বৃহস্পতিবার, ৮ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

করোনার অজুহাতে গলা কাটছে হাসপাতাল

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে যখন হাসপাতালগুলোর ত্রাহি অবস্থা, তখনো রাজশাহীর বেসরকারি হাসপাতালগুলো এগিয়ে আসছে না। বরং করোনা পজিটিভ রোগী ভর্তি নেওয়া হয় না, এমন নোটিস টানানো আছে কিছু ক্লিনিক ও হাসপাতালে। ক্লিনিক মালিকরা বলছেন, করোনা চিকিৎসার জন্য যে অবকাঠামো প্রয়োজন তা নেই। এ ছাড়া স্বাস্থ্য বিভাগের অনুমতির প্রয়োজন রয়েছে। তবে জরুরি ও সাধারণ সেবা দেওয়া হচ্ছে আগের মতোই। রাজশাহীর বেসরকারি সব হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসাসেবা চলছে। তবে করোনা আতঙ্কে বেশিরভাগ চিকিৎসক রোগী দেখছেন অনলাইনে। যারা ক্লিনিক খোলা রেখেছেন, তারা গলা কাটছেন রোগী ও স্বজনদের। আগের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি টাকা নিয়ে করছেন অপারেশন। বাধ্য হয়ে রোগীরা অতিরিক্ত টাকা দিয়েই চিকিৎসা নিচ্ছেন। চিকিৎসকরাও বাড়িয়েছেন তাদের ফি। শুধু ক্লিনিকগুলো বেশি অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে এমন নয়, আইসিইউ বেড থাকায় নগরীর সিডিএম হাসপাতালে সেটি প্রথমে করোনা রোগীদের জন্য সরকারের তালিকাভুক্ত করে।

 পরে তা দিতে অস্বীকার করে প্রতিষ্ঠানটি। সরকারি তালিকায় সিডিএমের ৫টি আইসিইউ বেড থাকলেও বাস্তবে নেই। সেখানে যারা আইসিইউ সুবিধা নিচ্ছেন, তাদের গুনতে হচ্ছে মোটা অঙ্কের বিল।

চিকিৎসাসেবার যখন এমন হাল, তখন রাজশাহীতে বেড়েছে কাশি ও জ্বরের ওষুধের দাম। জ্বরের জন্য ব্যবহার করা নাপা, এইস ও এইস-প্লাস প্রতি পাতায় আগের চেয়ে ৫ থেকে ১০ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে।

রাজশাহীর লক্ষ্মীপুর এলাকার আলিম-লাম ফার্মেসির মালিক আবু সাইদ জুয়েল জানান, নাপা ও এইস-প্লাসের পাতায় ২ থেকে ৩ টাকা বেড়েছে। তবে অন্য ওষুধের দাম ঠিকই আছে। বাংলাদেশ ফার্মেসির মালিক সজীব হোসেন জানান, আগের দামেই তারা ওষুধ বিক্রি করছেন। ডক্সিন ওষুধের চাহিদা বেড়েছে। ফাতেমা ড্রাগ হাউসের মোতাহারুল ইসলাম জানান, তারা এখনো আগের দামেই ওষুধ বিক্রি করছেন।

একমি ল্যাবরেটরি রাজশাহীর সিনিয়র এক্সিকিউটিভ আবদুল হালিম জানান, কোম্পানি থেকে ওষুধের কোনো দাম বাড়ানো হয়নি। তবে কোনো কোনো ফার্মেসি জ্বর ও কাশির ওষুধের দাম বেশি নিচ্ছে বলে শুনেছেন।

রাজশাহীর লক্ষ্মীপুর ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের প্রধান ফটকে দাঁড়াতেই নিরাপত্তা কর্মী তাপমাত্রা পরিমাপের যন্ত্র নিয়ে হাজির। কপালের কাছে ধরে তাপমাত্রা দেখে ভিতরে প্রবেশের অনুমতি দিলেন। ভিতরে ১০ পা এগোতেই দেখা গেল আল্ট্রাসনোগ্রাম রুমের সামনে একদল নারী ও পুরুষের গাদাগাদি অবস্থান। সেখানে স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই নেই। ভিতরে নিরাপত্তা কর্মী থাকলেও কেউ তাদের স্বাস্থবিধি মেনে দূরত্ব বজায় রেখে চলাচল করতে বা বসার পরামর্শ দিচ্ছে না।

একই অবস্থা পপুলার, ল্যাবএইড, আমানাসহ রাজশাহীর প্রতিষ্ঠিত ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিকগুলোতেও। প্রতিষ্ঠানগুলো রোগী ও তাদের স্বজনদের কাছ থেকে কাউন্টারের মাধ্যমে টাকা নিয়ে সোজা রুম নম্বর দেখিয়ে দিয়েই খালাস। সবটিতেই এখন চিকিৎসাসেবা পেতে দিতে হচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ।

সুশাসন বিশ্লেষক সুব্রত পাল বলেন, ‘প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো দীর্ঘদিন চিকিৎসাসেবার নামে রোগীদের কাছ থেকে মুনাফা তুলেছেন। দেশের এই ক্রান্তি লগ্নে তাদের উচিত সবার স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের মাধ্যমে সরকারকে সহযোগিতা করা। চিকিৎসকদের কাছে আগে যেখানে ১০০ জন রোগী আসতেন, এখন হয়তো কম আসছে। তবে আসছে তো। স্বাস্থ্য বিধি মেনে এই রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে হবে। অতিরিক্ত অর্থ আদায় চরম অমানবিক কাজ।’

স্বাস্থ্য বিভাগের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য মতে, বিভাগীয় শহর রাজশাহী জেলায় বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের সংখ্যা ১৫৪টি।                রাজশাহীর প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি ফয়সাল কবির চৌধুরী বলেন, বেসরকারি খাতের চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোর খুবই দুর্দিন চলছে। এই মুহূর্তে রাজশাহীতে রোগীর সংখ্যা খুবই কম। যার ফলে সব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পক্ষে নিজেদের প্রতিষ্ঠান চালু রাখা সম্ভব হচ্ছে না। তবুও তারা সাধারণ ও জরুরি সেবা চালু রেখেছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর