মঙ্গলবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চে মহাকাব্যিক ঘোষণায় তাঁর দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন ঘটান

অধ্যাপক রেহমান সোবহান

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেছেন, এবারের সংগ্রাম আমদের মুক্তি সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের মহাকাব্যিক ঘোষণার এ উপসংহারে বঙ্গবন্ধু জনগণের সামনে বাংলাদেশের প্রতি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন ঘটান।

গতকাল সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত অনলাইন সেমিনারের উদ্বোধনী পর্বে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করে এ কথা বলেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান। বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে আয়োজিত এ সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সিপিডির বিশেষ ফেলো অধ্যাপক ড. রওনক জাহান, নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন ও অধ্যাপক ইফতেখার দাদী।

সেমিনারে অধ্যাপক রেহমান সোবহান বঙ্গবন্ধুর দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে বলেন, স্বাধীনতার সংগ্রাম (স্বাধীনতা) এবং মুক্তির সংগ্রামের (মুক্তি) মধ্যে পার্থক্য নিয়ে অনেকেই চিন্তাভাবনা করেছেন। কিন্তু এর স্বাতন্ত্র্য সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু সম্ভবত তাঁর মনে আরও স্পষ্ট ধারণা রেখেছিলেন।

তিনি স্বাধীনতার সংগ্রামকে একটি সার্বভৌম জাতি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম হিসেবে কল্পনা করেছিলেন, যা ঔপনিবেশিক শাসন থেকে নিজেদের মুক্ত করার জন্য অন্যান্য জাতি রাষ্ট্রের সংগ্রামকে অনুপ্রাণিত করেছিল। কিন্তু তার মুক্তির আহ্বান ছিল আরও সূক্ষ্ম এবং তাই আরও সুদূরপ্রসারী আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি। এটি স্বাধীনতার উপলব্ধি অতিক্রম করে জনগণকে পাকিস্তানি শাসনের অন্যায় বন্ধন থেকে নয়, বরং শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের ওপর সংঘটিত অবিচার থেকে মুক্তির আরও রূপান্তরমূলক মিশনের দিকে প্রসারিত করেছিল। বছরের পর বছর পরাধীনতা জনগণকে শুধু তাদের গণতান্ত্রিক অধিকারই অস্বীকার করেনি, বরং তাদের একটি অন্যায় সামাজিক ব্যবস্থার মধ্যে বন্দী করে রেখেছিল।

অধ্যাপক রেহমান সোবহান আরও বলেন, স্বশাসনের জন্য বঙ্গবন্ধুর অঙ্গীকার ও সংগ্রাম চূড়ান্তভাবে বাস্তবায়িত হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মধ্য দিয়ে। জাতীয় পুনরুত্থান আমাদের জাতীয় স্বাধীনতার তিন বছরের মধ্যে উপলব্ধি করা যেতে পারে, যা বঙ্গবন্ধুর অনুপ্রেরণামূলক নেতৃত্বের কাছে ঋণী। যাঁরা তাঁর সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করেছিলেন, তাঁরা অত্যন্ত প্রতিকূল পরিস্থিতিতে, বঙ্গবন্ধুর অনুপ্রেরণামূলক নেতৃত্বের জন্য কাজ করেছেন। একটি জাতিরাষ্ট্র গঠনের ধারায় বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের সংবিধানে সংযোজিত চারটি ভিত্তিস্তম্ভের মাধ্যমে আমাদের মুক্তির সংগ্রামকে বাস্তবায়িত করতে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন, যা আমাদের জাতীয় স্বাধীনতার এক বছরের মধ্যে জাতির সামনে উপস্থাপন করা হয়েছিল। এগুলো হলো গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র।

অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, বাংলাদেশের জন্য বঙ্গবন্ধুর আজীবন সংগ্রাম, এরপর স্বশাসনের আন্দোলনকে একটি কার্যকরী জাতিরাষ্ট্রে রূপান্তরিত করার বীরত্বপূর্ণ প্রচেষ্টা বৃথা যায়নি। ঘাতকদের বুলেট যখন বঙ্গবন্ধুর জীবনকে সংক্ষিপ্ত করেছিল, তখন তিনি এ সচেতনতা থেকে স্বস্তি পেতে পারেন যে, তিনি তাঁর জীবনের মিশনের সবচেয়ে লালিত অংশটি, একটি স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় উপলব্ধি করেছিলেন। তদুপরি, পৃথিবীতে তাঁকে যে স্বল্প সময় দিয়েছিল তার মধ্যেই তিনি একটি সম্পূর্ণ কার্যকর জাতিরাষ্ট্রের কাঠামো তৈরি করেছিলেন। কিন্তু তাঁর সব অর্জনই কাজ থেকে যায়। আমাদের মুক্তি সংগ্রামের সংগ্রাম অসমাপ্ত থেকে যায়। এ পৃথিবীতে বঙ্গবন্ধুর যাত্রা হঠাৎ করেই শেষ হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। কিন্তু তাঁর স্বপ্ন এবং আশা ৪৬ বছরে বাংলাদেশের যাত্রাকে অনুপ্রাণিত করে। তাঁর অপূর্ণ স্বপ্নের জন্য প্রয়োজন ছিল আমাদের মুক্তির সংগ্রামের ধারাবাহিকতা।

সর্বশেষ খবর