মঙ্গলবার, ৩১ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

ইরাকে অপহরণ বাংলাদেশে ভিডিও পাঠিয়ে মুক্তিপণ দাবি

চক্রের সদস্য আটজন গ্রেফতার ২

নিজস্ব প্রতিবেদক

ইরাকে আটকে রেখে নির্যাতনের ভিডিও পাঠিয়ে মুক্তিপণ দাবি করা চক্রের দুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ২৫ আগস্ট ফরিদপুরের সদরপুর থেকে রনি মুনসি এবং রাজধানী থেকে শাহনাজ বেগমকে গ্রেফতার করা হয়। শাহনাজ রাজারবাগ প্রশান্তি হাসপাতালের আয়া পদে কর্মরত। তার অ্যাকাউন্টেই ৫ লাখ টাকা জমা দেন ভুক্তভোগীর বাবা। গ্রেফতারের পর দিন দুজনই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হাফিজ আল ফারুক জানান, গ্রেফতার দুজন জিজ্ঞাসাবাদে এ ধরনের আরও অনেক ঘটনা ঘটানোর তথ্য দিয়েছেন। তারা সেগুলোও ভেরিফাই করবেন। দেশে বা দেশের বাইরে যেখানেই থাকুক না কেন, এ চক্রের সবাইকে আইনের আওতায় আনার কথা জানান তিনি।

এর আগে ৩ আগস্ট রাজধানীর কারওয়ান বাজারের মাছ বিক্রেতা বাদল মিয়ার সামাজিক যোগাযোগ অ্যাপ ইমোতে একটি ভিডিও ক্লিপ আসে। সেটি চালু করতেই তিনি দেখতে পান, ইরাকে তার প্রবাসী ছেলে আবদুল্লাহ হক রাব্বিকে (২২) শিকল দিয়ে বেঁধে নির্মম নির্যাতন করা হচ্ছে। বারবার বাঁচার আকুতি জানাচ্ছেন তিনি। এরপর ছেলের মোবাইল ফোনের ইমো থেকে কল করে বাদল মিয়াকে বলা হয়, ‘১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ না দিলে আবদুল্লাহকে হত্যা করে লাশ পুড়িয়ে ফেলা হবে।’ তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা জানান, ১০ লাখ টাকা দেওয়ার সামর্থ্য নেই জানানোর এক পর্যায়ে ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে আবদুল্লাহকে ছাড়তে রাজি হয় অপহরণকারীরা। এরপর দেশের একটি বেসরকারি ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট নম্বর দিয়ে দ্রুত টাকা জমা দিতে বলা হয় বাদল মিয়াকে। ছেলেকে বাঁচাতে উচ্চ হারের সুদে ঋণ নিয়ে ৫ আগস্ট ৫ লাখ টাকা পাঠান তিনি ওই ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। টাকা পাঠালেও ২৫ দিন ধরে ছেলের আর কোনো খোঁজ পাননি বাদল মিয়া। মুক্তিপণ দিয়েও ছেলের সন্ধান না পেয়ে তিনি ২৪ আগস্ট হাতিরঝিল থানায় মামলা করেন। ওই মামলার তদন্তে নেমে রনি মুনসি ও শাহনাজ বেগমের সন্ধান পায় পুলিশ। পুলিশ জানায়, গ্রেফতার দুজন ছাড়া এই চক্রের আরও ছয়জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

এদের মধ্য চারজন ইরাকে অবস্থান করছেন। এরা হলেন- ফরিদপুর সদরপুর উপজেলার জহিরুল ইসলাম, হাবিব ফকির, জিয়াউর রহমান ও সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার শিহাব উদ্দিন। বাংলাদেশে অবস্থানরত চক্রটির অপর দুই সদস্য আতিয়া সুলতানা নিপা ও মুরাদ ফকির পলাতক। নিপা এ চক্রের সদস্য ইরাক প্রবাসী জহিরুল ইসলামের স্ত্রী। মুরাদ ফকির এক মাস আগে ইরাক থেকে দেশে ফিরেছেন। তিনি জহিরুল ইসলামের চাচাতো ভাই।

তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. শহিদুল্লাহ বলেন, ‘মধ্যযুগীয় কায়দায় পৈশাচিকভাবে নির্যাতনের মাধ্যমে ইরাক প্রবাসী একজনকে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনায় জড়িত আট সদস্যকে আমরা শনাক্ত করেছি, যাদের মধ্যে চারজন ইরাকে অবস্থান করছে। তাদের সার্বিক তথ্য পেয়েছি। তারা বৈধ, নাকি অবৈধ পথে ইরাকে গেছে তা ভেরিফাই করে পুলিশ হেডকোয়ার্টারসের এনসিবি শাখার মাধ্যমে তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পুলিশ হেডকোয়ার্টারসের এনসিবি শাখা ও সংশ্লিষ্ট দূতাবাসের মাধ্যমে আমরা ভিকটিমকে উদ্ধারের চেষ্টা করছি।’

সর্বশেষ খবর