রবিবার, ৮ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা
সানেমের জরিপ

আট খাতে দ্রুত অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার সক্ষম হচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের আট খাতে দ্রুত অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার সক্ষম হচ্ছে। এ তথ্য উঠে এসেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সানেমের জরিপে। এতে দেখা গেছে, বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের হার তুলনামূলকভাবে মাঝারি ও ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোর চেয়ে বেশি। ফলে তৈরি পোশাক, টেক্সটাইল, ওষুধ, খাদ্য

প্রক্রিয়াজাতকরণ, রেস্টুরেন্ট, পাইকারি ব্যবসা, তথ্য ও যোগাযোগসহ প্রযুক্তি এবং আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো অপেক্ষাকৃত দ্রুততার সঙ্গে এই পুনরুদ্ধার অর্জনে সক্ষম হচ্ছে। গত জুলাই-সেপ্টেম্বরে সার্বিক ব্যবসা পরিস্থিতির বেশ কিছু ক্ষেত্রে দৃশ্যমান উন্নতি দেখা গিয়েছে। গতকাল সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) ও দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশন ‘কভিড নাইনটিন অ্যান্ড বিজনেস কনফিডেন্স : টুওয়ার্ডস ইকোনমিক রিকোভারি’ শীর্ষক ওয়েবিনারে ওই জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এতে করোনা মহামারীর সময় ব্যবসায় আস্থা-সংক্রান্ত জরিপের দ্বিতীয় পর্যায়ের ফলাফল তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান। বক্তব্য দেন বেসরকারি সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর, ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম খান, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম, পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. এম মাসরুর রিয়াজ, সহজ লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক মালিহা কাদির, দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশনের বাংলাদেশ প্রতিনিধি কাজী ফয়সাল বিন সিরাজ। জরিপে দেখা যায়, গত এপ্রিল-জুনের তুলনায় জুলাই-সেপ্টেম্বরের সার্বিক ব্যবসা পরিস্থিতির বেশ কিছু ক্ষেত্রে দৃশ্যমান উন্নতি দেখা গিয়েছে, যদিও ২০১৯ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বরের তুলনায় এর গতি ধীর। চামড়া, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, পাইকারি ব্যবসা, পরিবহন ও আবাসন খাতের পুনরুদ্ধার অপেক্ষাকৃত ধীরগতির। চামড়াশিল্পে ব্যবসায় আস্থার সূচক এখনো ৫০-এর নিচে, যেখানে বাকি খাতগুলোর অবস্থান ৫০ থেকে ৬০-এর মধ্যে। জরিপে অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর ৭২ শতাংশ এখনো কোনো প্রণোদনা প্যাকেজ পায়নি। প্রণোদনা প্যাকেজ না পাওয়ার পেছনে মূলত যে কারণগুলো দায়ী ছিল, যেমন কিছু খাতের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ বিদ্যমান না থাকা, অপেক্ষাকৃত লম্বা প্রক্রিয়া ও দীর্ঘসূত্রতা, ব্যাংক-সংক্রান্ত সেবা ও পর্যাপ্ত তথ্যের অভাব, সেগুলোতে দ্বিতীয় পর্যায়েও কোনো উন্নতি দেখা যায়নি।

প্রণোদনা প্যাকেজ পাওয়ার হার অনেক কম। জরিপের ৩০১টি অতি ক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মাত্র ৮ শতাংশ প্রতিষ্ঠান প্রণোদনা প্যাকেজের সুবিধা পেয়েছে, যেখানে জরিপের ১৫৭টি বড় প্রতিষ্ঠানের মধ্য প্রণোদনা প্যাকেজ পাওয়ার হার ৪১ শতাংশ। ৪৪টি মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২০ শতাংশ প্রণোদনা প্যাকেজ পেয়েছে। দুর্নীতি, দুর্বল ট্রেড লজিস্টিক, অসংগতিপূর্ণ কর ব্যবস্থা, ব্যবসায় অর্থায়নের অভাব, স্বাস্থ্য খাতে কভিডজনিত দুর্বল ব্যবস্থাপনাই এর পেছনে মূলত দায়ী। জরিপের ফলাফল তুলে ধরে সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, ব্যবসা-সংক্রান্ত খরচের পরিমাণ বাড়ছে। সব ক্ষেত্রেই কিছু উন্নতি দেখা গেলেও ব্যবসা-সংক্রান্ত খরচে সেটি বিপরীত চিত্র প্রদর্শন করছে।

ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ব্যাংকের অর্থায়নের ক্ষেত্রে বর্তমানে তারল্য সংকট নেই। কিন্তু বিভিন্ন জরিপ থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, মাত্র ৫০ শতাংশ প্রণোদনা প্যাকেজের টাকা বাজারে ছাড়া হয়েছে। বাংলাদেশ পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় ভারতসহ অন্যান্য অনেক দেশের থেকে ভালো করলেও তা সরকারের বর্তমান প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধির তুলনায় যথেষ্ট নয়।

সর্বশেষ খবর