সোমবার, ১ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

কার্টুনিস্ট কিশোরের রিমান্ড আবেদন নাকচ

আদালত প্রতিবেদক

রাজধানীর রমনা থানায় করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় কারাবন্দী কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরের রিমান্ড আবেদন নাকচ করেছে আদালত। গতকাল ঢাকা মহানগর হাকিম মোহাম্মদ জসিম এ আদেশ দেন। এর আগে ২৩ ফেব্রুয়ারি এ মামলার আসামি লেখক মুশতাক আহমেদ ও কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরকে তিন দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার আবেদন করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন। রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, আহমেদ কবির কিশোর ও মুশতাক আহমেদের বিরুদ্ধে ফেসবুকে রাষ্ট্রবিরোধী ও সরকারবিরোধী বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচার ও বিভ্রান্তি ছড়ানো এবং অস্থিরতা-বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা করার অভিযোগ রয়েছে।

নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য ‘আই অ্যাম বাংলাদেশ’ ফেসবুক পেজটি পরিচালনায় জড়িতদের উদ্দেশ্য জানতে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। সেই আবেদনের ওপর গতকাল শুনানির দিন ধার্য ছিল। কিন্তু ২৫ ফেব্রুয়ারি মামলার অপর আসামি লেখক মুশতাক আহমেদ কারাবন্দী অবস্থায় মারা যান। এ ছাড়া আরেক আসামি আহমেদ কবির কিশোরকে গতকাল আদালতে হাজির করা হয়নি।

এ বিষয়ে আসামির আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া আদালতকে বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায়  তার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়েছিল। অথচ এখন আবার নতুন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেছে পুলিশ। এটা আইনের পরিপন্থী। এ ছাড়া শুনানিতে আসামিকে আদালতেও হাজির করা হয়নি। মামলার অপর আসামি মুশতাক আহমেদ কারাগারে মারা গেছেন। এই রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন বাতিল করা হোক। এ সময় আদালত রাষ্ট্রপক্ষের কাছে জানতে চান, কেন আসামিকে আজ আদালতে হাজির করা হয়নি? তখন রাষ্ট্রপক্ষ থেকে এর কোনো জবাব আদালতের কাছে  দেওয়া হয়নি। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত আহমেদ কবির কিশোরকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন নাকচ করে দেয়।

এর আগে গত বছরের মে মাসে লেখক মুশতাক আহমেদ, কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর, রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য দিদারুল ইসলাম ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক মিনহাজ মান্নানকে র?্যাব গ্রেফতার করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক কথাবার্তা ও গুজব ছড়ানোর অভিযোগে তারাসহ মোট ১১ জনের বিরুদ্ধে রাজধানীর রমনা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে র?্যাব। পরে তদন্ত করে  মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রমনা মডেল থানার এস আই মো. মহসিন সরদার আট আসমির অব্যাহতি চেয়ে তিন আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পুলিশ যে আট আসামিকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি চেয়েছে তারা হচ্ছে, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক ও বিএলআই সিকিউরিটিজের কর্ণধার মিনহাজ মান্নান, সুইডেনে থাকা সাংবাদিক তাসনিম খলিল, আলজাজিরার তথ্যচিত্রের অন্যতম চরিত্র সায়ের জুলকারনাইন ওরফে সামি, জনৈক আসিফ ইমরান, ফিলিপ শুমাখার, স্বপন ওয়াহিদ, সাহেদ আলম ও জার্মানিতে থাকা ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন। অভিযোগপত্রে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেছেন, আসামিরা পলাতক থাকায় এবং তাহাদের পূর্ণাঙ্গ নাম ঠিকানা না পাওয়ায় আপাতত তাহাদের অত্র মামলার দায় হইতে অব্যাহতি দানের প্রার্থনা করা হল। সেই তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে ১০ ফেব্রুয়ারি মামলাটি অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন। আদেশে বলা হয়, মামলার অভিযোগের বিষয়ে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল  ক্রাইম (সিটিটিসি) তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া গেল। গত ৬ জুন গ্রেফতার করা হয় ঢাকার পুঁজিবাজারের শীর্ষস্থানীয় একটি ব্রোকারেস হাউজের কর্ণধার মিনহাজ মান্নান ইমনকে। এর আগে ফেসবুকে রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারের অভিযোগে র‌্যাব-৩ এর ডিওডি মো. আবুবকর সিদ্দিক বাদী হয়ে গত বছরের ৬ মে রমনা থানায় মোট ১১ জনকে আসামি করা হয়েছিল।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, জাতির পিতা, শেখ হাসিনা ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে কটূক্তি ও আপত্তিকর প্রচারণা এবং করোনাভাইরাস নিয়ে অপপ্রচারসহ বিভিন্ন গুজব রটিয়ে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির জন্য যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে, তাদের অন্যতম শায়ের জুলকারনাইন সামি। ‘উই আর বাংলাদেশি’ পেজ থেকে রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারণার অভিযোগে অভিযুক্তদের ল্যাপটপ ও মোবাইল অনুসন্ধান করে ১১ জনের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পান গোয়েন্দারা। এ প্রেক্ষিতে তাসনিম খলিল ও সামিসহ ওই ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়।

সর্বশেষ খবর