রবিবার, ৭ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

দিনাজপুরের হেয়ার ক্যাপ যাচ্ছে চীনে

রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর

দিনাজপুরের গ্রামীণ নারীদের তৈরি ‘পরচুলা’ বা ‘হেয়ার ক্যাপ’ এখন চীনসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। এ কাজ করে বেকার নারীরা স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন। জেলার নবাবগঞ্জ, বিরামপুর, ঘোড়াঘাট উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে এ হেয়ার ক্যাপ তৈরি হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে ধারণা পাওয়া গেছে, টাক মাথার জন্য ব্যবহার করা এসব পরচুলা  তৈরি করে তিন উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের শত শত দরিদ্র নারী ও স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা প্রতিমাসে ৮ থেকে ১৫ হাজার টাকা আয় করতে পারছেন। বাড়তি আয় করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন তারা। করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে হেয়ার ক্যাপ তৈরির প্রশিক্ষণ নিয়ে এ কাজ করা হচ্ছে। একজন দক্ষ নারী শ্রমিক দিনে ১/২ টি করে পরচুলা তৈরি করছেন। প্রতিটি পরচুলার মজুরি মিলছে সাইজ অনুযায়ী ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা। অনেক নারী প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজ বাড়িতেও বিশেষ ধরনের টেবিল তৈরি করে এ ‘পরচুলা’ বা ‘হেয়ার ক্যাপ’ তৈরি করছেন। তারা সংসারের কাজের ফাঁকে ফাঁকে এসব তৈরি করেন এবং পরে তা রপ্তানিকারকদের কাছে সরবরাহ করে। এসব পরচুলা তৈরির জন্য চুল ও বিভিন্ন সরঞ্জামাদি রপ্তানিকারকরা ঢাকা থেকে সরবরাহ এবং মাস শেষে মজুরির টাকা ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে পরিশোধ করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৬মাস আগে নবাবগঞ্জ উপজেলার পুটিমারা ইউপির মতিহারা, ভাদুরিয়া, বিরামপুরসহ ঘোড়াঘাটের রানীগঞ্জ এলাকায় মো. তারেক হোসেন তার দুই বন্ধু মিলে মেসার্স সায়মা হেয়ার এন্টারপ্রাইজ উইকড-এর উদ্যোগে কাজ করছেন। তার প্রতিষ্ঠানে ৫ শতাধিক নারী রয়েছেন। তারেক হোসেন বিশেষ ধরনের টেবিল তৈরি করে এ অঞ্চলে একটি মিনি কারখানাও গড়ে তুলেছেন। কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী প্রতিমাসে তিনি ৭ সাইজের প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ ‘পরচুলা’ বা ‘হেয়ার ক্যাপ’ সরবরাহ করেন। যার বাজার মূল্য ২ লাখ থেকে আড়াই লাখ টাকা। তারেক হোসেন জানান, এ অঞ্চলের গ্রামীণ নারীদের নিয়ে ১০টি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। প্রথমে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষতা বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়। একজন দক্ষ নারী ‘পরচুলা’ বা ‘হেয়ার ক্যাপ’ বিভিন্ন জাতের ২-৩টি করে তৈরি করতে পারেন। তিনি জানান, তার মিনি কারখানায় ৫ শতাধিক নারী কাজ করছেন। তারা প্রতিমাসে ৮ থেকে ১৫ হাজার টাকা আয় করছেন। এ এলাকায় তার মতো ১০টি প্রতিষ্ঠানে ‘পরচুলা’ বা ‘ হেয়ার ক্যাপ’ তৈরির কাজ হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, ‘পরচুলা’ বা ‘হেয়ার ক্যাপ’ তৈরির জন্য চুল ও বিভিন্ন সরঞ্জামাদি ঢাকা থেকেই সরবরাহ করা হয়। এগুলো তৈরি পর ঢাকার উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে চীনসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়ে থাকে। তবে এ কাজে ব্যাংক ঋণসহ সরকারি সহযোগিতা পেলে গ্রামাঞ্চালেই বড় আকারের কারখানা গড়ে তুলে হতদরিদ্র নারীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যেত। যা দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ, বিরামপুর, ঘোড়াঘাট অঞ্চলের গ্রামীণ অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখতে পরত।

সর্বশেষ খবর