ইউএনও লাঞ্ছনা মামলায় গ্রেফতার এড়াতে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন পাবনার বেড়া পৌরসভার সাময়িক বরখাস্ত মেয়র আবদুল বাতেন। তার পলায়নে বদলে গেছে বেড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক দৃশ্যপট। তার নানা অপকর্মের ফিরিস্তি তুলে ধরে মুখ খুলতে শুরু করেছেন নির্যাতিতরা। পাবনার বেড়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমান বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, সরকারি কাজে বাধা, হুমকি এবং ইউএনও আসিফ আনাম সিদ্দিকীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করায় গত বুধবার রাতে বেড়া থানায় পেনাল কোডের ৩২৩, ৩৩২, ৩৫৩, ৩৫৫ ও ৫০৬ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়।
মামলা দায়েরের পর থেকেই আবদুল বাতেনকে গ্রেফতারে অভিযান শুরু হয়েছে। তিনি আত্মগোপন করেছেন।
এদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একটি সূত্র অভিযোগ করেছে, মামলা দায়েরের সঙ্গে সঙ্গে বেড়া থানা পুলিশের কোনো এক অফিসার আবদুল বাতেনকে বিষয়টি জানিয়ে আত্মগোপনে চলে যাওয়ার সুযোগ করে দেন। আবদুল বাতেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি শামসুল হক টুকু এমপির ভাই হওয়ায় তাকে গ্রেফতারে পুলিশের অনীহা রয়েছে। এদিকে, আবদুল বাতেন এলাকা ছাড়ার পর তার নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতার বিচার চেয়েছেন নির্যাতিতরা। তাকে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী হিসেবেও দাবি করছেন তারা।অভিযোগ উঠেছে, এক সময় জামায়াত নেতা যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমান নিজামীর ঘনিষ্ঠজন ছিলেন আবদুল বাতেন। ১৯৯৬ ও ২০০১-এর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার পক্ষে কাজও করেন তিনি। ২০০৮-এ বড়ভাই শামসুল হক টুকু এমপি ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হলে তিনি দলের ত্যাগী নেতাদের টপকে বাগিয়ে নেন বেড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ। এরপর নিজস্ব বলয় তৈরি করে কায়েম করেন ত্রাসের রাজত্ব।
জাতসাখিনী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম বলেন, আবদুল বাতেন সাহেব ২০০৬ সাল পর্যন্ত নিজামীর শুধু ঘনিষ্ঠজনই ছিলেন না, তাকে পিতার আসনে বসিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়ে তিনি আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের কোণঠাসা করে ফেলেন। জামায়াত-বিএনপির লোকজনকে ক্ষমতা দিয়ে তিনি এখানে আওয়ামী লীগ ধ্বংস করে বাতেন লীগ প্রতিষ্ঠা করেছেন।
বেড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আবদুর রশিদ দুলাল বলেন, আইনের তোয়াক্কা না করে নিজের মতো করে পৌরসভা চালাতেন আবদুল বাতেন। খবরদারি করতেন অন্যান্য সরকারি দফতরেও। নদী দখল, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, ভূমি দখল, হাটবাজারের টাকা আত্মসাৎ এমনকি তৈরি করেছেন অবৈধ নৌবন্দরও। এসব কাজে তাকে বাধা দিলেই হেনস্থা করেন সরকারি কর্মকর্তাদের। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ দলীয় নেতা-কর্মীরাও। দুদকের একাধিক মামলায় জেল খেটেও তিনি নিজেকে শোধরাতে পারেননি। বরং তার মতো লোক উপজেলা সভাপতি থাকায় আমরা অত্যাচারিত, বিব্রত হয়েছি।
তিনি আরও বলেন, শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে গত ১৪ এপ্রিল দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আবদুল বাতেনকে আওয়ামী লীগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। আমরা তার বিচার দাবি করছি।
এদিকে, তদন্তে ইউএনও লাঞ্ছিতের ঘটনার প্রমাণ মিলেছে, অপকর্মের বিচার হবে বলে জানিয়েছেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি কবীর বিন আনোয়ার।
বৃহস্পতিবার বেড়া উপজেলা পরিষদে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বেড়ার জনপ্রতিনিধি এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে তিনি জেনেছেন, আবদুল বাতেন এ এলাকায় একটি শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে রেখেছিলেন। নিজস্ব মনগড়া আইনে চালিয়েছেন এখানকার সব কার্যক্রম।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছেন। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের ফাঁসিতে ঝুলিয়েছেন। এসব ঘাপটি মেরে থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত ১২ অক্টোবর উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় নিজের বিধি বহির্ভূত সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে না পেরে ইউএনও আসিফ আনাম সিদ্দীকীকে লাঞ্ছিত করেন সদ্য বরখাস্ত হওয়া বেড়া পৌর মেয়র আবদুল বাতেন। এ ঘটনায় আবদুল বাতেনকে মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার বিভাগ।