রবিবার, ২৮ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

মহাবিপন্ন প্রাণী মসৃণ উদ্‌বিড়াল

দীপংকর ভট্টাচার্য লিটন, শ্রীমঙ্গল

মহাবিপন্ন প্রাণী উদ্বিড়াল। একসময় গ্রামাঞ্চলে খুব বেশি দেখা যেত। এদের জ্বালাতনে পুকুর বা জলাশয়ে মাছ রক্ষা করা দুষ্কর হয়ে যেত। অঞ্চল ভেদে ভোঁদর, উদ্, ডেউরা বা ধারিয়া নামেও পরিচিত এরা। তবে অন্য সব নামের চেয়ে ভোঁদর নামে এরা বেশি পরিচিত। বাংলাদেশে তিন প্রজাতির ভোঁদর আছে। এদের মধ্যে বড় ভোঁদর এখনো কিছুটা দেখা গেলেও নখহীন ভোঁদর আর মসৃণ ভোঁদর একেবারে দেখা যায় না। এই দুই প্রজাতি এখন মহাবিপন্ন। সম্প্রতি শ্রীমঙ্গলের ভাড়াউড়া চাবাগানের লেক থেকে এই মহাবিপন্ন মসৃণ উদ্বিড়ালের ছবি তুলেছেন শৌখিন ফটোগ্রাফার কাজল হাজরা। প্রাণী বিষারদরা জানান, ভোঁদরের ইংরেজি নাম smooth-coated otter. আর বৈজ্ঞানিক নাম Lutrogale perspicillata. এরা মুস্টিলিডি গোত্রের আধা জলচর মৎস্যভুক্ত স্তন্যপ্রাণী। এদের আঙুলগুলো হাঁসের পায়ের মতো পাতলা পর্দা দিয়ে জোড়া লাগানো। লেজ মোটা। মাথা থেকে লেজ পর্যন্ত লম্বা ১৮ থেকে ২২ ইঞ্চি। শরীর লম্বাটে গড়নের। সাঁতার কাটার সময় নাক ও কানের ফুটো বন্ধ থাকে। নাকের ডগায় লম্বা গোঁফের মতো খাড়া লোম থাকে। এই গোঁফ সংবেদনশীল বলে জলের নিচে শিকার ধরতে সহায়তা করে। শিকারের উপস্থিতি জানান দেয়। হাত-পায়ের পাতাও খুব স্পর্শকাতর। কাদায় লুকানো ঝিনুক, শামুক, চিংড়ি, কাঁকড়া এদের হাত থেকে রক্ষা পায় না। দাঁত খুব শক্ত। মাড়ি পিচ্ছিল। শক্তদাঁত আর পিচ্ছিল মাড়ি শিকার ধরতে বা মাছের মুড়ো চিবোতে অত্যন্ত কার্যকর। দেহে দুই স্তর লোম আছে। প্রথম স্তর আকারে ছোট। কোমল, তাপরোধী ও জলরোধী। এই অন্তঃলোম বাতাস ধরে রেখে জলের নিচে এদের দেহ উষ্ণ ও শুকনো রাখে। আর দ্বিতীয় স্তরের লোম লম্বা। যা আমরা চোখে দেখতে পাই। এগুলো জলে ভিজে ওঠে। এরা লিপ্তপদী বলে জলের নিচে খুব ভালো সাঁতার কাটতে পারে। ডুব দিয়ে একটানা প্রায় আধা কিলোমিটার যেতে পারে। এদের গায়ে উৎকট এক প্রকার গন্ধ রয়েছে।

এরা দল বেঁধে থাকে। অধিকাংশ সময় বাচ্চা সঙ্গে নিয়ে শিকার খোঁজে। প্রধান খাদ্য মাছ হলেও শিকারের তালিকায় আছে জলজ অমেরুদন্ড প্রাণীরাও। বেশির ভাগ ভোঁদরই জলাশয়ের কিনারে গর্তে বসবাস করে। শিকারের সময় তারা জলে নামে। বাকি সময় ডাঙাতেই কাটিয়ে দেয়। তবে সামুদ্রিক ভোঁদর বেশির ভাগ সময় সমুদ্রে থাকে।

বছরে একবার এদের প্রজনন সময়। জলাশয়ের পাড়ে উঁচুতে বড় গাছের তলায় গর্ত করে থাকে। গর্তের কয়েকটি মুখ থাকে। গর্তে ঢুকে জলের তল দিয়ে। বাচ্চা প্রসবের স্থানটি থাকে শুকনোয়। দুই থেকে তিনটি বাচ্চা দেয়। জন্মের ১০ দিন পরে বাচ্চারা চোখ খোলে। বড় হতে এক বছর সময় লাগে। আর  দুই বা তিন বছর লাগে যৌন পরিপক্ব হতে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. ফিরোজ মোস্তফা জানান, মসৃণ উদ্বিড়াল বা ভোঁদর মহাবিপন্ন প্রাণী। জলাশয় ও বনজঙ্গল কমে যাওয়ায় ভোঁদর কমে যাচ্ছে। এ ছাড়া জলাশয়ে কারেন্ট জালে আটকা পড়ছে। পারে তুলে জেলেরা এদের মেরে ফেলছে। এসব কারণে ভোঁদরের সংখ্যা আশঙ্কাজনকহারে কমছে। এদের টিকিয়ে রাখতে হলে জলাশয় ও পরিবেশ সংরক্ষণ করতে হবে। তিনি জানান, নড়াইলের চিত্রা নদীর পাড়ের ভোগড়া ও পঙ্কবিলা গ্রামের মালু জেলারা ভোঁদর দিয়ে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। এটি ৬০০ বছরের ঐতিহ্যগত ভোঁদর সংরক্ষণ পদ্ধতি।

সর্বশেষ খবর