মঙ্গলবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

অবহেলায় বগুড়ার তরুণ মুক্তিযোদ্ধার বিজয় ভাস্কর্য

আব্দুর রহমান টুলু, বগুড়া

বগুড়ায় তরুণ মুক্তিযোদ্ধার বিজয় ভাস্কর্য রয়েছে অবহেলায়। যত্ন না থাকায় মলিন হয়ে পড়েছে এটি। শহরের বনানীতে ভাস্কর্যটির স্থান হলেও বিলবোর্ডে ঢাকা পড়ে গেছে এটি। এতে করে ঢাকা পড়ে যেতে শুরু করেছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি।

বিজয় ভাস্কর্যটিতে কাঁধে বন্দুক নিয়ে এক তরুণ ডান হাত উঁচিয়ে শান্তির পায়রা মুক্ত করে দিচ্ছেন। বাঙালি যুবকের আদলে ভাস্কর্যটি নির্মাণ করা হয়। মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধে জয়লাভ করে ফেরার পর দেশের শান্তির প্রতীক হিসেবে পায়রা উড়িয়ে দেন। নির্মাণ করার সময়কাল ও প্রকৃত ভাস্কর্য শিল্পীর নাম তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি। তবে জেলার মুক্তিযোদ্ধা ও সিনিয়র সাংবাদিকরা বলছেন, ১৯৯১ সালের দিকে বিজয় ভাস্কর্যটি বগুড়া শহরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সামনে উঁচু বেদির ওপর স্থাপন করা হয়েছিল। ২০০৩ সালে বগুড়া শহরের সড়ক সম্প্রসারণ করার সময় ভাস্কর্যটি সরিয়ে জেলা শহরের বনানী বাইপাস মোড়ে স্থাপন করা হয়। ওই সালের আগ পর্যন্ত জেলা শহরের সাতমাথায় পোস্ট অফিসের সামনে এটি যতেœ রাখা হয়েছিল। বগুড়া শহরের মধ্যে থাকা তরুণ মুক্তিযোদ্ধার দৃষ্টি নন্দন ভাস্কর্য শোভা পেত। সামাজিক, সাংস্কৃতিক কর্মীরা ভাস্কর্যকে ঘিরে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করত।

কিন্তু বগুড়া শহরের প্রবেশপথ বনানী গোল চত্বর মোড়ে ভাস্কর্যটি স্থাপন করার পর এটিকে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভাঙা অবস্থায় দেখতে পান শহরের লোকজন। সাংস্কৃতিক কর্মীরা এর প্রতিবাদ জানায়। পরে বগুড়া পৌরসভা থেকে কয়েক দিন পর ভাস্কর্যটি ৭ হাজার টাকায় মেরামত করে পুনঃস্থাপন করা হয়। স্থাপনকালে ভাস্কর্যটি বাঙালি মুক্তিযোদ্ধার আদল না পেয়ে পাকিস্তানি আর্মির আদল পায়। এ নিয়ে বগুড়ার সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা আন্দোলন করলে ওই বছরই সেটি আবার সংস্কার করা হয়। কিন্তু ভাস্কর্যটি প্রথমবার নির্মাণের আদলে আর করা যায়নি। নির্মাণকালে ভাস্কর্য শিল্পীর ছোঁয়ায় নির্মাণ হয়েছিল আর পরে মেরামত করা হয়েছিল নির্মাণ শ্রমিক দিয়ে। যে কারণে আদলে কিছু পরিবর্তন হয়ে যায়। স্থাপনের পর আর যত্ন করেনি বগুড়া পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। যে স্থানে স্থাপন করা হয়েছে সেখানে এখন বিলবোর্ডে ছেঁয়ে গেছে।

আগাছা গজে, রং ফিকে হয়ে গেছে।

বগুড়ার সিনিয়র সাংবাদিক সমুদ্র হক জানান, বিজয় ভাস্কর্যটি বগুড়া পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম মন্টু ও প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা ইলিয়াস হোসেনের তত্ত্বাবধায়নে বগুড়া শহরের সাতমাথায় স্থাপন হয়েছিল। ১৯৯১ সালে ভাস্কর্য শিল্পী সুলতানুল ইসলাম বিজয় ভাস্কর্যটি ঢাকায় নির্মাণ করেন। পরে সেটি ট্রাকে করে বগুড়ায় নিয়ে এসে স্থাপন করা হয়। বগুড়া পৌরসভার প্রকৌশলী আবু জাফর মো. রেজা জানান, ভাস্কর্য শিল্পকর্মটি নতুন করে আবারও পুনঃস্থাপন করা হবে। পুরো যত্ন নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর