বৃহস্পতিবার, ২৩ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা
শাজাহান সিরাজের স্মরণসভায় বক্তারা

ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ বিনির্মাণে একাত্তরের মতো ঐক্য চাই

নিজস্ব প্রতিবেদক

সদ্য প্রয়াত স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠকারী শাজাহান সিরাজের স্মরণসভায় বক্তারা বলেছেন, ‘ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ বিনির্মাণে ১৯৭১ সালের মতো আমাদের এখন ঐক্য সৃষ্টি করতে হবে। শাজাহান সিরাজকে আমরা তাঁর প্রাপ্য মর্যাদা দিতে পারিনি। তিনি যে স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক দেশ চেয়েছিলেন, সেই দেশও প্রতিষ্ঠিত হয়নি।’

গতকাল বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট রিসার্চ অ্যান্ড কমিউনিকেশন-বিএনআরসির উদ্যোগে ‘স্বায়ত্তশাসনের সংগ্রামকে স্বাধীনতাযুদ্ধের রূপান্তরে শাজাহান সিরাজের ভূমিকা’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভা হয়। সাবেক এমপি জহিরউদ্দিন স্বপনের পরিচালনায় সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ডাকসুর সাবেক ভিপি ও জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম নেতা নূরে আলম সিদ্দিকী, বাসদ সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমদ, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী প্রমুখ এতে বক্তব্য দেন। ১৪ জুলাই শাজাহান সিরাজ রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৭। ভার্চুয়াল আলোচনায় মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকারের ব্যর্থতায় গোটা দেশের মানুষ মৃত্যু আতঙ্কে ভুগছে। দেশের মানুষ জীবিকার চিন্তায় অস্থির হয়ে আছে। তাদের মৌলিক অধিকার ভোট দিয়ে নেতা নির্বাচন করতে পারছে না। বিনা ভোটে পার্লামেন্ট নির্বাচন হচ্ছে। কী দুর্ভাগ্য আমাদের, আজকে যারা ক্ষমতায় বসে আছে, তারা স্বাধীনতা চেতনার কথা বলে ভোট দেওয়ার অধিকার কেড়ে নিয়েছে। শাজাহান সিরাজরা এই বাংলাদেশ দেখতে চাননি। তাঁরা একটা সুখী, সমৃদ্ধ, সাধারণ মানুষ যাতে বেঁচে থাকতে পারে সেই বাংলাদেশ দেখতে চেয়েছিলেন। আজকে আমরা কী দেখছি!’

এ অবস্থার উত্তরণে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘শাজাহান সিরাজের প্রতি আমরা তখনই শ্রদ্ধা জানাতে পারব, তিনি যে বাংলাদেশ দেখতে চেয়েছিলেন সেই বাংলাদেশ যদি আমরা নির্মাণ করতে পারি। আর সেই বাংলাদেশ যদি নির্মাণ করতে চাই, তাহলে ’৭১ সালের মতো আমাদের একটা জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করতে হবে। এ ঐক্য সৃষ্টি করার মধ্য দিয়ে ওই সময়কার সত্যিকার অর্থের যে চেতনা ছিল, তা আমরা বাস্তবায়ন করতে পারব। আর সেটিই হবে শাজাহান সিরাজের প্রতি সবচেয়ে বড় শ্রদ্ধা জানানো।’

আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘শাজাহান সিরাজ সারা জীবন কী কাজ করেছেন, তা আমি জানি না। তবে স্বাধীন বাংলাদেশ যত দিন বেঁচে থাকবে, তত দিন ইতিহাস তাঁকে স্মরণে রাখবে। সেদিন বঙ্গবন্ধুকে সামনে রেখে সিরাজুল আলম খানের নির্দেশে শাজাহান সিরাজ স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেছিলেন। আজকে ৫০ বছর পরে ৭ মার্চ ঐতিহাসিক দিবস উদ্্যাপন করার সিদ্ধান্ত হয়। কেন, এই ৫০ বছর কী হয়েছে? ৩ মার্চ সারা দেশে সেদিন স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়েছিল। ২ মার্চ আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তোলন করেছিলাম। ৩ মার্চ পাকিস্তানের পতাকা পুড়িয়ে দিয়ে সারা দেশে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করতে হবে। ক্ষমতাসীন দল এখন স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃত করছে।’

নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা ছাত্রলীগের মধ্যে যারা গণতান্ত্রিক বলে পরিচিত ছিলাম, আমরা সব সময় স্বাধীনতায় বিশ্বাস করতাম। আমরা বিশ্বাস করতাম, একটা জাতীয় ম্যান্ডেট প্রয়োজন। স্বাধীনতার ডাক বঙ্গবন্ধুও যদি দেন, তাহলেও এটা বিচ্ছিন্নতাবাদে পরিণত হবে, যদি একটা নির্বাচনের ম্যান্ডেট আমরা গ্রহণ করতে না পারি। কথাটাকে টুয়িস্ট করে বললে অবিচার হবে, কথাকে টুয়িস্ট করে বললে ইতিহাসের বিকৃতি হবে। আমরা স্বাধীনতা চেয়েছিলাম মানুষের ম্যান্ডেটের মাধ্যমে, একটি নেতৃত্বের মাধ্যমে, মানুষের আনুগত্য ঘোষণার মধ্যে। একটি ম্যান্ডেটের মধ্যে সমস্ত জাতির ঐক্যের মাধ্যমে।’

 খালেকুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের টেবিলে আলোচনায় আমাদের স্বাধীনতা আসেনি। এটা ছিল জনযুদ্ধ। ফলে জনযুদ্ধে জনগণের যে ভূমিকা, তা বাদ দিলে সে ইতিহাস কখনো সম্পূর্ণ ইতিহাস হয় না। এখন গণতন্ত্রের হাল কী? গণতন্ত্র দূরে থাক, ভোটতন্ত্রও নেই! পার্লামেন্ট থেকে ইউনিয়ন কাউন্সিল পর্যন্ত প্রায় ৬৬ হাজার কথিত জনপ্রতিনিধি রাতের ভোট, টাকার জোরে, বাহুবলে, শাসনক্ষমতার দাপটে-আনুকূল্যে, প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের কারসাজিতে নির্বাচিত হয়ে যান।’

সর্বশেষ খবর