বৃহস্পতিবার, ১১ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

পাড়া-মহল্লায় পাহারা দিয়ে নির্বাচনী সহিংসতা ঠেকানো সম্ভব নয় : সিইসি

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঘরে ঘরে পাড়া-মহল্লায় পাহারা দিয়ে নির্বাচনী সহিংসতা ঠেকানো সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। গতকাল বিকালে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি। ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচন ঘিরে বিভিন্ন এলাকায় উত্তেজনা, সংঘর্ষ ও সহিংসতার প্রেক্ষাপটে সিইসি এমন বক্তব্য দিয়েছেন। নরসিংদীসহ কয়েকটি এলাকার সংঘাতের প্রসঙ্গ টেনে নূরুল হুদা বলেন, এ-জাতীয় ঘটনা এভাবে পাহারা দিয়ে ঠেকানো যায় না, বাস্তবতা হলো এটা। তিনি বলেন, ঘরে ঘরে মহল্লায় মহল্লায় পুলিশ দিয়ে পাহারা দিয়ে এ-জাতীয় অপ্রীতিকর ঘটনা থামানো যায় না। এর একমাত্র উপায় হলো নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সহনশীলতা। নির্বাচনসুলভ আচরণ করা। ইতিমধ্যে দ্বিতীয় ধাপের ভোটের সব প্রস্তুতি শেষ করেছে ইসি। আজ ৮৩৫ ইউনিয়ন পরিষদে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ হবে। আজ নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর হবে বলে গতকাল এক ব্রিফিংয়ে আশা প্রকাশ করেন সিইসি। নির্বাচন ভবনে ব্রিফিংয়ের সময় নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। সিইসি জানান, নির্বাচনী সহিংসতা দমনে কঠোর পদক্ষেপ নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এর আগে ৪ নভেম্বর ইউপি নির্বাচন কেন্দ্র করে নির্বাচনপূর্ব সহিংস ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রয়োজনে প্রার্থিতা বাতিলের মতো পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন সিইসি।

সংঘাতে প্রাণহানির দায় কার- এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, দায়দায়িত্ব কাকে দেব, আমার মনে হয় যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন তাদেরই যদি সহনশীল ভূমিকা থাকে তাহলে এত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দরকার হয় না। আমাদেরও তৎপরতার দরকার হয় না।

ইসি কি দায় এড়াচ্ছে- এমন প্রশ্নে সিইসি নূরুল হুদা বলেন, দায় এড়ানোর বিষয় নয়। ঘটনাগুলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সামনে হয় না। তিনি বলেন, নরসিংদীতে রাত ৩টার সময় গোলাগুলি হয়েছে, এতে মানুষ মারা গেছে। রাত ৩টায় কে কোথায় যাবে? আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা ইসির লোক সেভাবে থাকে না।

সিইসি বলেন, নির্বাচনের আগে যে ঘটনাগুলো ঘটেছে প্রচার-প্রচারণার সময় হঠাৎ করে অঘটন ঘটে যায়, এগুলোর জন্য কেউ প্রস্তুত থাকে না। এ ঘটনাগুলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অজান্তে, তাদের অনুপস্থিতিতে ঘটে যায়। এগুলো ফৌজদারি অপরাধ। এজন্য ফৌজদারি আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পুলিশ প্রশাসন এসব দেখছে।

সিইসি বলেন, অনেক ঘটনা ঘটে এলাকাভিত্তিক, দলীয় কোন্দল, স্থানীয় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পুরনো শত্রুতার জের থেকে ঘটনা ঘটে।

সিইসি বলেন, বৈঠকে আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে যে ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার সেগুলো আলোচনা করা হয়েছে। যখন যেখানে অসুবিধা দেখছেন তারা মোকাবিলার চেষ্টা করছেন। স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোয় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়, সেটা ঠিকই। কিন্তু তার কারণে সহিংস ঘটনা কাম্য নয়। অনেক জীবন চলে গেছে, এটা কারও কাম্য হতে পারে না। যারা নির্বাচন পরিচালনা করেন, প্রতিদ্ধন্ধী সমর্থক এবং ভোটার তাদের মধ্যে সহনশীলতা থাকতে হবে।

সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, ইসি তদন্ত করে নির্বাচন স্থগিত করেছে। এ ধরনের তদন্ত প্রতিবেদন আসতে থাকবে, তার ভিত্তিতে ইসি ব্যবস্থা নেবে। তিনি বলেন, নির্বাচনী সহিংসতার সুযোগ নিয়ে গুপ্তহত্যাও হয়েছে। ইসি যে ফোর্স মোতায়েন করে তা দিয়ে এটা থামানো বেশ কষ্টকর। তার পরও যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করতে ইসি পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে, প্রতিনিয়ত তারা পর্যবেক্ষণও করছেন।

সর্বশেষ খবর