মঙ্গলবার, ১০ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

ভাড়ায় নেওয়া গাড়ি চুরি করে কোটিপতি গ্রেফতার ৭

নিজস্ব প্রতিবেদক

কথিত পোশাক কারখানার জন্য গাড়ি ভাড়া নিয়ে তা মালিককে না জানিয়ে বিক্রি করে চার মাসের মধ্যে প্রায় ৪ কোটি টাকার মালিক হয়েছেন আবদুল কাইয়ুম ছোটন ওরফে ইশতিয়াক ওরফে মেহেদী নামে এক ব্যক্তি। প্রতারণার অভিযোগে ছয় সহযোগীসহ তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। উদ্ধার করা হয়েছে চুরি করা সাতটি গাড়ি। গতকাল দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান সংস্থাটির বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর।

তিনি বলেন, আবদুল কাইয়ুম ছোটন ওরফে ইশতিয়াক ওরফে মেহেদীর গ্রামের বাড়ি কক্সবাজারের চকরিয়া। তিনি কক্সবাজারে ‘প্রত্যাশা’ নামে একটি এনজিওতে কাজ করতেন। প্রতারণার জন্য সেখান থেকে চাকরিচ্যুত হন। এরপর ঢাকায় এসে গাজীপুর বোর্ডবাজারের শহীদ সিদ্দিক লেনের ৫৮৫ নম্বর চার তলা বাড়ির দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা ভাড়া নিয়ে ‘একে ফ্যাশন’ নামে একটি পোশাক কারখানা চালু করেন। কারখানার মেশিন সব ভাড়া নেন। গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর তিনি ২১০ জন শ্রমিক নিয়ে পোশাক কারখানাটি চালু করেন।  কারখানায় টি-শার্ট, পোলো শার্ট, প্যান্ট ও জ্যাকেট তৈরি হতো।

বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর বলেন, গার্মেন্ট চালুর তিন-চার মাসের মাথায় ছোটন ফেসবুকের বিভিন্ন ‘রেন্ট-এ কার’ পেজে গাড়ি ভাড়া নেবেন বলে বিজ্ঞাপন দেন। এর মধ্যে রেন্ট-এ কার বিডি, রেন্ট-এ কার গাজীপুর ও রেন্ট-এ কার ঢাকা পেজে বেশি বিজ্ঞাপন দেন। বায়ারদের জন্য ভাড়া করা এসব গাড়ি নেওয়া হবে বলেও বিজ্ঞাপনে উল্লেখ করেন ছোটন। গাড়ির মালিকদের তিনি তার গাজীপুরের পোশাক কারখানায় যেতে বলেন। গাড়ির মালিকরা সেখানে গেলে তাদের সঙ্গে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। বিলাসবহুল দামি গাড়ি মাসিক ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকায় ভাড়া নেন ছোটন। তবে তিনি গাড়ির মালিকদের শর্ত দেন- বায়ারদের নিয়ে যেহেতু রাতে চলাচল করতে হবে তাই গাড়িতে তার নিজের চালক থাকতে হবে। গাড়ির মালিকের দেওয়া চালক তিনি নেবেন না। ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি ধরলে আসল কাগজপত্র দেখাতে হবে তাই গাড়ির সব আসল কাগজপত্রও রেখে দেন। তার কথায় গাড়ির মালিকরা সব শর্তে রাজি হন। গাড়ি ভাড়া নেওয়ার পর প্রথম মাসে মালিকদের ভাড়া ঠিকমতোই দিয়েছেন ছোটন। পরের মাসে নয়ছয় শুরু করেন কথিত ওই গার্মেন্ট ব্যবসায়ী। এমনকি মালিককে না জানিয়ে গাড়িও বিক্রি করে দেন। ফেব্রুয়ারি-মে পর্যন্ত চার মাসে তিনি অন্তত ৩০টি গাড়ি ভাড়া নিয়ে সব বিক্রি করে দিয়েছেন। আলমগীর নামে ছোটনের এক সহযোগী রয়েছেন। তিনি এসব গাড়ি বিক্রিতে সহযোগিতা করেন। এ ছাড়া তুরাগের ‘নাজমুল অটো পাস সেন্টার’ এ গাড়ি বিক্রির সঙ্গে জড়িত। ১৯ লাখের গাড়ি ১৩ থেকে ১৪ লাখ টাকায় বিক্রি করা হতো। এ প্রতারণা তারা মার্চ ও এপ্রিলে বেশি করেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গাড়ি বিক্রির সময় ছোটন ক্রেতাদের বলতেন পোশাক কারখানার শ্রমিকদের বেতন দিতে হবে তাই গাড়ি বিক্রি করছেন। পরে গাড়ি বিক্রির ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা নিয়ে আত্মগোপনে চলে যান। এসব ঘটনায় গাজীপুর ও ঢাকায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা মামলা করেন। সিআইডির তদন্তে পুরো সিন্ডিকেটকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানান মুক্তা ধর।

গ্রেফতার অন্যরা হলেন ছোটনের সহযোগী আবদুল হাই, আলমগীর, নাজমুল ও সানী। এ ছাড়াও চোরাই গাড়ির ক্রেতার মধ্যে রানা ও শামীমকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর