রবিবার, ৭ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

প্রলোভনে বিদেশ পাচারের পর মানবেতর জীবন

নিজস্ব প্রতিবেদক

চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে বেশি বেতনে দুবাই যাওয়ার জন্য প্রলুব্ধ করে আসছিল মানব পাচার একটি চক্র। সাত বছরে পাঁচ শতাধিক ভিকটিমকে দুবাই পাচার করেছে চক্রটি। এ ছাড়া মানব পাচারকারী চক্রটি নকল বিএমইটি ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স কার্ড তৈরি করে ভিকটিমদের সরবরাহ করতেন। এ মানব পাচার চক্রটির মূল হোতাসহ আটজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৩ এর সদস্যরা। শুক্রবার রাত থেকে গতকাল শনিবার সকাল পর্যন্ত ঢাকার তুরাগ, উত্তরা, রমনা, পল্টন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। তারা হলেন- চক্রের মূল হোতা মো. নাইম খান ওরফে লোটাস, মো. নুরে আলম শাহরিয়ার, মো. রিমন সরকার, মো. গোলাম মোস্তফা সুমন, মো. বদরুল ইসলাম, মো. খোরশেদ আলম, মো. সোহেল ও মো. হাবিব। অভিযানে তাদের কাছ থেকে ১৪টি পাসপোর্ট, ১৪টি নকল বিএমইটি কার্ড, একটি সিপিইউ, একটি প্রিন্টার, একটি স্ক্যানার, পাঁচটি মোবাইল ফোন, একটি চেকবই ও পাঁচটি নকল সিল জব্দ করা হয়। গতকাল দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল রাকিবুল হাসান। তিনি বলেন, কয়েকজন ভিকটিম অভিযোগ করেন, একটি চক্র তাদের ভ্রমণ ভিসায় মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে পাঠাতে চেয়েছিলেন। তবে ভিকটিমরা বিএমইটি ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স কার্ড ছাড়া অবৈধভাবে বিদেশ যেতে অস্বীকৃতি জানিয়ে টাকা ফেরত চান। তখন চক্রটি নকল বিএমইটি ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স কার্ড তৈরি করে ভিকটিমদের সরবরাহ করেন। নকল কার্ড নিয়ে ভিকটিমরা বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন করতে গেলে কর্তব্যরত জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর সদস্যরা তাদের কার্ড নকল হিসেবে শনাক্ত করেন এবং বিদেশযাত্রা স্থগিত করেন।

পরে ভিকটিমরা দালালদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা কোনো সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি। একপর্যায়ে তারা ভিকটিমদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক বলেন, গ্রেফতার নাইম চক্রের মূল হোতা। সে দুবাই প্রবাসী। চলতি বছরের মে মাসে সে দেশে ফেরত আসে। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি পাস। ২০১২ সালে ওয়ার্কপারমিট নিয়ে দুবাই গমন করে। পরবর্তীতে দুবাই সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ থেকে শ্রমশক্তি আমদানি করা বন্ধ করে দেয়। কিন্তু দুবাই শ্রম বাজারে বাংলাদেশি শ্রমিকদের চাহিদা থাকায় দুবাইয়ের কিছু প্রতিষ্ঠান ভ্রমণ ভিসায় দুবাই অবস্থানকারীদের ওয়ার্কপারমিট দিয়ে কাজের বৈধতা দেয়। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নাইম মানব পাচারে জড়িয়ে পড়ে। দুবাই ও বাংলাদেশে তার পরিচিতজনদের মাধ্যমে ভিকটিমদের উচ্চ বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে দুবাই যাওয়ার জন্য প্রলুব্ধ করে। ভিকটিম রাজি হলে ২ থেকে ৩ লাখ টাকার বিনিময়ে সে তাদের ভ্রমণ ভিসায় দুবাই নিয়ে থাকে। ভিকটিমরা ভ্রমণ ভিসায় যাওয়ার পর কেউ কেউ কাজের সুযোগ পেলেও অধিকাংশই কাজ না পেয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করে। এভাবে সে সাত বছর ধরে পাঁচ শতাধিক ভিকটিমকে দুবাই পাচার করেছে। মানব পাচার থেকে অর্জিত অবৈধ উপার্জন দিয়ে সে দুবাইয়ে নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন নেয় ও নিজে রেসিডেন্স ভিসার অনুমোদন নেয়।

সর্বশেষ খবর