রবিবার, ৮ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

গৃহহীনদের ‘স্বপ্ন নগর’-এ ঠাঁই পেল ২৫০ পরিবার

কামরুজ্জামান সোহেল, ফরিদপুর

প্রস্তুত সারি সারি ঘর। প্রতিটি ঘরই দুই কক্ষবিশিষ্ট। রয়েছে বাথরুম ও রান্নাঘর। প্রতিটি ঘরই বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত। বিশাল এলাকাজুড়ে এরকম ঘর রয়েছে ২৫০টি। আর এ ঘরগুলোতে গৃহহীন, ভূমিহীন, অসহায়, দরিদ্র, প্রতিবন্ধী, নদী ভাঙনকবলিত মানুষেরা ঠাঁই পেল। মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে এ ঘরগুলো প্রদান করা হয়। দেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় জায়গাজুড়ে এবং একসঙ্গে ২৫০টি ঘর নেই আর কোনো স্থানে। ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের মধুমতি নদীর তীরবর্তী গ্রাম হচ্ছে চরকাতলাসুর। সেই গ্রামেই ৩৩ একরের বিশাল জায়গাজুড়ে নির্মিত হয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় এ আশ্রয়ণ প্রকল্পটি। গৃহহীন অসহায় মানুষের স্বপ্নকে সার্থক করতেই এই গ্রামটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘স্বপ্ন নগর’। কী নেই এই ‘স্বপ্ন নগরে’। হাইস্কুল, মসজিদ-মাদরাসা, ঈদগা, কবরস্থান, মন্দির, শ্মশান, কমিউনিটি ক্লিনিক, খেলার মাঠ, হাট-বাজার, ইকোপার্ক, শিশুপার্কসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা। শুক্রবার দুপুরে ‘স্বপ্ন নগর’-এর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। প্রতিটি পরিবারের হাতে ঘরের চাবি বুঝিয়ে দেন ফরিদপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মনজুর হোসেন বুলবুল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক অতুল সরকার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার তৌহিদ এলাহি, উপজেলা চেয়ারম্যান জাহিদুল হাসান জাহিদ, পৌর মেয়র সাইফুর রহমান সাইফারসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি। সরকারের তরফ থেকে ঘরগুলো পেয়ে খুশি ভূমিহীন-গৃহহীন অসহায় মানুষেরা। স্বপ্ন নগরের কয়েক বাসিন্দা জানান, ঘর পেয়ে তারা নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন। অনেকেই নদী ভাঙনের শিকার হয়ে সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব অবস্থায় রাস্তার পাশে আশ্রয় নিয়েছিলেন। এখন তারা স্থায়ী ঠিকানা পেয়েছেন। এখন তাদের ছেলে-মেয়েদের বিয়ে দিতে আর কোনো সমস্যা হবে না। ঘরের চাবি পেয়ে সুখের কান্নায় ভেঙে পড়েন এক বৃদ্ধা। তিনি বলেন, বাড়িঘর যা ছিল সব নদীতে গেছে। স্বামী মারা যাওয়ার পর রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেছি। অন্যের বাড়িতে থাকছি। এহন থাকার জায়গা পাইছি। শেষ বয়সে শান্তিতে মরতে পারুম। বিধবা নারী কুলসুম জানান, তার কোনো থাকার জায়গা ছিল না। অন্যের বাড়িতে কোনো রকম খেয়ে না খেয়ে থাকতেন। এখন তিনি একটি ঘরের মালিক। ঘরের পাশেই সবজির বাগান করবেন। একটি মুদিদোকান দেওয়ারও ইচ্ছা রয়েছে তার। রহমত আলী নামের এক ব্যক্তি জানান, ছেলে-মেয়ে নাই, সারা দিন ভিক্ষা করে যা পাই তা দিয়ে কোনোমতে চলে যেত। যেখানে রাত হতো সেখানেই শুয়ে থাকতাম। এখন ঠিকানা পাইছি। মনে বড় শান্তি লাগছে।  আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার তৌহিদ এলাহি জানান, চরকাতলাসুর গ্রামের বিশাল একটি জায়গা স্থানীয় প্রভাবশালীরা দখলে রেখেছিল। সেই জায়গাটিতেই নির্মাণ করা হয়েছে ‘স্বপ্ন নগর’। জায়গাটি উদ্ধার করতে গিয়ে নানা সমস্যায় মধ্যে পড়তে হয়েছিল। তিনি বলেন, এই স্বপ্ন নগরে থাকবে সব সুযোগ-সুবিধা। একটি আধুনিক গ্রামে যেসব সুযোগ সুবিধা থাকে এই স্বপ্ন নগরে সবকিছুই থাকবে। এখানকার বাসিন্দাদের স্বাবলম্বী করতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। যে যেই কাজ পারবে তাকে সেই কাজে লাগানো হবে। যাতে করে তারা নিজেরাই নিজেদের আয় দিয়ে সংসার চালাতে পারে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর