শনিবার, ৭ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

বরিশালে গরু চুরি বেড়েছে এখনো অধরা দুর্বৃত্তরা

রাহাত খান, বরিশাল

বরিশালে গরু চুরি আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। সম্প্রতি বরিশাল নগরীর রূপাতলীর দুটি পয়েন্ট থেকে গাভী ও বাছুরসহ ছয়টি গরু এবং জেলার বানারীপাড়ার চৌয়ারীপাড়া থেকে একই ব্যক্তির ছয়টি গরু চুরি হয়। নগরীর রূপাতলী থেকে গাভী ও বাছুর চুরির দৃশ্য সিসি ক্যামেরায় রেকর্ড এবং তাদের ছবি পেয়েছে পুলিশ। তবে চোর শনাক্ত করে গ্রেফতার বা চুরি যাওয়া গরু উদ্ধার করতে পারেনি। এতে চুরি যাওয়া গরুর মালিকরা নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। অন্য গরু মালিকরা রয়েছেন আতঙ্কে। এর আগে জেলার উজিরপুর এবং গৌরনদীতে গরু চুরির সময় দুই দফায় কয়েক চোর হাতেনাতে আটক হলেও চুরি বন্ধ হয়নি। এদিকে ১ নভেম্বর সকাল সাড়ে ১১টায় নগরীর গ্যাস টারবাইন এলাকার ইকবাল হোসেনের বিদেশি জাতের বাছুরসহ গাভি চুরি করে নেয় দুর্বৃত্তরা। গরু চুরি করে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য স্থানীয় হাজী ফিলিং স্টেশনের সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়ে। এতে দেখা যায়, গরু দুটি পিকআপে উঠিয়ে বানারীপাড়ার বাইশারী নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। নতুনহাট এলাকার আরেকটি সিসি ক্যামেরায় গরু নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য ধারণ হয়। এ ঘটনায় পর দিন কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করা হয়েছে। এরপর যে পিকআপে গরু দুটি বানারীপাড়া নিয়ে যাওয়া হয় সেটির চালককে পুলিশ গ্রেফতার করে। কিন্তু চুরি যাওয়া গরু উদ্ধার এবং চোর গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। অথচ সিসি ক্যামেরায় চোরের চেহারা স্পষ্ট বোঝা যায় বলে অভিযোগ ক্ষতিগ্রস্তের। কোতোয়ালি থানার ওসি মো. নুরুল ইসলাম বলেন, গরু চুরি ঠেকাতে পুলিশের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। চুরির সময় ব্যবহৃত পিকআপ চালককে গ্রেফাতর করা হয়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেফতারে জন্য বানারীপাড়ার বাইশারী এলাকায় অভিযান চালানো হয়েছে।

 কিন্তু তাদের পাওয়া যাচ্ছে না।

এর আগে গত ১৫ অক্টোবর রাতে গেটের চেন ভেঙে বানারীপাড়ার সলিয়াবাকপুর ইউনিয়নের চৌয়ারীপাড়া গ্রামের মাহফুজুর রহমান লিটনের বিদেশিজাতের ছয়টি গরু চুরি করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় পর দিন ১৬ অক্টোবর থানায় অজ্ঞাত চোরদের নামে মামলা হলেও পুলিশ আজ পর্যন্ত চুরি যাওয়া গরু উদ্ধার কিংবা চোর গ্রেফতার করতে পারেনি।

চুরি যাওয়া গরুর মালিক মাহফুজুর রহমান লিটন বলেন, আটটি গরু নিয়ে বড় আশায় ছিলেন তিনি। কিন্তু চোর তাকে নিঃস্ব করে দিয়েছে।

গত ২২ অক্টোবর রাতে উজিরপুরের শিকারপুর গ্রামে ফারুক খানের গাভী গরু চুরি হয়। প্রতিকার না পাওয়ার আশঙ্কায় ফারুক থানা পুলিশে অভিযোগ করেননি বলে জানান তার স্বজন সৈয়দ জাহিদ আলম।

বিগত কোরবানির আগ মুহূর্তে কীর্তনখোলা নদীর তীরবর্তী নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ড রূপাতলী এলাকা থেকে স্থানীয় এসকেন্দার মুন্সির চারটি গরু ট্রলারে নিয়ে যায় চোর চক্র। ওই ঘটনায় পুলিশে অভিযোগ করা হলেও আজ পর্যন্ত গরু উদ্ধার কিংবা চোর গ্রেফতার হয়নি বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দা আল-আমিন। 

প্রায় ৩ মাস আগে উজিরপুরের জয়শ্রী এলাকায় মাঠে চড়ানো একটি গরু দিন-দুপুরে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয়দের দেওয়া খবরের ভিত্তিতে পুলিশ ওই প্রাইভেটকারসহ ঝালাকাঠীর এক চোরকে আটক করে। অন্যরা পালিয়ে যায়। গরুটি উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় মামলা হলেও চোর চক্রের হোতারা রয়েছে অক্ষত।

এর কয়েক দিন আগে প্রাইভেটকারে উঠিয়ে গরু নিয়ে পালানোর সময় দুই চোর আটক করে গৌরনদী থানা পুলিশ। এ ঘটনায় মামলা হলেও পুলিশ ওই চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেফতার করতে পারেনি।

গৌরনদী প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি আসাদুজ্জামান রিপন জানান, এক বছরে ওই উপজেলার বার্থী এলাকা থেকে অন্তত ২০টি গরু চুরি হয়েছে। একটি গরুও আজ পর্যন্ত উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। এতে অন্য গরু মালিকরা রয়েছেন আতঙ্কে।

জেলা পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, গরু চুরির ঘটনা উদ্বেগজনক। গরু চুরির বিষয়টি নিয়ে তিনি নিজে কাজ করছেন। রাত ১১টার পর কোনো এলাকা থেকে গাড়ি গেলে সেদিকে জনগণকে তীক্ষè দৃষ্টি দিতে বলা হয়েছে। গরু চুরির ঘটনায় জেলায় যে কয়টি মামলা হয়েছে সেগুলো তদন্ত করে রহস্য উদঘাটনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর