মঙ্গলবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা
অর্থ পাচার

অ্যাটর্নি জেনারেলের বৈঠক

নিজস্ব প্রতিবেদক

অর্থ পাচারকারী, দুর্বৃত্তদের নাম-ঠিকানার পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা, তা হাই কোর্টকে জানাতে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সভা করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। গতকাল সন্ধ্যায় নিজ কার্যালয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), দুর্নীতি দমন কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ প্রধানের প্রতিনিধিদের নিয়ে এ সভা করেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা। প্রায় দেড় ঘণ্টা সভা করার পর অ্যাটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদের বলেন, আমরা সবাই একসঙ্গে বসে ঠিক করলাম। উনারা উনাদের বক্তব্য দিয়েছেন। উনাদের কাছে এ ব্যাপারে কী কী তথ্য আছে, এটা নিয়ে উনারা বসবেন এবং লিখিতভাবে আমাদের কাছে দিয়ে যাবেন। আমরা তখন এটা হলফনামা করে আদালতকে জানাব।

অর্থ পাচার এবং সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা এগমন্ড গ্রুপের সদস্য বাংলাদেশ। চুক্তি বা শর্ত অনুযায়ী চাইলেই অর্থ পাচারকারীদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করতে পারে না জাতীয় কোনো সংস্থা। কিন্তু হাই কোর্ট অর্থ পাচারকারীদের নাম-পরিচয় জানতে চেয়েছে। এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা- জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘না, এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।’

দুদকের প্রতিনিধি হিসেবে আইনজীবী খুরশীদ আলম অ্যাটর্নি জেনারেলের সভায় অংশ নিয়েছিলেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ কয়েক দিন আগে একটি স্বতঃপ্রণোদিত রুল জারি করেছিল। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের সূত্র ধরে কানাডার বেগমপাড়ায় সরকারি কর্মচারীদের ইনভেস্টমেন্ট সম্পর্কে হাই কোর্ট বেশ কয়েকজন বিবাদীর কাছে একটি ব্যাখ্যা চেয়েছিলেন। টাকা পাচার যে হয়ে যাচ্ছে সে ব্যাপারে কী পদক্ষেপ এবং কী কী করা হয়েছে। এ ব্যাপারটা নিয়েই অ্যাটর্নি জেনারেল জানতে চেয়েছেন, কারা কী পদক্ষেপ নিয়েছে। আমরা দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষ থেকে বলেছি যে, আজকে  (সোমবার) বিকালে দুদক থেকে কাগজগুলো পেয়েছি। আশা করি কাল-পরশুর মধ্যে রেডি করে ১৭ ডিসেম্বর নির্ধারিত সময়ে নির্দেশনা মোতাবেক দাখিল করতে পারব।

অর্থ পাচারকারী ২৮ সরকারি কর্মকর্তার একটি তালিকার কথা বলা হচ্ছে। দুদক কি এ ধরনের কোনো তালিকা তৈরি করেছে? জবাবে খুরশীদ আলম খান বলেন, এই ২৮ জনের কথা মন্ত্রী মহোদয় বলে থাকতে পারেন। দুদক কেবল ২৮ জন না, অনেকের ব্যাপারে অনুসন্ধান করছে। অনেক বড় আমলা, কর্মকর্তার কাছে সম্পদ বিবরণী চাওয়া হয়েছে। যারা ক্যাসিনোর সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের ব্যাপারেও। অর্থ পাচারকারী, দুর্বৃত্তদের নাম-ঠিকানার পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা, তা জানাতে গত ২২ নভেম্বর আদেশ দিয়েছিল হাই কোর্ট।

বিভিন্ন সংবাদপত্রে অর্থ পাচার সংক্রান্ত প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখে গত ২২ নভেম্বর বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ এ আদেশ দেয়।

১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে তা স্বরাষ্ট্র সচিব, পররাষ্ট্র সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), দুর্নীতি দমন কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানকে জানাতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া প্রচলিত আইন লঙ্ঘন করে অর্থ পাচারকারী সরকারি কর্মচারী, ব্যবসায়ী, রাজনীতিক, ব্যাংক কর্মকর্তা ও অন্যদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্টদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ও আইনি কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয় রুলে।

স্বরাষ্ট্র সচিব, পররাষ্ট্র সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), দুর্নীতি দমন কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান ও ঢাকার জেলা প্রশাসককে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর