মঙ্গলবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা
বিশ্ব পরিস্থিতি

করোনার ডেল্টা প্লাসের আরেকটি ধরনের উদ্বেগ ইউরোপ-এশিয়ায়

প্রতিদিন ডেস্ক

ব্রিটিশ হেলথ সিকিউরিটি এজেন্সি তাদের সর্বশেষ রিপোর্টে জানিয়েছে, ব্রিটেনে করোনার ডেল্টা প্লাসের নতুন আরেকটি ধরন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। এদিকে ভারতের জাতীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র (এনসিডিসি) জানিয়েছে, ভারতের ইন্দোরে ‘এওয়াই.৪’ নামে করোনার নতুন একটি ধরনের বিস্তার ঘটছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার খবরে বলা হয়েছে, করোনার নতুন আরেকটি ধরন ইউরোপ এবং এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়তে থাকায় উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। সূত্র : রয়টার্স, বিবিসি, টাইমস অব ইন্ডিয়া। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ আপডেট বলছে, ব্রিটেনে ২ লাখ ৮৩ হাজারের বেশি মানুষ নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সংক্রমণ ১৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। রাশিয়ায় নতুন আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে ২ লাখ ১৭ হাজারেরও বেশি। ১৫ শতাংশ বেড়েছে সংক্রমণ। প্রায় প্রতিদিনই সংক্রমণে রেকর্ড হচ্ছে দেশটিতে। সামগ্রিকভাবে ইউরোপীয় অঞ্চলে সাপ্তাহিক সংক্রমণে ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সাপ্তাহিক মৃত্যুও সর্বাধিক হয়েছে (প্রতি লাখ জনসংখ্যায় ১.৯)। রাশিয়ায় মহামারী শুরুর পর থেকে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা সর্বোচ্চ হয়েছে। গত রবিবার ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ১ হাজার ৬৪ জন। সংক্রমণে রাশ টানতে ৩০ অক্টোবর থেকে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত মস্কো শহরে সবেতন ছুটি ঘোষণা করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। এ ছাড়া দৈনিক সংক্রমণ ও মৃত্যুতে নতুন রেকর্ড তৈরি হয়েছে ইউক্রেনে। একই দিন ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ২২ হাজার ৪১৫ জন। মৃত্যু হয়েছে ৫৪৬ জনের। সিঙ্গাপুরের মতো ছোট একটি দেশেও দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন হাজারে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। সংক্রমণ বাড়তে শুরু করায় তড়িঘড়ি কড়া পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছে চীনও। ৪৩ জনের শরীরে নতুন করে ভাইরাসের হদিস মেলায় কোনো রকম ঝুঁকি নিতে চাইছে না দেশটি। সেজন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে স্কুল। বাতিল করা হয়েছে কয়েকশ বিমান। শুরু হয়েছে ফের গণপরীক্ষা। দেশে দেশে সংক্রমণ বাড়ার জন্য করোনা বিধিতে শৈথিল্যকেই দায়ী করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

ইমারজেন্সি প্রোগ্রামের প্রধান মাইক রায়ান বলেন, উত্তর গোলার্ধে শীতের মৌশুম শুরু হচ্ছে। এই অবস্থায় ইউরোপে যেভাবে সংক্রমণ বাড়ছে, তা নিয়ে সতর্ক হতে হবে। বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ায় বহু দেশেই সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। দেখতে পাচ্ছি, বিভিন্ন দেশে স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর ওপর চাপ বাড়তে শুরু করেছে। আইসিইউ বেডের অভাব শুরু হয়েছে বলেও জানতে পারছি।

ভারতে আরও একটি ধরন : ভারতের ইন্দোরে ‘এওয়াই.৪’ নামে করোনার নতুন একটি ধরনে আক্রান্ত সাতজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। এটি করোনার অতিসংক্রামক ধরন ডেল্টা গোত্রের। ভারতের জাতীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র (এনসিডিসি) জিনোম সিকোয়েন্সিং করে সাতজনের নমুনায় এ ধরন শনাক্ত করেছে। ভারতের মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের বড় শহর ইন্দোরের প্রধান চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বি এস সাতিয়া জানান, এসব নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল গত সেপ্টেম্বরে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে দুজন সেনা কর্মকর্তা। এ ছাড়া মহারাষ্ট্রের ১ শতাংশ নমুনাতেও এওয়াই.৪-এর সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছিল।

খবরে বলা হয়, সেপ্টেম্বরে ইন্দোরে ঊর্ধ্বমুখী করোনা সংক্রমণের নেপথ্যে ছিল ডেল্টার এ ধরন। আগস্টের তুলনায় তখন ৬৪ শতাংশ বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছিল। আর্মি কলেজে প্রশিক্ষণরত ৪৪ জন সেনা কর্মকর্তা করোনা পজিটিভ হন। এর পরই কর্তৃপক্ষ তাদের নমুনা জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের জন্য পাঠায়। বি এস সাতিয়া বলেন, এনসিডিসি ১ অক্টোবরের মধ্যে সাতজনের প্রতিবেদন প্রকাশ করে এবং অন্যদের প্রতিবেদন প্রকাশ করে ১৬ অক্টোবর।

নতুন এ ধরনের ব্যাখ্যায় এমজিএম কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অনিতা মুথা বলেন, এওয়াই.৪ হলো করোনার ডেল্টা গোত্রের একটি ধরন। তবে এটা ডেল্টা কিংবা ডেল্টা প্লাস- কোনোটিই নয়। এটা (এওয়াই.৪ ধরন) এখন ‘কৌত‚হলোদ্দীপক’ একটা ধরন। এ ধরনের সংক্রমণ ক্ষমতা কেমন কিংবা এতে আক্রান্ত রোগীর গুরুতর পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার ঝুঁকি কতটুকু, তা নিয়ে খুব কমই জানা যাচ্ছে। এ ছাড়া এটা সংক্রমণের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী কোনো প্রভাব ফেলতে পারবে কি না, সেটাও নিশ্চিত নয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর