শনিবার, ২৮ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

বরিশালে মাদক নিরাময় কেন্দ্রে নির্যাতনে এক যুবককে হত্যার অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল

বরিশালে হলিকেয়ার নামে একটি মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে চন্দন সরকার (২৪) নামে এক রোগীকে নির্যাতনে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার বিচার দাবি করেছেন স্বজনরা। বৃহস্পতিবার ভোররাতে মুঠোফোনে চন্দনের মৃত্যুর খবর পান তারা। নিরাময় কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ নির্যাতনে হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে কী কারণে তার মৃত্যু হয়েছে সুনির্দিষ্ট করে জানাতে পারেননি তারা। পুলিশ বলছে, তদন্ত করে এ ব্যাপারে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মৃত চন্দন সরকার জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার বড়পাইকা গ্রামের প্রয়াত চিত্তরঞ্জন সরকারের ছেলে। ৭ আগস্ট তাকে ওই কেন্দ্রে ভর্তি করেন পরিবারের সদস্যরা। এর ছয় মাস আগে আগৈলঝাড়া থানা থেকে তাকে একবার এ নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছিল। তখন তিনি তিন মাস সেখানে চিকিৎসাধীন ছিলেন। চন্দনের মামা নিবাস মহুরী জানান, চন্দন দীর্ঘদিন ধরে মাদকে আসক্ত।

 পরিবারের পক্ষ থেকে চেষ্টা করেও মাদক সেবন বন্ধ করানো যাচ্ছিল না। নিরুপায় হয়ে চিকিৎসার জন্য তাকে বরিশাল মহানগরের নবগ্রাম রোডের হলিকেয়ার মাদকাসক্তি চিকিৎসা সহায়তা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। বৃহস্পতিবার ভোররাতে মুঠোফোনে তার মৃত্যুর খবর পান তারা। কর্তৃপক্ষ তাদের জানান, গলায় গামছা পেঁচিয়ে চন্দন আত্মহত্যা করেছে। তবে বিষয়টি বিশ্বাস হয়নি চন্দনের স্বজনদের। তাদের অভিযোগ, নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে চন্দনকে।

এদিকে ওই নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন অন্যরা সাংবাদিকদের জানান, তাদের প্রায়ই নির্যাতন করা হয়। এখানকার চিকিৎসার অংশই নির্যাতন। ওই সেন্টারে প্রায় প্রতিদিনই নির্যাতন ঘটে বলে জানিয়েছেন প্রতিবেশী বাসিন্দা খাইরুল হাসান। নির্যাতনের শব্দে আশপাশের বাসার শিশুরা আঁতকে ওঠে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

তবে চিকিৎসাধীন রোগীদের নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন হলিকেয়ার সেন্টার ইনচার্জ মো. মাইনুল হক তমাল। তিনি দাবি করেন, হলিকেয়ারে কাউকে মারধর বা নির্যাতন করা হয় না। চন্দনের মৃত্যুকে হত্যা নয় দাবি করে তমাল বলেন, ‘সে গলায় গামছা পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে।’

গতকাল ছিল হলিকেয়ারে অভিভাবকদের দেখা করার নির্ধারিত দিন। বেশ কয়েকজন অভিভাবক সেখানে যান। খবর জেনে আতঙ্কিত হয়ে চিকিৎসাধীন দুজনকে সেখান থেকে নিয়ে যান তাদের স্বজনরা।

খবর পেয়ে সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন বরিশাল মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা। সেখানে অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক পরিতোষ কুন্ড সাংবাদিকদের জানান, পুরো বিষয়টি তারা তদন্ত করবেন। তদন্তে নির্যাতনের অভিযোগ প্রমাণিত হলে হলিকেয়ারের লাইসেন্স বাতিল করা হবে।

এদিকে দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার আলী আশরাফ ভূঁইয়া। পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, চন্দনের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটনে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত করে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন তিনি।

এর আগে একই সেন্টারে বছর দু-এক আগে একজনকে নির্যাতনে হত্যার অভিযোগ ওঠে। গত ৩ সেপ্টেম্বর মহানগরের রূপাতলীতে মাদক নিরাময় কেন্দ্র ড্রিম লাইফে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্যাতনে সুমন খান নামে এক যুবকের মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ করেন স্বজনরা।

হলিকেয়ারে বর্তমানে ২৮ জন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বরিশাল মহানগরে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র আছে ছয়টি।

 

সর্বশেষ খবর