মঙ্গলবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

বিএনপি নেতাকর্মী গ্রেফতার হচ্ছে : ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজামন্ডপ ও মন্দির এবং তাদের ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠানসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলার ঘটনায় উল্টো বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের নামে মামলা ও গ্রেফতার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

গতকাল সন্ধ্যায় এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। শারদীয় দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা জানাতে বিএনপির উদ্যোগে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে নিচতলায় এক মতবিনিময়ের এই শুভেচ্ছা অনুষ্ঠান হয়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি এই অনুষ্ঠানে যুক্ত হিন্দু সম্প্রদায়কে শারদীয় শুভেচ্ছা জানান।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার ৫০ বছর পরও ধর্মীয় উৎসবে নিরাপত্তা দিতে না পারা, মন্ডপে মন্ডপে ভাঙচুর, গুলিবর্ষণ করে হত্যা করা তারা সবাই সাধারণ মানুষ। সেখানে কলা বিক্রি করা ১৩ বছরের এক কিশোরও রয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, হামলার সঙ্গে জড়িতরা কেউ বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী নন। দাঙ্গা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করা এটা ক্ষমতাসীনদের মদদ ছাড়া সম্ভব নয়। এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাকে আরও দীর্ঘায়িত করতে আগামী নির্বাচনে যাতে তারা পার পেয়ে যেতে পারে সেজন্য বিভিন্ন রকমের অপকৌশল গ্রহণ করতে শুরু করেছে এটা তারই একটা প্রমাণ।

তিনি বলেন, বিএনপি সব ধর্মের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক দল এটা প্রমাণ করেছে। বিএনপি সরকারই মন্দির ভিত্তিক পাঠাগার করেছিল, রমনা কালীমন্দির পুনঃনির্মাণ করে, ঢাকেশ্বরী মন্দিরে বেহাত জমি উদ্ধার করে দেয়। এসব খালেদা জিয়ার নির্দেশে।

স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, এই হামলার মধ্যে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র আছে। সেটা হচ্ছে ২০২৩ সালের নির্বাচন। এই সরকার সর্প হয়ে দংশন করে, ওঁঝা হয়ে ঝাড়ে।

স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় উপস্থিত হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের উদ্দেশে বলেন, আমরা এই মাটির সন্তান। কীসের সংখ্যালঘু- আমরা জন্মসূত্রে এই দেশের নাগরিক। আপনারা ঐক্যবদ্ধভাবে সক্রিয় হন। দেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি আপনাদের পাশে আছে এবং থাকবে। কীসের ভয়? লড়াই করতে হবে, তাছাড়া দাবি আদায় করা যায় না।

সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী গণফোরাম নেতা সুব্রত চৌধুরী বলেন, গত ১৩ অক্টোবর কুমিল্লার ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বললেন, আমরা সজাগ আছি। ২০ জেলায় বিজেপি নামানো হয়েছে। এরপর অষ্টমী, নবমী হলো- আপনারা পূজামন্ডপে বিজেপি দেখেছেন কী? এরা (সরকার) মিথ্যাচার করছে, ধোঁকা দিচ্ছে। এরা আমাদের ঘাড়ের ওপর চেপে বসে আছে, এদের তাড়াতে হবে। এ জন্য আজকে এই দিনে আমাদের অঙ্গীকার হোক আন্দোলনের জন্য আমরা ঐক্যবদ্ধ হব।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু বলেছেন, আমরা আতঙ্কিত। চৌমুহনীতে অর্ধেকের বেশি হিন্দু প্রভাবশালী ব্যবসায়ী। তারা যদি আতঙ্কিত হয়ে এই জেলা থেকে ব্যবসা-বাণিজ্য গুটিয়ে চলে যান তাহলে চৌমুহনীর যে ব্যবসায়িক হাব ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী বলেছেন, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পূজামন্ডপ ও মন্দিরে হামলা হয়েছে। এই ঘটনায় ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দেশে প্রতিবাদ হচ্ছে। দেশি-বিদেশি সবাই বলছে, সরকার পরিকল্পিতভাবে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবীরা কোথায়? গণমাধ্যমগুলোর ভূমিকা কোথায়?

বিএনপি নেতা সাবেক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট গৌতম চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে ও বিএনপি নেতা অমলেন্দু দাস অপুর সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি নেতা অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, বিজন কান্তি সরকার, জয়ন্ত কুমার কুন্ড, অপর্ণা রায় দাস, জনগোমেজ, অশোক কুন্ড, সুশীল বড়ুয়া, রমেশ দত্ত, কামাক্ষা চন্দ্র দাস, সঞ্চয় দে রিপন, সৌরভ পাল, মিল্টন বৌদ্দ, জয়দেব জয়, বিশ্বজিত ভদ্র, বিশ্বজিত ভদ্র, সীমান্ত দাস, সঞ্চয় গুপ্ত, পলাশ মন্ডল প্রমুখ। এ ছাড়াও সিরাজগঞ্জ, নেত্রকোনা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, জয়দেবপুর, লক্ষীপুর, নওগাঁ, কিশোরগঞ্জ, নড়াইল, ময়মনসিংহ, বরিশাল, জামালপুর প্রভৃতি জেলা থেকে হিন্দু,বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান কল্যাণ ফ্রন্ট ও ছাত্র যুব ফ্রন্টের দেড় শতাধিক সদস্য এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন। মতবিনিময় অনুষ্ঠানে সূচনাতে কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারের পূজামন্ডপ ও রংপুরে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ওই ঘটনার প্রতিবাদ জানানো হয়। অনুষ্ঠানের পরে হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের প্রসাদ দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়।

সর্বশেষ খবর