শুক্রবার, ৮ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

চীন থেকে অ্যাপে সুদের কারবার, গ্রেফতার ৫

নিজস্ব প্রতিবেদক

ডিজিটাল মাইক্রোফাইন্যান্সের নামে অবৈধ সুদের কারবারে জড়িত পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। অ্যাপে সুদ কারবারের মূলে রয়েছে কিছু চীনা নাগরিক। এদের ব্যবহৃত অ্যাপ মূলত চীনের সার্ভার থেকে পরিচালিত হতো। ফলে কত টাকা কিংবা কতজন এ ব্যবসার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা এখনো জানতে পারেনি ডিবি। তবে চীনারা অ্যাপ ভিত্তিক সুদের কারবার মূলত দেশীয় এজেন্টদের মাধ্যমে করছিল। গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার। এর আগে মঙ্গল ও বুধবার রাজধানীর ধানমন্ডি, বনানী ও মিরপুরে অভিযান চালিয়ে অবৈধ অ্যাপভিত্তিক সুদে জড়িত থাকার অভিযোগে ইমানুয়েল অ্যাডওয়ার্ড গোমেজ, আরিফুজ্জামান, শাহিনুর আলম ওরফে রাজীব, শুভ গোমেজ ও আকরামকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। অভিযানে তাদের কাছ থেকে একটি এলিয়ন গাড়ি, নয়টি মোবাইলফোন, নয়টি সিম কার্ড, চারটি ল্যাপটপ, চারটি বিভিন্ন ব্যাংকের চেকবই জব্দ করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার জানান, সুদ কারবারের অ্যাপগুলোর মধ্যে রয়েছে- টাকাওয়ালা (পার্সোনাল লোনস অনলাইন), র‌্যাপিড ক্যাশ, আমার ক্যাশ, ক্যাশ ক্যাশসহ আরও অনেক অ্যাপ। এসব অ্যাপ প্রায় ৫০ হাজার থেকে ৫০ লাখ মানুষ ডাউনলোড করেছে। সবাই ব্যবহার না করলেও বিশাল একটা অংশ এসব অ্যাপের মাধ্যমে প্রতারিত হচ্ছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক-ইউটিউবে ক্ষুদ্র, জামানতবিহীন ঋণ ও চটকদার বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিভিন্ন লোভ দেখিয়ে অনৈতিকভাবে সুদের ব্যবসা করত তারা। মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে তারা গ্রাহকদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ডাটা সংগ্রহে রাখত।

হাফিজ আক্তার বলেন, যদিও বলা হতো ৩ থেকে ২৫ হাজার টাকার মতো লোন নিতে পারবে কিন্তু ৩ হাজারের বেশি লোন দেওয়া হতো না। প্রাথমিক পর্যায়ে তাদের ছোট অ্যামাউন্টের টাকা দিয়ে পয়েন্ট অর্জন করতে হতো। প্রতি সপ্তাহে তাদের বিভিন্ন অ্যামাউন্টের টাকা দেওয়া হতো এবং সাপ্তাহিকভাবেই তাদের সুদসহ টাকা পরিশোধ করতে হতো। তারা প্রথমেই নানা খরচ যেমন অ্যাপ্লিকেশন ফি, সার্ভিস চার্জ এসব দেখিয়ে টাকা কেটে রেখে বাকি টাকা দিত। কিন্তু গ্রাহককে পরিশোধ করতে হতো পুরো টাকাই। যেমন কোনো গ্রাহক যদি ৩ হাজার টাকা নিতে চায় তাহলে সে পাবে ২ হাজার ১৫০ টাকা কিন্তু তাকে ৩ হাজার টাকাই পরিশোধ করতে হতো।

কীভাবে গ্রাহক থেকে পরবর্তীতে টাকা উদ্ধার করা হতো- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা অ্যাপের মাধ্যমে গ্রাহকদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিয়ে থাকে। গ্রাহক না জেনে মোবাইলের বিভিন্ন সুবিধা যেমন লোকেশন, ক্যামেরা, ফাইলের অ্যাকসেস দিয়ে দেয় অ্যাপে। আর তার মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য নিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে তারা। এতে টাকা পরিশোধ করতে গ্রাহক বাধ্য হয়। এরা অ্যাপে স্থায়ী কোনো ঠিকানাও দেয় না।

হোতাদের গ্রেফতারে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করছি। আর চীনের নাগরিক যারা আমাদের দেশে আছে তাদের আমরা ধরার চেষ্টা করব। আর এর সঙ্গে যদি আরও কেউ জড়িত থাকে তাদেরও আমরা গ্রেফতার করব।

সর্বশেষ খবর