শনিবার, ৮ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

সিরাজগঞ্জে তাঁতশিল্পীদের দুর্দিন

আবদুস সামাদ সায়েম, সিরাজগঞ্জ

করোনার প্রভাবে সিরাজগঞ্জের ব্র্যান্ড তাঁতশিল্প হুমকির মুখে পড়েছে। একদিকে তাঁতের উপকরণের দাম বৃদ্ধি, অন্যদিকে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় হাটে পাইকার না আসায় ঈদে কাপড় বিক্রি করতে পারছেন না তাঁতিরা। বিক্রি বন্ধ থাকায় শ্রমিকদেরও বেতন দিতে পারছেন না। এ অবস্থায় ঈদ নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন তাঁতমালিক ও শ্রমিকরা। তাঁতমালিকরা বলছেন, করোনার কারণে যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তাতে করে সরকারি সহায়তা না পেলে তাঁতশিল্প বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রসঙ্গত, সিরাজগঞ্জের অর্থনীতিতে প্রধান ভ‚মিকা রাখে তাঁতশিল্প। এখানকার উৎপাদিত শাড়ি-থ্রিপিস, লুঙ্গি ও গামছা দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি হয়। দেশের বড় বড় কোম্পানি সিরাজগঞ্জের উৎপাদিত শাড়ি-লুঙ্গি কিনে নিজেদের কোম্পানির লেভেল লাগিয়ে পর্যন্ত বাজারজাত করে।
সিরাজগঞ্জে তাঁতশিল্পের  সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে প্রায় ৫ লক্ষাধিক মানুষ জড়িত। উৎপাদনের ভিত্তিতে কাজ করে শ্রমিকরা সংসার চালায়। কিন্তু করোনার কারণে কাজ কম হলেও ঈদের আগে দুই পয়সা বেশি পাওয়ার জন্য অধিক সময় পরিশ্রম করছেন শ্রমিকরা। কিন্তু তাঁতমালিকরা হাটে কাপড় বিক্রি করতে না পারায় যেমন মজুরি দিতে পারছেন না, তেমনি কাজও দিতে পারছেন না। এ অবস্থায় গোটা তাঁতশিল্প মহাসংকটে পড়েছে।

তাঁতশ্রমিক আলমাস, আবদুুল হাদি ও আবুল হোসেনের ভাষ্য, ‘পরিবার-পরিজন নিয়ে একটু ভালোভাবে ঈদ করতে বেশি পরিশ্রম করছি। কিন্তু মহাজনরা কাপড় বিক্রি করতে না পারায় বিল পরিশোধ করতে পারছেন না। এ অবস্থায় ঈদ তো দূরের কথা, দুমুঠো ডাল-ভাত খাওয়াও কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে।’ শ্রমিকরা আক্ষেপ করে বলেন, ‘করোনার কারণে বহু মানুষ সরকারি-বেসরকারি সহায়তা পেয়েছেন। কিন্তু তাঁতশ্রমিকদের দিকে কারও নজর পড়েনি। তাই আমাদের মতো অভাগা আর নেই।’
তাঁতমালিক নুরুল ইসলাম, ইয়াসিন ও কাওসার বলেন, ‘ঈদের আগে কাপড় উৎপাদন করে সারা বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু করোনায় লকডাউনে হাট-বাজার বন্ধ এবং গণপরিবহন বন্ধ থাকায় হাটে পাইকার আসছেন না। কাপড়ও বিক্রি করতে পারছি না। শ্রমিকদেরও বেতন দিতে পারছি না। মহাজনদের ঋণও পরিশোধ করতে পারছি না। এ অবস্থায় সরকারি সহায়তা না পেলে তাঁতশিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে।’
সিরাজগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট আবু ইউসুফ সূর্য্য জানান, করোনা মহামারী বন্যায় তাঁতিরাও ভয়াবহ ক্ষতির শিকার হয়েছেন। এ অবস্থায় শিল্পটিকে টিকিয়ে রাখতে তাঁতমালিকদের কম সুদে বা ২% সুদে অর্থ সহায়তার পাশাপাশি শ্রমিকদের খাদ্য সহায়তা নিশ্চিত করার জন্য চেম্বারের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে আবেদন করা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর