শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১৬ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

এনআইডি জালিয়াতি ইসির ৫ কর্মকর্তা কর্মচারী বরখাস্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক

কুষ্টিয়ায় একটি পরিবারের ছয় সদস্যের জাতীয় পরিচয়পত্র জালিয়াতিতে অভিযুক্ত পাঁচ নির্বাচন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বরখাস্ত করেছে নির্বাচন কমিশন। গতকাল এ সংক্রান্ত আলাদা আলাদা প্রজ্ঞাপন ও আদেশ জারি করেছে ইসি সচিবালয়। এ পাঁচ জন হলেন- ইসির উপসচিব কুষ্টিয়ার সাবেক সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. নওয়াবুল ইসলাম; ফরিদপুরের অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও কুষ্টিয়া সদরের সাবেক উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. জিয়াউর রহমান; সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও কুমারখালীর সাবেক উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ছামিউল আলম; চুয়াডাঙ্গা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও কুষ্টিয়া সদরের সাবেক উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা অমিত কুমার দাশ ও কুষ্টিয়া উপজেলা নির্বাচন অফিসের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক জিএম সাদিক।

এ বিষয়ে ইসি সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার বলেন, ‘এনআইডি জালিয়াতির ঘটনার জন্য সংশ্লিষ্ট ৫ জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদেরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।’

কুষ্টিয়ায় জাতীয় পরিচয়পত্র জালিয়াতি করে শত কোটি টাকার জমি হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় গত সেপ্টেম্বরে এ চক্রের প্রধানকে গ্রেফতার করে পুলিশ জানায়, একটি সংঘবদ্ধ জালিয়াত চক্র জাতীয় পরিচয়পত্র জালিয়াতি করে নিজেরাই ক্রেতা-বিক্রেতা সেজে রেজিস্ট্রেশন দলিলের মাধ্যমে হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় অন্যের জায়গা-জমি দখল করে আসছিল। এ ঘটনায় গত ৭ সেপ্টেম্বর শহরের এনএস রোডের বাসিন্দা এমএমএ ওয়াদুদ এ প্রতারক চক্রের ১৮ সদস্যের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ১০/১২ জনের বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলা করেন। এরই মধ্যে এ সংক্রান্ত তদন্ত কমিটি গঠন করে ইসি সচিবালয়। তাতে ইসি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, কুষ্টিয়ার এনএস রোডের এসএমএ ওয়াদুদ ও তার পরিবারের সদস্যদের তথ্যাদি ধারণ করে ছয় জন ব্যক্তির এনআইডি নেওয়ার অভিযোগের পর গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দেয়। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- ইসির উপসচিব কুষ্টিয়ার সাবেক সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. নওয়াবুল ইসলাম রিভাইজিং অথরিটির দায়িত্বে থাকাকালীন মাকছুদা বেগমের দলিলাদি যাচাই বাছাই ছাড়া ৭৯ বছর বয়স্ক একজন নারীকে ভোটার করার আদেশ দেওয়ায় এ কর্মকর্তা জালিয়াতিতে জড়িত। অন্য এক ব্যক্তি ২০১৮ সালের ২১ জানুয়ারি জালিয়াতির মাধ্যমে আবদুল ওয়াদুদ নামের ভোটার তালিকাভুক্ত করেন। এ ধরনের কার্যকলাপ শৃঙ্খলার পরিপন্থি ও তা সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৩ (গ) অনুযায়ী ‘অসদাচরণ’ এর আওতাভুক্ত। তাই বিধি মোতাবেক সরকারি চাকরি থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয় এ কর্মকর্তাকে।

রিভাইজিং অথরিটির আদেশ মতে দুই ব্যক্তির ফরম যথাযথ পূরণ না থাকা সত্ত্বেও রেজিস্ট্রেশন অফিসার হিসেবে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন ফরিদপুরের অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও কুষ্টিয়া সদরের সাবেক উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. জিয়াউর রহমান। এছাড়া উপজেলা নির্বাচন অফিসে তিনজন ব্যক্তি দ্বিতীয়বার ভোটার হন। ভোটার হওয়ার সময় তারা যেসব দলিলাদি দেন সবগুলোই জাল। কোনো যাচাই ছাড়া তিন ব্যক্তিকে বেআইনিভাবে ভোটার তালিকাভুক্ত করেন নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ছামিউল আলম। দুই ব্যক্তি কুষ্টিয়া সদরে দ্বিতীয়বার ভোটার হন; তাদের সব কাগজপত্রই ছিল জাল। চুয়াডাঙ্গা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও কুষ্টিয়া সদরের সাবেক উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা অমিত কুমার দাশ যাচাই বাছাই ও তাদের তালিকাভুক্তিতে জড়িত ছিলেন। এছাড়া চার ব্যক্তির এনআইডি স্থানান্তরের মূল আবেদন সংরক্ষণের কথা থাকলেও সদর অফিসের গোডাউনে পাওয়া যায়নি। গোডাউনের দায়িত্বে ছিলেন কুষ্টিয়া উপজেলা নির্বাচন অফিসের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক জিএম সাদিক। এছাড়া মূল আবেদন গায়েবে জড়িত তিনি। বিধি মোতাবেক সরকারি চাকরি থেকে এ পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বহিষ্কার করে ইসি সচিবালয়।

সর্বশেষ খবর