সোমবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা
তরুণ চিকিৎসকের মৃত্যু

চিরকুটে অপরাধবোধ

নিজস্ব প্রতিবেদক

সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করে ঢাকায় আসেন তরুণ চিকিৎসক জয়দেব চন্দ্র দাস (২৫)। স্বপ্ন ছিল বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে অনেক বড় হওয়ার। কিন্তু স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হলো না তার। শনিবার রাতে রাজধানীর খিলক্ষেতের নিকুঞ্জ-২ এর ১৫ নম্বর রোডের ৮ নম্বর বাসার অষ্টম তলা থেকে জয়দেবের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আত্মহত্যা করেছেন নাকি কেউ পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করেছে সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। লাশের পাশে থাকা টেবিল থেকে উদ্ধার হওয়া চিরকুটের (সুইসাইডল নোট) ভিত্তিতে পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে, অপরাধবোধ থেকে চার দিন আগে আত্মহত্যা করেছেন জয়দেব। তবে সুইসাইডল নোটটি তার লেখা না হলে বেরিয়ে আসতে পারে অন্য কারণ। জানা গেছে, জয়দেবের বাড়ি দিনাজপুরের পার্বতীপুর থানার দক্ষিণ সালান্দার কুমারপাড়ায়। তার বাবার নাম দিলীপ চন্দ্র দাস। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়।

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, আট তলা বাড়ির দক্ষিণ পাশে দুই রুম ও ডাইনিং রুমে ৬টি সিঙ্গেল খাট রয়েছে। প্রতি রুমে দুটি করে খাট রয়েছে। জয়দেব কম ভাড়ায় ডাইনিং রুমে থাকতেন। যে রুমটিতে জয়দেব থাকতেন সেই রুমের পাশেই পড়ার টেবিল ও কিছু আসবাবপত্র। পাশের দুই রুমে কেউ ছিল না বলে জানান বাসার নিরাপত্তাকর্মী মো. জলিল। তিনি জানান, জয়দেব আসার কয়েক দিন আগেই তার রুমমেটরা গ্রামে যান। এ বাসায় ভাড়াটিয়ারা সবাই চিকিৎসক।

মোট ভাড়াটিয়া আছেন ৩৪ জন। বাসাটি ছাত্রদের জন্য মেস তৈরি করেছেন বাড়ির মালিক দীপ্তি দেবী। তিনিও চিকিৎসক। পূজায় গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামে যান তারা। এখনো ফেরেননি। তবে তারা থাকেন উত্তরায়। শনিবার রাত ৭টার দিকে বাসার ৯ তলার এক ভাড়াটিয়া বলেন ফ্ল্যাটে দুর্গন্ধ। পরে ওপরে গিয়ে ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করার পরও গন্ধ বের হচ্ছিল। এরপর মালিককে জানানোর পর তিনি পুলিশে খবর দিতে বলেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে লাশ উদ্ধার করে।

ডিএমপির ক্যান্টনমেন্ট জোনের এডিসি ইফতেখায়রুল ইসলাম জানান, ঘটনাস্থলে গিয়ে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছে সিআইডি। এ ছাড়া ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসে র‌্যাব, পিবিআইসহ গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। ওই বাসায় পড়ার টেবিল থেকে একটি সুইসাইডল নোট ও কলম উদ্ধার করা হয়েছে। ওই সুইসাইডল নোট জয়দেবের হাতে লেখা কিনা তা পরীক্ষার জন্য সিআইডির ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।

এটি হত্যা না আত্মহত্যা তা নিশ্চিত করতে পারেননি তিনি। নোটে কী লেখা ছিল জানতে চাইলে এডিসি ইফতেখায়রুল বলেন, ব্যক্তিগত কোনো কারণে হতাশা থেকে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। যদি নোটটি জয়দেবের লেখা না হয়, তাহলে হয়তো অন্য কোনো কারণ বেরিয়ে আসতে পারে। তবে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে এটি আত্মহত্যা।

তদন্তসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, জয়দেবের সঙ্গে কোনো মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক হয়। ওই সম্পর্কের জেরেই তার মৃত্যু হতে পারে। চিরকুটে নিজের অপরাধবোধের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বেঁচে থাকা আর না থাকার মধ্যে পার্থক্য নেই এমন লেখাও রয়েছে চিরকুটে। খিলক্ষেত থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুন্সী ছাব্বীর আহমেদ বলেন, এ ঘটনায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর