বৃহস্পতিবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

৭২ হাজার কোটি টাকার ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন

নিজস্ব প্রতিবেদক

সর্বোচ্চ ৭২ হাজার ৫৪০ কোটি টাকার কেনাকাটার অনুমোদন দিয়ে বছর শেষ করল সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এর মধ্যে চারটি ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাবও রয়েছে। গতকাল অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে কমিটির সভায় চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনসহ ১২টি ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন দেওয়া হয়। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৭২ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা। একক কোনো বৈঠকে এত বেশি পরিমাণ অর্থের প্রকল্প এর আগে কখনো অনুমোদন দেওয়া হয়নি। সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. সামসুল আরেফিন সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন অনলাইনে। এর আগে অর্থমন্ত্রী বলেন, ক্রয় কমিটির অনুমোদিত ১২টি প্রস্তাবে মোট অর্থের পরিমাণ ৭২ হাজার ৫৪০ কোটি ৪১ লাখ ১২ হাজার ৬০ টাকা। মোট অর্থায়নের মধ্যে জিওবি হতে ব্যয় হবে ৭০ হাজার ৮২৪ কোটি ৩১ লাখ ৬ হাজার ৮০৬ টাকা এবং কোরিয়া এক্সিম ব্যাংক ও ভারত থেকে ঋণ নেওয়া হবে ১ হাজার ৭২৭ কোটি ৮৫ লাখ ৭৮ হাজার ২৫৪ টাকা। সামসুল আরেফিন জানান, আন্তর্জাতিক কোটেশনের মাধ্যমে প্যাকেজ-৬-এর আওতায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন গম আমদানির একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। মোট খরচ হবে বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৭৩ কোটি ৩৬ লাখ ৩১ হাজার ৯০০ টাকা। সভায় চতুর্থ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচির আওতায় ২৯.৭৬ মিলিয়ন সাইকেল ওরাল পিল (তৃতীয় প্রজন্ম) কেনার একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। ২০২১-২২ অর্থবছরে চতুর্থ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচির আওতায় পাঁচটি লটে ২৯.৭৬ মিলিয়ন সাইকেল ওরাল পিল (তৃতীয় প্রজন্ম) কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে ব্যয় হবে ১৪৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা। বান্দরবান জেলার বিদ্যালয়বহির্ভূত শিশুদের শিখন কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য ইমপ্লিমেন্টেশন সাপোর্ট এজেন্সির (আইএসএ) সেবা কেনার একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। ‘চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি-৪)’ প্রকল্পের আওতায় বান্দরবানের একটি উপজেলার বিদ্যালয়বহির্ভূত শিশুদের শিখন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে শিশু প্রতিভা বিকাশ কেন্দ্র (এসপিবিকে)। এতে ব্যয় হবে ২ কোটি ৭৭ লাখ ৩৭ হাজার টাকা।

তিনি বলেন, সভায় ‘খুলনা থেকে মোংলা পোর্ট পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ’ প্রকল্পের প্যাকেজ নম্বর ডব্লিউডি-১-এর ভেরিয়েশন প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এতে ভেরিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত ২৬৭ কোটি ১৫ লাখ ৯৫ হাজার ৫৫৬ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ‘খুলনা থেকে মোংলা পোর্ট পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ’ প্রকল্পের প্যাকেজ নম্বর ডব্লিউডি-২-এর দ্বিতীয় ভেরিয়েশন প্রস্তাবেও অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এ প্রকল্পেরও ভেরিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত ১২ কোটি ৩৩ হাজার ৬০২ টাকা এবং সিডিভ্যাট ভেরিয়েশন বাবদ ৭৩ কোটি ৮৩ লাখ ৯৭ হাজার টাকা ব্যয় হ্রাস করে সংশোধিত চুক্তিমূল্য ১ হাজার ৪৪৮ কোটি ৯৪ লাখ ৯ হাজার ৬৯৮ টাকার ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সভায় বিআইডব্লিউটিএর জন্য দুটি ২৪ কাটার সাকশন ড্রেজারসহ সহায়ক জলযান ও আনুষঙ্গিক সরঞ্জামাদি (প্যাকেজ-১২, লট-০১) সংগ্রহ ও ক্রয় প্রস্তাবে অনমোদন দিয়েছে কমিটি। সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান খুলনা শিপইয়ার্ড জলযানগুলো সরবরাহ করবে। এজন্য ব্যয় হবে ২১১ কোটি ৯৬ লাখ ৬৮ হাজার ৯৫৩ টাকা।

কুমারগাঁও ৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার গ্যাসভিত্তিক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মেয়াদ বৃদ্ধি এবং বর্ধিত মেয়াদের জন্য ট্যারিফ অনুমোদন দিয়েছে ক্রয় কমিটি। বর্ধিত মেয়াদে ৮৬ কোটি ৫২ লাখ টাকা বিদ্যুতের দাম পরিশোধ করতে হবে। ফেঞ্চুগঞ্জ ৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার গ্যাসভিত্তিক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানো এবং বর্ধিত মেয়াদের জন্য ট্যারিফ অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এতে বর্ধিত মেয়াদে ২৭৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকা বিদ্যুতের মূল্য পরিশোধ করতে হবে। বগুড়ায় ২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার গ্যাসভিত্তিক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানো এবং বর্ধিত মেয়াদের জন্য ট্যারিফ নির্ধারণের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এতে বর্ধিত মেয়াদে ১০৬ কোটি ৯২ লাখ টাকা বিদ্যুতের দাম পরিশোধ করতে হবে।

সামসুল আরেফিন বলেন, আশুগঞ্জ ৫৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার গ্যাসভিত্তিক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানো এবং বর্ধিত মেয়াদের জন্য ট্যারিফ অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। ইউনাইটেড এনার্জি লিমিটেডের আশুগঞ্জ ৫৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার গ্যাসভিত্তিক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানো এবং ট্যারিফ অনুমোদনের লক্ষ্যে ২০২০ সালের ৯ ডিসেম্বরের সিসিজিপি সভায় উপস্থাপন করা হলে কমিটি বেশকিছু বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চায়। এতে বর্ধিত মেয়াদে ৪৫১ কোটি ২০ লাখ টাকা বিদ্যুতের দাম পরিশোধ করতে হবে।

সভায় চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার গ্যাস অথবা আরএলএনজি-ভিত্তিক কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। ট্যারিফ ভিত্তিতে বিদ্যুৎ কেনা হলে ২২ বছর মেয়াদে ওই কোম্পানিকে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা ২.৯৪৩২ টাকা হিসাবে মোট ৩৭ হাজার ৪৩৫ কোটি ২০ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে।

এর আগে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় ঘোড়াশাল চতুর্থ ইউনিট রি-পাওয়ার্ড কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিশেষজ্ঞ সেবা সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে কেনার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়।

সর্বশেষ খবর