শনিবার, ৩১ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

ইরান ইরাকসহ পশ্চিম এশিয়াজুড়ে ডেল্টার হানা, টার্গেটে চীনও

প্রতিদিন ডেস্ক

পশ্চিম এশিয়ার ২২টি দেশের মধ্যে ইরান, ইরাক, তিউনিসিয়া, লিবিয়াসহ ১৫টি দেশে করোনার ডেল্টা ধরন ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকি করোনামুক্ত দেশ চীনেও এ ধরন হানা দিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, এই ধরনে যারা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের মধ্যে করোনার টিকা না নেওয়ারা রয়েছেন। সূত্র : রয়টার্স, বিবিসি, সিএনএন, ভোয়া।

জাতিসংঘের জনস্বাস্থ্যবিষয়ক দফতর গত বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, চার সপ্তাহ ধরে পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলোতে গড়ে প্রতি সপ্তাহে ৩ লাখ ১০ হাজার মানুষ নতুন করে করোনা সংক্রমিত হচ্ছেন। সপ্তাহে গড়ে মৃত্যু হচ্ছে সাড়ে ৩ হাজারের কাছাকাছি। সংক্রমণের এই পরিসংখ্যান ৫৫ শতাংশ এবং মৃত্যু সংখ্যা ১৫ শতাংশ বেড়েছে। গতকাল পশ্চিম এশিয়ায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক প্রধান চিকিৎসক আহমদ আল মান্ধারি বলেন, ‘পশ্চিম এশিয়ায় আমরা এখন করোনার চতুর্থ ঢেউয়ের কবলে রয়েছি।’ একই সঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, টিকাকরণের ক্ষেত্রে গাফিলতিই পশ্চিম এশিয়ার এই চতুর্থ ঢেউয়ের কারণ। করোনার টিকা সংগ্রহ আর মজুদ করার ক্ষেত্রে এ দেশগুলো যতটা আগ্রহ দেখিয়েছে ততটা টিকাকরণে দেখায়নি। পশ্চিম এশিয়ায় ৪ কোটি ১০ লাখ মানুষের টিকাকরণ হয়েছে। যা মোট জনসংখ্যার মাত্র সাড়ে ৫ শতাংশ।

ভারতে ফের বাড়ছে সংক্রমণ : ভারতে তিন দিন ধরে ৪২ হাজারের বেশি মানুষ করোনার ডেল্টা ধরনে আক্রান্ত হচ্ছেন। দেশটির দৈনিক আক্রান্তের অর্ধেকই হচ্ছে কেরালায়। গত বৃহস্পতিবার ২৪ ঘণ্টায় ওই রাজ্যে আক্রান্ত হন ২২ হাজারের বেশি মানুষ। মহারাষ্ট্রে তা ৭ হাজারের বেশি। কর্ণাটক এবং অন্ধ্রপ্রদেশে গত কয়েক দিনে দৈনিক আক্রান্ত ফের ২ হাজার ছাড়িয়েছে।

মিয়ানমারের পরিস্থিতিও প্রকট : সেনাবাহিনীর অভ্যুত্থানের ছয় মাস পর মিয়ানমারে এখন ব্যাপকভাবে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। মে মাসের ২৫ তারিখে শুরু হওয়া তৃতীয় ঢেউয়ে ডেল্টা ধরনের সংক্রমণে দ্রুত গতিতে প্রতিদিন মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। জুলাইয়ের ২৩ তারিখে ৩২৬ জনের মৃত্যু হয়। এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ৬ হাজার ৪৫৯। মিয়ানমারে ১৩ হাজার ৪৮৭টি নমুনার মধ্যে ৫ হাজার ৫০৬টি নতুন সংক্রমণ লক্ষ্য করা গেছে, যা কিনা ৪০ শতাংশ। প্রকৃত সংখ্যা বেশি হতে পারে যেহেতু অনেকেই হাসপাতালে যেতে পারছেন না।

খবরে বলা হয়, দেশটি কবরস্থানগুলোর সুরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়াই দ্রুত মরদেহ সমাধিস্থ করতে হিমশিম খাচ্ছে। পর্যাপ্ত লাশ বহনের গাড়ি না থাকার কারণে ট্যাক্সি বা গাড়িতে করে তিন বা তার চেয়েও বেশি লাশ বহন করা হচ্ছে। সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করা ছবি ও ভিডিওতে দেখা যায় ইয়াঙ্গুনের কবরস্থানে সৎকারের জন্য মৃতদেহগুলো স্তূপ করে রাখা হয়েছে। অভ্যুত্থানের পর থেকে স্বেচ্ছাসেবী এবং কর্মীরা মাস্ক ছাড়া অন্য কোনো সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম পরেন না। ইয়াঙ্গুনের ফ্রি ফিউনারেল অপারেটর এবং ত্রাণকর্মীদের দাবি অনুযায়ী, দিনে প্রায় ১ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। এত মৃতদেহ সৎকার করা তাদের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

বেইজিংয়ে মিলেছে ফের কভিড রোগী : চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে প্রায় ছয় মাসের মধ্যে গত বুধবার প্রথম একজনের কভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে। একই সঙ্গে জিয়াংসু প্রদেশের রাজধানী নানজিং শহরে করোনাভাইরাসের ডেল্টা ধরন মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।

খবরে বলা হয়, বুধবার চীনে ৪৯ জনের দেহে কভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে স্থানীয়ভাবে তিনটি প্রদেশে ২৪ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন। নতুন এই সংক্রমণ নিয়ে সব মিলে শনাক্তের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭৫ জনে। যদিও জানুয়ারির পর থেকে দৈনিক সংক্রমণের হিসাবে বুধবার চীনে কভিড শনাক্তের সংখ্যা তার আগের দিন অর্থাৎ মঙ্গলবারের ৮৬ জনের তুলনায় কম। কিন্তু প্রাদেশিক সীমান্তগুলোতে ভাইরাসের বিস্তার ঘটা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন চীনের নেতারা।

কারণ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে শনাক্তের সংখ্যা কম থাকা এবং প্রাত্যহিক জীবন সচল হয়ে আসার পর ওই এলাকাগুলোতে এখন আবার ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। আর রাজধানী বেইজিংয়ে বৃহস্পতিবার বিকালে নতুন করে দ্বিতীয় আরেকজনের ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। বেইজিংয়ে স্থানীয়ভাবে পর পর দুই দিনে ভাইরাস শনাক্ত হওয়া দুই ব্যক্তি স্বামী ও স্ত্রী বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ, যারা সম্প্রতি হুনান প্রদেশের একটি নগরীতে ভ্রমণ করেছিলেন। সেখান থেকেই তারা সংক্রমিত হয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। এ দম্পতির সংস্পর্শে যারা এসেছেন তাদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।

অন্যদিকে জিয়াংসু প্রদেশের রাজধানী নানজিংয়ের লুকোউ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের একজন কর্মী আন্তর্জাতিক একটি উড়োজাহাজ পরিষ্কার করার সময় যথেষ্ট সুরক্ষা ব্যবস্থা না নেওয়ায় তার মাধ্যমেই সেখানে ডেল্টা ধরন ছড়িয়ে পড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ অবস্থায় আগামী মঙ্গলবার থেকে নানজিংয়ের লুকোউ বিমানবন্দর সাময়িকভাবে বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

শহরে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে ৯৩ লাখের বেশি মানুষ বাস করে। ২১ জুলাই থেকে নানজিংয়ের স্থানীয় বাসিন্দাদের গণহারে ভাইরাস পরীক্ষার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর