাত্মীয়ের মতো প্রজাতন্ত্রের ৭০ কাজে গ্রামপুলিশ : হাই কোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের গ্রাম পুলিশকে সরকারি চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর পদমর্যাদা দিতে এবং সে অনুযায়ী জাতীয় বেতন স্কেলে অন্তর্ভুক্ত করে তা প্রদান করতে নির্দেশ দিয়ে ঘোষণা করা রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করেছে হাই কোর্ট। রায়ে হাই কোর্ট বলেছে, সাধারণ মানুষের সবচেয়ে নিকটতম আত্মীয়ের মতো প্রজাতন্ত্রের ৭০ প্রকার কাজে সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকেন গ্রাম পুলিশ ও মহল্লাদার। রায়ে গ্রাম পুলিশের মধ্যে মহল্লাদারদের জাতীয় বেতন স্কেলের ২০তম গ্রেড এবং দফাদারদের ১৯তম গ্রেডে বেতন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে এ রায় প্রকাশ করা হয়। বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাই কোর্ট বেঞ্চ গত বছরের ১৫ ও ১৭ ডিসেম্বর এ রায় ঘোষণা করেন। এরই ধারাবাহিকতায় বিচারপতিদের স্বাক্ষর শেষে গতকাল পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশ করা হয়। ২০১৭ সালে গ্রেড অনুসারে বেতন-ভাতা পাওয়ার নির্দেশনা চেয়ে ঢাকার ধামরাইয়ের টুপিরবাড়ীর হাটকুশারা এলাকার বাসিন্দা লাল মিয়াসহ কয়েকজন গ্রাম পুলিশ সদস্য হাই কোর্টে বেশ কয়েকটি রিট দায়ের করেন। পরে ওই বছরের ৩ ডিসেম্বর রুল জারি করা হয়। আদালতে এ সংক্রান্ত পৃথক কয়েকটি রিট আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী হুমায়ুন কবির পল্লব, মো. মোজম্মেল হক, মোহাম্মদ কাওসার, মোহাম্মদ মাজেদুল কাদের ও নূর আলম সিদ্দিকী। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ওয়ায়েস আল হারুনী, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইলিন ইমন সাহা, শায়রা ফিরোজ ও মাহফুজুর রহমান লিখন।

রায়ে বলা হয়, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩১ মোতাবেক আইনানুযায়ী কোনো ব্যক্তিকে তার ন্যায্য অধিকার থেকে তথা ন্যায্য প্রাপ্যতা থেকে তথা ন্যায্য প্রত্যাশা থেকে তথা আইনসম্মত অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যায় না। বর্তমান মোকাদ্দমায় দরখাস্তকারীরা (গ্রাম পুলিশ)-সহ সব মহল্লাদার ও দফাদারদের ন্যায্য অধিকার বিধিমালা-২০১১ অনুযায়ী বেতন-ভাতাদি পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু প্রতিপক্ষ (সরকার) স্পষ্টত দরখাস্তকারীরা-সহ সব মহল্লাদার ও দফাদারদের ন্যায্য অধিকার থেকে বেআইনিভাবে দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত করে আসছে।

রায়ে আরও বলা হয়, ২০১১ সালের ২ জুন তারিখের পর থেকে স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) কর্মচারী চাকরি বিধিমালা-২০১১ বহির্ভূতভাবে মহল্লাদার ও দফাদারের যে কোনো নিয়োগ অবৈধ ও বেআইনি মর্মে গণ্য হবে। ওই তারিখের পর থেকে বিধিমালা ২০১১ বহির্ভূত যে কোনো নিয়োগ আপনা-আপনি বাতিল হবে।

রিটকারীদের অন্যতম আইনজীবী হুমায়ুন কবির পল্লব সাংবাদিকদের বলেন, ব্রিটিশ আমল থেকে গ্রাম পুলিশ বাহিনী বিভিন্ন আইনের অধীনে কাজ করে আসছে। সর্বশেষ ২০০৯ সালের স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইনের অধীনে তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ আইনের অধীনে ২০১৫ সালে স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) গ্রাম পুলিশ বাহিনীর গঠন, প্রশিক্ষণ, শৃঙ্খলা ও চাকরির শর্তাবলী সম্পর্কিত বিধিমালা তৈরি করে। কিন্তু এ বিধিতে তাদের কোনো শ্রেণি নির্ধারণ করা হয়নি। এদিকে এক দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৮ সালে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় গ্রাম পুলিশদের চতুর্থ শ্রেণির স্কেল নির্ধারণে অর্থ বিভাগকে চিঠি দেয়। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্ত না পেয়ে পরবর্তী সময়ে তারা হাই কোর্টে রিটটি দায়ের করে।

সর্বশেষ খবর